তালাকপ্রাপ্ত আসমার পাশে ভারতের ৫০ গ্রামের মানুষ
ভারতের উত্তরপ্রদেশে এক মুসলিম নারীকে তার স্বামী সৌদি আরব থেকে টেলিফোনে তিন তালাক দেয়ার পর আশপাশের অন্তত পঞ্চাশটি গ্রামের মানুষ একজোট হয়ে ওই নারীর পাশে দাঁড়িয়েছেন।
ওই এলাকার মুসলিম গ্রামবাসীরা তাকে এভাবে তালাক দেয়ার বিরোধিতা করে বলেছেন, প্রদেশের মুজাফফরনগর জেলার নাইয়ামুর মেয়ে আসমা খাতুনের কোনো দোষ নেই এবং তার ওপর জোর করে এই বিবাহ-বিচ্ছেদ চাপিয়ে দেয়াটা অন্যায়।
এই বিরল পদক্ষেপ নেয়া হল এমন এক সময়; যখন তিন তালাকপ্রথা বজায় রাখা নিয়ে ভারতের সুপ্রিম কোর্টে শুনানি চলছে। দেশটির আইন কমিশনও এই প্রশ্নে জনমত যাচাইয়ের প্রক্রিয়া শুরু করেছে।
গত ৩০ সেপ্টেম্বর সকাল ৯টার দিকে নাইয়ামু গ্রামের আসমা খাতুন যখন সবে তার এগারো মাস বয়সী মেয়ে ইকরাকে খাইয়ে উঠেছেন, তখনই তার মোবাইলে সৌদি আরব থেকে স্বামী শাহনওয়াজ হোসেনের ফোন আসে। সৌদি আরবের রিয়াদে ড্রাইভারের কাজ করে শাহনওয়াজ, স্ত্রীর সঙ্গে গত কিছুদিন ধরেই মনোমালিন্য চলছিল। কিন্তু টেলিফোনে সেদিন স্বামীর মুখ থেকে আসমা যা শুনল তার জন্য একেবারেই প্রস্তুত ছিল না সে।
পরে সংবাদ মাধ্যমকে আসমা বলেন, আমাদের বছর-দুয়েক হল বিয়ে হয়েছে। প্রথম বছর মোটামুটি সব ঠিকই ছিল। কিন্তু তারপর আমার মেয়ে হওয়ার পরই গণ্ডগোলের শুরু। ওরা ছেলে চেয়েছিল, কিন্তু আমার মেয়ে হওয়ার পরই মারধর শুরু হল। হাতে, পায়ে, কোমড়ে মারতে মারতে আমায় ঘর থেকে বের করে দিত।
তিনি বলেন, ‘এত অসুস্থ হয়ে পড়েছিলাম যে ভাইরা আমায় চিকিৎসার জন্য বাপের বাড়িতে নিয়ে আসে। কিন্তু আমার কপালে মেয়ে লেখা থাকলে আমি কী করব ...’?
আসমা খাতুন বলেন, সেদিন জুম্মাবারে যখন ফোন এল, হ্যালো করে ওর গলা শুনতেই আমি সালাম করলাম। কিন্তু সঙ্গে সঙ্গে ও গালিগালাজ শুরু করল, বলল এবারে নিজের ফয়সালা করে নে। দুবার তালাক দিল, তৃতীয়বারে আমাকে মুক্ত করে দিল। স্বামী পরিত্যক্ত এমন বহু নারী এরপর হাল ছেড়ে দেন, কিন্তু আসমার ক্ষেত্রে আশ্চর্যজনকভাবে তা হয়নি।
নাইয়ামুর গ্রাম-প্রধান লিয়াকত ত্যাগী তার পাশে দাঁড়িয়েছেন এবং আশপাশের আরও প্রায় গোটা পঞ্চাশেক মুসলিম-প্রধান গ্রামের মোড়লদের ডেকে সভা করে সিদ্ধান্ত নিয়েছেন শাহনওয়াজ হুসেন এভাবে তার স্ত্রীকে তালাক দিতে পারেন না।
এই বিয়ে যদি নাও টেঁকে, শাহনওয়াজের পরিবার যাতে আসমাকে মোটা ক্ষতিপূরণ দিতে বাধ্য হয় সে জন্যও যৌথভাবে আইনি লড়াই লড়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে ওই গ্রাম-সভা।
সামাজিকভাবে বেশ পিছিয়ে থাকা মুজফফরনগরে এ ঘটনা এমন সময়ে ঘটল যখন ভারতের কেন্দ্রীয় সরকারও তিন তালাকের প্রথার বিরুদ্ধে প্রকাশ্য অবস্থান নিতে শুরু করেছে। ভারতের সিনিয়র ক্যাবিনেট মন্ত্রী ভেঙ্কাইয়া নাইডু এদিনই হায়দ্রাবাদে বলেন, দেশে লিঙ্গ-বৈষম্য ও অবিচার দূর করতে তিন তালাক প্রথা বিলোপ করার সময় এসেছে।
সংবিধানের ১৪ ও ১৫ নম্বর ধারা নাগরিকদের এই সমানাধিকার দিয়েছে, কাজেই মুসলিম নারীদের বিরুদ্ধে এই অন্যায় চলতে দেওয়া যায় না। জাতি-ধর্ম-বর্ণ-লিঙ্গ নির্বিশেষে ভারতে সবাই সমান, আর সেই অভিন্ন ভারতের পথেই আমাদের এগুনো উচিত- বলেন তিনি।
নাইডুর কথায় যে অভিন্ন দেওয়ানি বিধি প্রণয়নের আভাস আছে, দেশের আইন কমিশন এর মধ্যেই সে উদ্যোগ শুরু করেছে এবং প্রায় সঙ্গে সঙ্গেই তা মুসলিম সংগঠনগুলোর বাধার মুখে পড়েছে।
অল ইন্ডিয়া পার্সোনাল ল বোর্ডের সাধারণ সম্পাদক ওয়ালি রেহমানি বলেছেন, দেশের নাগরিকরা সংবিধান নামক যে চুক্তিপত্রের ভিত্তিতে ভারতে বাস করছেন, তার ২৫ নম্বর ধারার পরিপন্থী এই পদক্ষেপ। তিনি বলেন, ধর্মকে উপেক্ষা করে কোনও একটি বিশেষ ধরনের ভাবনাকে কার্যকর করার চেষ্টাটাই তো বেআইনি।
মুসলিম নেতারা বিয়ে, তালাক, সম্পত্তির উত্তরাধিকারের মতো বিষয়গুলো তাদের ধর্মের পার্সোনাল আইনের অন্তর্গত, এই যুক্তি দিয়ে সেখানে সরকারি হস্তক্ষেপের বিরোধিতা করছেন।
কিন্তু তিন তালাক বা বিশেষ করে টেলিফোন বা হোয়াটসঅ্যাপে ঝটিতি তালাকের বিরুদ্ধে মুসলিম সমাজের ভেতরেও যে প্রতিরোধ তৈরি হচ্ছে মুজফফরনগরের আসমা খাতুনই সম্ভবততার প্রমাণ! বিবিসি বাংলা।
এসআইএস/পিআর
আরও পড়ুন
সর্বশেষ - আন্তর্জাতিক
- ১ প্লেনে যান্ত্রিক ত্রুটি, ঝাড়খণ্ডে আটকে গেলেন মোদী
- ২ ১০ মিলিয়ন ডলার মূল্যের পুরাকীর্তি ভারতকে ফিরিয়ে দিলো যুক্তরাষ্ট্র
- ৩ প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের পর পার্লামেন্ট নির্বাচনেও জয় পেলো দিশানায়েকের জোট
- ৪ বাংলাদেশে সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তা নিয়ে ভারতের কিছু বলার দরকার নেই
- ৫ মার্কিন গোয়েন্দাপ্রধান হতে যাওয়া কে এই তুলসী গ্যাবার্ড?