৫ দিন মহড়া দিয়ে একই পরিবারের চারজনের আত্মহত্যা
নাটকের মহড়া, সিনেমার মহড়া, খেলার মহড়া, এবার আত্মহত্যার মহড়া দিল মুম্বইয়ের এক পরিবারের চার সদস্য। তবে পাঁচদিন ধরে মহড়া দেওয়ার পর অবশেষে গত শুক্রবার রাতে নিজেদের শেষ করে দিলেন একই পরিবারের চার সদস্য।
ওশিওয়ারা থানার পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, সেই পরিবারের চার সদস্য নিজেদের সুইসাইড নোট লিখেছেন এবং তা একাধিকবার ভিডিওর সামনে বলেছেন।
ফেব্রুয়ারির ২০ তারিখ, ওশিওয়ারা থানার পুলিশ, ভারতী পাল(২৫) এবং কুড়ি বছর বয়সি কার্তিক পালের ঝুলন্ত দেহ তাদের নিয়োগকর্তার ফ্ল্যাট থেকে উদ্ধার করে। তার ঠিক পরের দিন সকালে লোখান্ডওয়ালার ফ্ল্যাট থেকে একই রকম ঝুলন্ত অবস্থায় ভারতী ও কার্তিকের মা শিখা পাল ও তাদের সত বাবা অজিতকুমার পটেলের দেহ উদ্ধার করে পুলিশ।
প্রত্যেকেই নিজেদের মৃত্যুর আগে একটি করে এক মিনিটের সুইসাইড নোট মোবাইলে রেকর্ড করে রেখে যায়। সেই মোবাইলটি ভারতীর মায়ের দেহের পাশ থেকে উদ্ধার করা হয়েছে। মোবাইলে দেখা গেছে, ভারতী, তার ভিডিওতে বলেছেন তার নিয়োগকর্তা টিঙ্কু সিংহ, তাকে মাঝেমধ্যেই যৌন নিপীড়ণ করে। তাকে একাধিকবার বিয়ে করার জন্য চাপ দেয় এবং তার হাত থেকে মুক্তি পেতেই ভারতী এই চরম পদক্ষেপ নিতে বাধ্য হল।
মেয়েটির ভাই কার্তিকও একই কথা বলেছেন, মৃত্যুর আগে তার শেষ ভিডিওটিতে। কার্তিক আরও বলেছেন যে, টিঙ্কু তাকে একাধিকবার মেরেছে। সুইসাইড নোটের ভিত্তিতে, শ্লীলতাহানির অভিযোগে ও আত্মহত্যায় প্ররোচনা দেওয়ার দায়, টিঙ্কু সিংহকে গ্রেফতার করে পুলিশ। যদিও টিঙ্কু সিংহ গ্রেফতার হওয়ার পর পুলিশকে জানায়, সে ভারতীকে নিজের বোনের মতো দেখত, কখনও তাকে ছুঁয়েও দেখেনি।
তবে ভারতীর ময়নাতদন্তের রিপোর্টে দেখা গেছে, তার ওপর কোনও ধর্ষণ না হলেও, তিনি সেক্সুয়ালি অ্যাক্টিভ ছিলেন।
এখন পুলিশ ভারতীর মোবাইল পরীক্ষার জন্য পাঠিয়েছে। খতিয়ে দেখা হচ্ছে, ভারতীর অন্য কারোর সঙ্গে কোনও সম্পর্ক ছিল কিনা। এই আত্মহত্যার ঘটনায় পঞ্চম কোনও ব্যক্তির অস্তিত্ব আছে কিনা। তবে সুইসাইড নোটের ভিডিও খতিয়ে দেখে বোঝা যাচ্ছে, পরিবারের চার সদস্য একে ওপরের মৃত্যুর আগে শেষমুহূর্তের বয়ান নিজেরাই রেকর্ড করেছে, দাবি পুলিশের।
ভারতী ও তার ভাইকে যেমন হুক থেকে ঝুলন্ত অবস্থায়, তাদের শোবার ঘর থেকে উদ্ধার করা হয়েছে। ঠিক তেমনই, তাদের মা ও সত বাবাকে লোখান্ডওয়ালার ফ্ল্যাট থেকে হুক থেকে ঝুলন্ত অবস্থায় রান্নাঘর থেকে উদ্ধার করা হয়েছে।
ওশিওয়ারা থানার এক তদন্তকারী অফিসার জানিয়েছেন, খুব অদ্ভূতভাবে আত্মহত্যার কয়েকদিন আগে লোখান্ডওয়ালার ফ্ল্যাট থেকে সমস্ত আসবাব বের করে নেওয়া হয়। শুধু একটি কাঠের মন্দির ও দেওয়াল ঘড়িটা ঝোলানো ছিল। ঠিক একইভাবে ওশিওয়ারার ফ্ল্যাটও পুরো খালি ছিল। ফ্রিজ ছিল, কিন্তু খালি, ডাস্টবিনও খালি পড়েছিল। শুধু কিছু খবরের কাগজের স্তূপ ছিল ফ্ল্যাটের মধ্যে। তদন্তের জন্য এখন দুটি ফ্ল্যাটেরই সিসিটিভি ফুটেজ খতিয়ে দেখছে পুলিশ।
এমএএস/আরআই