বিপাকে আফগান অনুবাদকরা
আফগানিস্তানে ব্রিটিশ সেনাবাহিনীর সঙ্গে কাজ করছেন অনেক আফগান অনুবাদক। কিন্তু তাদের অনেকেই তালেবানের হত্যার হুমকির শিকার হয়ে দেশ ছেড়েছেন। কেউ কেউ আশ্রয়ের জন্য এসেছেন যুক্তরাজ্যে। কিন্তু সেখানেও তারা স্বপ্নভঙ্গের শিকার হয়েছেন। খবর বিবিসির।
একদিকে, ব্রিটিশ স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় তাদের শরণার্থী আবেদন গ্রহণ করছে না আবার মৃত্যুর ভয়ে তারা দেশেও ফিরে যেতে পারছেন না।
আফগানিস্তানে দু’বছর ব্রিটিশ বিশেষ বাহিনীর সঙ্গে অনুবাদক হিসাবে কাজ করার পর কঠিন পরিস্থিতির মুখোমুখি হয়েছেন জাভেদ হটাক। এমন কিছু হবে তিনি কখনো ভাবেননি। অথচ ব্রিটিশদের সঙ্গে কাজ করছেন বলে গর্ব বোধ করতেন তিনি।
তিনি বলেন, ‘গ্রেট ব্রিটেনের বিশেষ বাহিনীর জন্য আমি কাজ করি, এটা মনে করে আফগানিস্তানে আমি গর্ব বোধ করতাম। গ্রেট ব্রিটেন, বিরাট নাম। কিন্তু এখন আমার লজ্জা হয়। তাদের জন্য কাজ করায় আমার অনুশোচনা হয়।’
তিনি আরো বলেন, ‘আমি একজন সৈনিক আর একজন অনুবাদক হিসাবে ব্রিটিশ বিশেষ বাহিনীর সঙ্গে কাজ করেছি। কান্দাহার, হেলমান্দ, নিমরুজের মতো বিপজ্জনক জায়গাগুলোয় তাদের সঙ্গে অভিযানে অংশ নিয়েছি। বেশিরভাগ অভিযান হতো রাতের বেলায়। আমরা তালেবান আস্তানাগুলোয় অতর্কিতে অভিযান চালাতাম।
কিন্তু এখন জাভেদের পরিস্থিতি এমন দাঁড়িয়েছে যে, তিনি অবৈধভাবে ব্রিটেন বাস করছেন। কোন চাকরি নেই, আশ্রয়ের জন্যই বন্ধুবান্ধবের উপর নির্ভর করতে হচ্ছে।
তালেবানের কাছ থেকে হত্যার হুমকি পাওয়ার পর, ২০০৮ সালে আফগানিস্তান ছেড়ে আসতে বাধ্য হন জাভেদ। ক্যালের জঙ্গলে সাতমাস থাকতে হয়েছে তাকে। এরপর একটি ট্রাকে লুকিয়ে অবশেষে তিনি ব্রিটেনে প্রবেশ করতে সক্ষম হন।
জাভেদের আশা ছিল, সেনাবাহিনীতে তার অবদানের জন্য ব্রিটেন তাকে আশ্রয় দেবে। কিন্তু ব্রিটিশ স্বরাষ্ট্র দপ্তর তার শরণার্থী আবেদন নাকচ করে দিয়েছে। কারণ তাদের বিশ্বাস, হত্যার হুমকি সত্যি নয়। এরকম পরিস্থিতিতে শুধু যে জাভেদই একা রয়েছেন তা নয়। গত বছর এরকম আরেকজন আফগান অনুবাদক ব্রিটেনে আত্মহত্যা করেন। কারণ তিনি দেশে ফিরে যেতে চাননি।
আরেক অনুবাদক রাফি হকটা গত সপ্তাহে যুক্তরাজ্যের একটি সংসদীয় কমিটিতে তার জীবন সংশয়ের প্রমাণ তুলে ধরেন।
আফগানিস্তানে বিদেশী বাহিনীর অনুবাদকদের সেই বাহিনীর একজন সদস্য হিসাবেই শত্রুপক্ষ বিবেচনা করে। একজন আফগান অনুবাদকের এখন দুইটি পথই খোলা আছে। হয় সে দেশে থেকে তালেবানের হাতে নিহত হতে পারে। অথবা নিরাপদ আশ্রয়ের জন্য সে অন্য কোথাও যেতে পারে।
রয়্যাল মেরিনে কর্মরত ব্রিটিশ রাজনীতিবিদ লর্ড অ্যাশটন। অনুবাদকদের আশ্রয় দেয়ার জন্য সরকারকে রাজি করানোর চেষ্টা করছেন তিনি।
তিনি বলেন, ‘যারা সেখানে কাজ করেছে, আমি জানি না এমন একজন সদস্যও বা কর্মকর্তাও কি জানে না যে, এই অনুবাদকরা কতটা সাহসী? প্রায় প্রতিটি অভিযানের জন্য তাদের উপর যাকে নির্ভর করতে হয়নি। এমন কেউ কি আছে যে, মনে করে আমাদের জন্য তাদের এরকম অবদানের পুরস্কার হিসাবে তারা যা চাইছে তাদের শরণার্থী হিসেবে আশ্রয় দেয়া উচিত?
তিনি জানিয়েছেন, তিনি মন্ত্রীদের সতর্ক করে দিয়েছেন যে, তাদের আশ্রয় দেয়া না হলে কি ঘটতে পারে। যদি তাদের দেশে ফেরত পাঠানো হয়, তা আমাদের সরকারের জন্য একটি লজ্জাজনক কাজ হবে।
তবে এসব বিষয়ে সরকারের নীতি পর্যালোচনা করে দেখার জন্য একটি রিভিউ কমিটি গঠন করেছে সরকার। জাভেদের জন্য এখন এটাই যা একটু স্বস্তির বিষয়। তবে জাভেদ বলছেন, তিনি গ্রেপ্তার আর দেশে ফেরত পাঠানোর ভয়ে রয়েছেন।
টিটিএন/আরআইপি