মনিপুরে ক্ষোভের মুখে ‘লৌহমানবী ইরম শর্মিলা’
ভারতের উত্তরপূর্ব রাজ্য মনিপুরে সেনাবাহিনীর বিশেষ ক্ষমতা আইনের বিরুদ্ধে ১৬ বছর ধরে অনশন চালিয়ে মঙ্গলবার তা ভেঙেছেন লৌহমানবী ইরম শর্মিলা। এরপরই ঘোষণা দিয়েছেন যে, তিনি রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী হতে চান। তাকে ক্ষমতা পেতে হবে লড়াই এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য।
এই ঘোষণায় অবাক হয়েছে মানবাধিকার আন্দোলনে তার সতীর্থদের একটা বড় অংশ। ক্ষুব্ধ মনিপুরের সাধারণ মানুষও।
একাংশ বলছে, সেনাবাহিনীর বিশেষ ক্ষমতা আইনের বিরুদ্ধে চলতে থাকা লড়াইয়ের সঙ্গে সরাসরি বিশ্বাসঘাতকতা করেছেন আন্দোলনের প্রতীক হয়ে ওঠা ইরম শর্মিলা।
আরেক অংশ অবশ্য বলছে, তার সম্পূর্ণ অধিকার রয়েছে এই সিদ্ধান্ত নেওয়ার ব্যাপারে। মানবাধিকার আন্দোলনের নেতারা অবশ্য বলছেন, ১৬ বছরের অনশন ভাঙার মুহূর্তে তিনি যে আবেগাপ্লুত হয়ে যাবেন, সেটা স্বাভাবিক। তারা আশা করছেন, কয়েকটা দিন গেলে সবাই মিলে আলোচনা করে নিশ্চয়ই একটা পথ বের করা যাবে।
অনশন ভাঙার পরে ইরম শর্মিলা বিবিসিকে দেওয়া একান্ত সাক্ষাৎকারে বলেছেন, আমি অন্য সকলের মতোই একজন সাধারণ মানুষ, কোনও সন্ত নই। আমার মধ্যেও ভালো খারাপ দুটোই আছে। কেন যে আমাকে সবাই সন্ত বানিয়ে রেখেছে জানি না।
মানবাধিকার কর্মীদের একাংশ মনে করছে, অনশন ভেঙে মনিপুরের মানুষের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করেছেন ইরম শর্মিলা। ইরম শর্মিলার প্রতি ক্ষোভ এতটাই যে পুলিশ হেফাজত আর হাসপাতাল থেকে ছাড়া পাওয়ার পরে তিনি রাত কাটানোর জন্য যে দুই মানবাধিকার আন্দোলনের সমর্থকের বাড়িতে গিয়েছিলেন, সেখান থেকে তাকে ফিরে আসতে হয়েছে। হাসপাতালেই রাতে থেকেছেন শর্মিলা।
তিনি যে অনশন প্রত্যাহার করেছেন, তার জন্য ক্ষোভ হয়তো কিছু মানুষের মধ্যে রয়েছে। তবে যেভাবে রাজনীতিতে যোগ দিয়ে একেবারে মুখ্যমন্ত্রী হতে চান বলে ঘোষণা করেছেন শর্মিলা, মানবাধিকার কর্মীরা সেটাতেই অবাক। মনিপুরে বিচারবহির্ভূত হত্যার শিকার হয়েছেন যারা, তাদের পরিবারের সদস্যদের নিয়ে গঠিত মানবাধিকার সংগঠন ‘ইভাম’ দীর্ঘদিন ধরেই শর্মিলার লড়াইয়ের পাশে থেকেছে।
সংগঠনটির সভানেত্রী রেণু থাকেলাম্বাম বিবিসিকে বলেন, সেনাবাহিনীর বিশেষ ক্ষমতা আইনের বিরুদ্ধে লড়াইটা তো শুধু শর্মিলার একার ছিল না। তিনি তো তার নিজের অধিকারের দাবিতে লড়ছিলেন না! আমরাও তাতে শামিল হয়েছিলাম। মনিপুরের সাধারণ মানুষও সমর্থন করেছিলেন তাকে। অনশন ভেঙে রাজনীতিতে যোগ দিয়ে মুখ্যমন্ত্রী হওয়ার ইচ্ছেটাতো শর্মিলা একা নিতে পারেন না।
রাজনৈতিক নেতৃত্বের সদিচ্ছার অভাবেই যে দীর্ঘ কয়েক দশক ধরে মনিপুরে সেনাবাহিনীর বিশেষ ক্ষমতা আইন বলবৎ রয়েছে, তারা চান না বলেই যে ওই আইন তোলা যাচ্ছে না- সেটা মনে করেন রাজ্যের অনেক মানবাধিকার কর্মীই। রাজনীতির সঙ্গে মানবাধিকার আন্দোলন মনিপুরে তাই দুই বিপরীত মেরুতে অবস্থান করে। যার হাত ধরে ইরম শর্মিলার মানবাধিকার আন্দোলনে যোগ দেওয়া, সেই বাবলু লইথঙবাম বিবিসিকে জানান, মনিপুরে রাজনীতি আর মানবাধিকার আন্দোলনের মধ্যে ফারাকটা খুব প্রকট। তাই এত বছর লড়াইয়ের যে দিকে তিনি ছিলেন, এখন হঠাৎ করেই বিপরীত শিবিরে চলে গেলেন শর্মিলা। তার পথটা খুব মসৃণ হবে না।
লৌহমানবী হয়ে ওঠা ইরম শর্মিলা যে প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে লড়ছিলেন, তিনি যদি সেই প্রাতিষ্ঠানিকতার অংশ হয়েও যান, অন্যেরা লড়াই চালিয়ে যাবেন বলেই মন্তব্য করেছেন মনিপুরের মানবাধিকার কর্মীরা।
এসআইএস/আরআইপি