রবীন্দ্রনাথের নোবেল পদক চুরির তদন্ত করতে চান মমতা
বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের চুরি যাওয়া নোবেল পুরস্কারের বিষয়ে তদন্ত করতে চান পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এ বিষয়ে কেন্দ্রের কাছে যাবতীয় নথি চেয়েছে রাজ্য সরকার। শুক্রবার রাজ্যের স্বরাষ্ট্র সচিব মলয় দে কেন্দ্রের ডিপার্টমেন্ট অব পার্সোনাল অ্যান্ড ট্রেনিংকে (ডিওপিটি) একটি চিঠি দিয়েছেন; যাতে প্রয়োজনে তদন্তে নামতে পারে রাজ্য।
বর্ধমানে প্রশাসনিক বৈঠকের পর মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ওরা (সিবিআই) নিজেরা তো পারছে না! আমাদের দিলে আমরা চেষ্টা করে দেখতে পারি। রবীন্দ্রনাথের নোবেল নিয়ে সারা দেশের সেন্টিমেন্ট আছে। সেই নোবেল পদক কোথায় গেল, তা জানা দরকার।
মুখ্যসচিব বাসুদেব বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ২০১৫ সালের ডিসেম্বরে ডিওপিটিকে চিঠি দিয়ে এই মামলার অগ্রগতি এবং সিবিআই কী করতে চায়, তা জানতে চাওয়া হয়েছিল। তবে সেই চিঠির কোনো জবাব পাওয়া যায়নি। বাসুদেব আরো বলেন, মুখ্যমন্ত্রী বৃহস্পতিবার বিষয়টি বলেছেন। তাই আমরা আবার কেন্দ্রকে চিঠি দিয়ে এ নিয়ে জানতে চাইছি।
রবীন্দ্র ভবনের সংগ্রহশালা থেকে নোবেল পদকসহ ৫০টি মূল্যবান সামগ্রী চুরির বিষয়টি জানাজানি হয়েছিল ২০০৪ সালের ২৫ মার্চ সকালে। মমতা তখন বিরোধী নেত্রী। প্রথম থেকেই তিনি নোবেল চুরির পেছনে চক্রান্ত ও ষড়যন্ত্র রয়েছে বলে দাবি করেছিলেন। চুরির কয়েক দিনের মধ্যেই শান্তি নিকেতনে পৌঁছে বিশ্বভারতীর শিক্ষার্থীদের মমতা বলেছিলেন, ‘এর পেছনে কোনো বড় চক্র জড়িত থাকতে পারে।’
একই সঙ্গে সিবিআইর তদন্ত চেয়ে বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের নেতৃত্বাধীন বাম সরকারের ওপর চাপ তৈরি করেন বর্তমান মুখ্যমন্ত্রী। মমতার সফরের পর দিনই শান্তি নিকেতন গিয়ে সিবিআই তদন্তের কথা ঘোষণা করেন বুদ্ধদেব।
সে সময়ের বিরোধী নেত্রী মমতার ধারণা, প্রকৃত তদন্ত হলে নোবেল খুঁজে পাওয়া অসম্ভব নয়। কিন্তু ১২ বছর পরে হঠাৎ কেন নোবেল চুরির তদন্তভার চেয়ে তৎপর হলেন মুখ্যমন্ত্রী, সে প্রশ্ন উঠেছে বিভিন্ন মহলে। মমতা নিজের ব্যাখ্যায়, রবীন্দ্রনাথের সম্মান শুধু বাংলার নয়, গোটা বিশ্বের।
মুখ্যমন্ত্রীর উদ্যোগকে অবশ্য কটাক্ষ করতে ছাড়ছেন না বিরোধীরা। প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরী বলেছেন, দিদি মনে হয় জেনেছেন, নোবেল তৃণমূলেরই কারও কাছে আছে। উনি খুঁজে দিলে আমরা খুশি তো হবই, দিদিকেও নোবেল পুরস্কার দেওয়ার দাবি তুলব! বিজেপির রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ ও সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক সূর্যকান্ত মিশ্রের মন্তব্য, উনি যেভাবে বলছেন, তাতে তো মনে হচ্ছে, উনি জানেন নোবেল কোথায় আছে!
যদিও পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য প্রশাসনের একাংশ বলছে, তদন্তের বিষয়ে সিবিআই যে আসলে ‘ব্যর্থ’, তা সামনে আনাই নবান্নের উদ্দেশ্য। আবার বিরোধীদের দাবি, কলকাতা হাইকোর্টে নারদ-কাণ্ড নিয়ে তদন্ত চলছে। মামলার যা গতিপ্রকৃতি, তাতে সেই তদন্ত সিবিআইয়ের হাতে তুলে দেওয়ার সম্ভাবনা উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না। তার আগে নোবেল-কাণ্ডের প্রসঙ্গ এনে সিবিআইয়ের ‘ব্যর্থতা’-ই তুলে ধরতে চাইছে তৃণমূল সরকার।
সিবিআই আইনজীবীরা বলছেন, রাজ্য চাইলে নতুন করে তদন্ত করতেই পারে। এই মামলা সংক্রান্ত যে কেস ডায়েরি, নথিপত্র, সিজার মেমো রয়েছে, কেন্দ্র নির্দেশ দিলে সিবিআই তা রাজ্যের হাতে তুলে দেবে। কিন্তু, আদালতে গিয়ে রাজ্য বা সিবিআই যে কেউ যদি পুনর্তদন্তের আর্জি জানায়, তা হলে প্রশ্ন উঠবে, মামলায় নতুন কী অগ্রগতি হয়েছে? নোবেল পদক বা চোর সম্পর্কে বিশেষ কোনও তথ্য হাতে এলে, তবেই আদালত পুনর্তদন্তের আবেদন মঞ্জুর করবেন। আনন্দবাজার।
এসআইএস/এবিএস