উজবেকিস্তানের প্রেসিডেন্টের মৃত্যু
উজবেকিস্তানের প্রেসিডেন্ট ইসলাম করিমভ মারা গেছেন। শুক্রবার উজবেকিস্তান সরকার প্রেসিডেন্টের মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করেছে। তাকে এশিয়ার একজন অন্যতম স্বৈরাচারী শাসক হিসেবে অভিহিত করা হয়। খবর বিবিসির।
৭৮ বছর বয়সী প্রেসিডেন্ট করিমভের অবস্থা বেশ কিছুদিন ধরেই বেশ খারাপ ছিল। স্ট্রোক করার কারণে গত ছয়দিন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন করিমভ। আজ নিজ শহর সমরখন্দে তার জানাজা অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে।
গতকাল উজবেকিস্তানের প্রেসিডেন্ট ইসলাম করিমভের মৃত্যুর বিষয়টি নিয়ে বেশ জল্পনা-কল্পনা তৈরি হয়েছিল। শেষ পর্যন্ত সরকারের তরফ থেকে প্রেসিডেন্টের মৃত্যুর বিষয়টি ঘোষণা করা হয়। তার মৃত্যুতে তিন দিনের শোক ঘোষণা করা হয়েছে। তাকে সমাহিত করার জন্য ইতোমধ্যেই প্রস্তুতি শুরু হয়েছে।
প্রেসিডেন্ট করিমভের মৃত্যুর বিষয়টি প্রথম জানান তুরস্কের প্রধানমন্ত্রী বিনালি ইলদিরিম। করিমভের মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করেন তিনি। কিন্তু উজবেকিস্তানের সরকারের তরফ থেকে তখনো কোনো ঘোষণা দেয়া হয়নি।
ইসলাম করিমভ দীর্ঘ ২৭ বছর ধরে উজবেকিস্তান শাসন করেছেন। তার মৃত্যুর পর তার স্থলাভিষিক্ত কে হবেন তা এখনো স্পষ্ট নয়।
এদিকে, কাজাখাস্তানের প্রেসিডেন্ট নুরসুলতান নাজারবায়েভ তার চীন সফর সংক্ষিপ্ত করে উজবেকিস্তানে যাচ্ছেন বলে জানানো হয়েছে।
১৯৯১ সালে সোভিয়েত ইউনিয়ন ভেঙ্গে যাওয়ার পর সেখান থেকে বেরিয়ে আসা উজবেকিস্তানের প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন সাবেক কমিউনিষ্ট নেতা ইসলাম আবদুগানিয়েভিচ করিমভ। উজবেকিস্তানে সেটাই ছিল সর্বশেষ নিরপেক্ষ নির্বাচন।
ক্ষমতায় আসার পর তিনি সমালোচক এবং বিরোধীদের জেলে পাঠানো শুরু করেন। এছাড়া অনেককেই তিনি নির্বাসনেও পাঠান।
কট্টরপন্থী ইসলামী গোষ্ঠীর সঙ্গে সম্পর্ক থাকার সন্দেহে হাজার হাজার মুসলমানকে তিনি কারাবন্দী করেন। তিনি দাবি করেন যে, উজবেকিস্তান তাদের মতো করে গণতন্ত্রের চর্চা করছে। তবে এই গণতন্ত্রে বাকস্বাধীনতা এবং ধর্মীয় স্বাধীনতার কোন বালাই ছিল না।
১৯৯৯ সালে এক হত্যা প্রচেষ্টা থেকে বেঁচে যান ইসলাম করিমভ। কিন্তু এরপর তিনি বিরোধীদের ওপর দমন-নিপীড়ন আরও বাড়িয়ে দেন। তিনি বিরোধীদের ওপর অমানবিক নির্যাতন শুরু করেন।
২০০৫ সালে আনদিজানে এক সরকার বিরোধী গণবিক্ষোভকে নির্মমভাবে দমন করা হয়। মানবাধিকার সংগঠনগুলো জানিয়েছে, ওই বিক্ষোভে শত শত শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভকারীকে সৈন্যরা হত্যা করেছে।
করিমভের অবর্তমানে কে উজবেকিস্তানের হাল ধরবেন সেটাই এখন বড় প্রশ্ন। একসময় তার বড় মেয়ে গুলনারাকেই তার সম্ভাব্য উত্তরসুরি বলে মনে করা হতো। কিন্তু নানা রকম ব্যবসায়িক কেলেংকারি এবং বিলাসবহুল জীবন যাপনের কারণে সেই সম্ভাবনা এখন আর নেই। তাকে এখন গৃহবন্দী করে রাখা হয়েছে।
সম্ভাব্য উত্তরসুরী হিসেবে এখন যে দুজনের নাম শোনা যাচ্ছে তারা হচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী শাভকাত মিরজিয়ায়েভ এবং ডেপুটি প্রধানমন্ত্রী রুস্তাম আজিমভ।
টিটিএন/এমএস