ভিডিও EN
  1. Home/
  2. আন্তর্জাতিক

যে কারণে রোহিঙ্গা নিধনে নেমেছে মিয়ানমার

প্রকাশিত: ১১:২৩ এএম, ০১ ডিসেম্বর ২০১৬

আব্দুল রাজাক আলি আর্তান, সোমালীয় বংশোদ্ভূত মার্কিন নাগরিক। যুক্তরাষ্ট্রের ওহিও স্টেট ইউনিভার্সিটি ক্যাম্পাসে গাড়ি ও ছুরি হামলার সঙ্গে জড়িত। মার্কিন এই শিক্ষার্থী এর আগে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে দেয়া এক স্ট্যাটাসে মিয়ানমারের সংখ্যালঘু রোহিঙ্গা মুসলিমদের হত্যার প্রতিবাদ জানিয়েছিলেন।

রোহিঙ্গা মুসলিমরা দেশটিতে বৈষম্য এবং সংখ্যাগুরু বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীদের সহিংসতার শিকার হচ্ছেন। তাদের দুর্দশার চিত্র সাধারণত বিশ্বের সামনে উন্মোচিত হয় না, যদিও মানবাধিকার কর্মীরা বলেছেন, তাদের ওপর যে নির্যাতন চলছে; তা জাতিগত নির্মূলের শামিল।

মিয়ানমারের সংখ্যালঘু ও নিপীড়িত এই রোহিঙ্গারা কেন নির্যাতনের শিকার হচ্ছেন; সে বিষয়ে বিশ্লেষণী এক প্রতিবেদন করেছে বার্তাসংস্থা এপি।

বিশ্বের সবচেয়ে নিরূপায় তথা বন্ধুবিহীন জাতি

৫ কোটি ১০ লাখ বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বী মানুষের দেশে মাত্র ১০ লাখ রোহিঙ্গা দেশটিতে কয়েক প্রজন্ম ধরে বসবাস করে এলেও মিয়ানমারের অধিকাংশ মানুষই মনে করে, রোহিঙ্গারা প্রতিবেশী বাংলাদেশি অনুপ্রবেশকারী। বাংলাদেশে অনেক রোহিঙ্গা শরণার্থী থাকলেও তাদের নাগরিক হিসেবে স্বীকৃতি নেই।

জাতিসংঘের শরণার্থী বিষয়ক সংস্থার হাইকমিশনের মুখপাত্র কিটি ম্যাক কিনসি বলেন, সম্ভবত রোহিঙ্গারাই বিশ্বের সবচেয়ে বন্ধুবিহীন একটি জাতি। তাদের পক্ষে লড়াইয়ের জন্য কেউ নেই।

সীমান্ত হামলার ফল সাম্প্রতিক সহিংসতার বিস্তার

মিয়ানমারের রাখাইন প্রদেশে প্রায় সব রোহিঙ্গা বসবাস করছেন; যেখানে গত নভেম্বর থেকে দেশটির সেনাবাহিনী অভিযানের মাত্রা বাড়িয়েছে। ওই সময় বাংলাদেশ সীমান্তের কাছে পুলিশ চেকপোস্টে হামলা চালিয়ে ৯ পুলিশ কর্মকর্তাকে হত্যা করা হয়।  

তবে কারা ওই হামলায় জড়িত তা এখনো পরিষ্কার নয়। রোহিঙ্গারা দেশীয় অস্ত্র নিয়ে সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে প্রতিরোধের চেষ্টা করে; এ সময় সেনাবাহিনীর সদস্য, কর্মকর্তাসহ অনেক রোহিঙ্গার প্রাণহানি ঘটে।

রোহিঙ্গা সলিডারিটি গ্রুপ বলছে, গত অক্টোবর থেকে এখন পর্যন্ত কয়েকশ বেসামরিক নাগরিক নিহত হয়েছে। নিউ ইয়র্কভিত্তিক মানবাধিকার সংস্থা হিউম্যান রাইটস ওয়াচ বলছে, স্যাটেলাইটে ধারণকৃত ছবিতে দেখা গেছে, রাখাইনে এক হাজার ২৫০টিরও বেশি বাড়ি-ঘর ও অন্যান্য স্থাপনা পুড়িয়ে দেয়া হয়েছে।

২০১২ সালে রোহিঙ্গা এবং বৌদ্ধদের সহিংসতায় কয়েকশ মানুষের প্রাণহানি ঘটে। এই সহিংসতায় গৃহহীন হয় অন্তত ১ লাখ ৪০ হাজারের বেশি রোহিঙ্গা। এখনো প্রায় এক লাখ রোহিঙ্গা নিম্নমানের শিবিরে আশ্রয় নিয়েছে এবং দাতব্য সংস্থার সহায়তায় বেঁচে আছে।

সু চিকে নিয়ে হতাশা

মানবাধিকারের লড়াকু রাজনীতিক হিসেবে পরিচিত শান্তিতে নোবেলজয়ী দেশটির ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দল এনএলডির প্রধান অং সান সু চির খ্যাতি থাকলেও রোহিঙ্গাদের নিপীড়ন কমাতে পদক্ষেপে ব্যর্থ হয়েছেন।

রোহিঙ্গাদের অধিকারের বিষয়ে কথা বললে রাজনৈতিক জনপ্রিয়তায় ধস দেখা দিতে পারে। এরপরও গত আগস্টে সু চির নেতৃত্বাধীন দেশটির সরকার জাতিসংঘের সাবেক মহাসচিব কফি আনানকে একটি উপদেষ্টা প্যানেলের প্রধান করা হয়। এই প্যানেল গঠনের লক্ষ্য ছিল, রাখাইন রাজ্যের সহিংসতা বন্ধে দীর্ঘস্থায়ী সমাধান খুঁজে বের করা।

জাতিসংঘের সাবেক এই কর্মকর্তা বর্তমানে মিয়ানমার সফরে রয়েছেন। শুক্রবার রাখাইনে যাবেন তিনি। জাতিসংঘের গণহত্যা প্রতিরোধ বিষয়ক উপদেষ্টা অ্যাডাম দেইং মিয়ানমারের বেসামরিক ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে বিশেষ করে রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে অতিরিক্ত বলপ্রয়োগ ও মানবাধিকারের চরম লঙ্ঘন হচ্ছে বলে মঙ্গলবার উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। একই সঙ্গে বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড, নির্যাতন, ধর্ষণ ও রোহিঙ্গাদের ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান গুঁড়িয়ে দেয়ার অভিযোগ এনেছেন তিনি।

সূত্র : এসোসিয়েট প্রেস (এপি)।

এসআইএস

আরও পড়ুন