ছিটমহলবাসীকে দেয়া কথা রাখেনি ভারত
ভারত-বাংলাদেশের মধ্যে ছিটমহল বিনিময়ের পর নয়শোর বেশি মানুষ ভারতীয় ছিটমহলগুলো থেকে মূল ভূখন্ডে চলে গিয়েছিলেন। সেসময় ভারত সরকার বেশ কিছু প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। কিন্তু এক বছর আগের সে প্রতিশ্রুতি আজও পূরণ হয়নি। তাই সেসময়ের ছিটমহলে থাকা মানুষদের একটা বড় অংশই এখন মনে করছেন ভারতে চলে আসার সেই সিদ্ধান্তটা হয়তো ভুল ছিল। খবর বিবিসির।
বাংলাদেশি ছিটমহলগুলোর সব মানুষই ভারতের নাগরিকত্ব নিয়েছিলেন। তারা নাগরিকত্বের পরিচয়পত্র পেয়েছেন ঠিকই কিন্তু না পেয়েছেন জমির দলিল, না পেয়েছেন অন্য কোনো সুযোগ সুবিধা। এমনকি তাদের ঘরে আসেনি বিদ্যুতও। উল্টো স্থানীয় রাজনীতি ঢুকে পড়ে বাড়িয়ে দিয়েছে তাদের অশান্তি।
ঠিক এক বছর আগে, ৩১শে জুলাই এবং পয়লা অাগস্ট মধ্যরাতে ভারত এবং বাংলাদেশের মধ্যে ১৬২টি ছিটমহল বিনিময় সম্পন্ন হয়েছিল।
৫১টি বাংলাদেশী ছিটমহল মিশে গিয়েছিল ভারতের সঙ্গে আর ১১১টি ভারতীয় গ্রাম হয়ে গিয়েছিল বাংলাদেশের অঙ্গ।
ওই পূর্বতন ভারতীয় ছিটমহলগুলো থেকে প্রায় সাড়ে নয়শো মানুষ সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন ভারতের মূল ভূখন্ডে চলে আসার। তাদের স্থায়ী বাসস্থান তৈরী না হওয়ায় তাদের কয়েকটি অস্থায়ী শিবিরে আশ্রয় দেয়া হয়েছে। তবে শিবিরগুলিতে যা রেশন দেয়া হয়, তাতে পরিবারগুলোর চলা খুব কষ্টকর হয়ে যায়।
সবচেয়ে বড় সমস্যা হচ্ছে এরা কেউই রোজগারের কোনো ব্যবস্থা করতে পারেননি। তাই বাংলাদেশের ভেতরে ভারতীয় ছিটমহল থেকে চলে আসার আগে জমি বা গবাদি পশু বিক্রি করে তারা যে টাকা সঙ্গে আনতে পেরেছিলেন ব্যাঙ্ক থেকে সেই টাকা তুলেই সংসার চালাচ্ছেন।
পূর্বতন ভারতীয় ছিটমহলের দহলা খাগড়াবাড়ীর লক্ষ্মী বর্মন দুঃখ করে বলছিলেন, ওখানে সাজানো সংসার নষ্ট করে চলে এলাম। অনেক আশা নিয়ে এসেছিলাম এখানে। কিন্তু কিছুইতো পেলাম না এখনও পর্যন্ত। যদি সরকার কিছু না দিতে পারে তবে ফেরত পাঠিয়ে দিক আমাদের।
অস্থায়ী শিবির থেকে কবে স্থায়ী পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করা হবে সেটাও বুঝতে পারছেন না এরা। আর কর্মসংস্থানের ব্যবস্থাই বা কি হবে সেটাও তাদের জানা নেই।
পূর্বতন বাংলাদেশী ছিটমহল কিসমাত বাত্রিগাছের বাসিন্দা আঞ্জুয়ারা বিবি বলেন, সরকার মুরগির বাচ্চা দিয়েছে। ভোটের কার্ড দিয়েছে প্রায় সবাইকেই। কিন্তু তাতে আমার বাবার নামের জায়গায় স্বামীর নাম লেখা হয়েছে। এরকম ভুল প্রায় সবার কার্ডেই।
সাবেক ছিটমহলগুলোতে এখনও শুরু হয়নি জমি জরিপ। ফলে ছিটমহলগুলোর জমির মালিকানা এখন কারোরই নেই। সব জমিই স্থল সীমান্ত চুক্তি অনুযায়ী সরকারের হয়ে গেছে। আগে অর্থের প্রয়োজনে অন্তত জমি বন্ধক রাখা যেত, এখন সেটাও বন্ধ হয়ে গেছে।
এদিকে, সরকার বলছে সব প্রতিশ্রুতি রক্ষা করা হবে। তবে একটু সময় লাগবে। সে সময় পর্যন্ত অপেক্ষা করবে সাবেক ছিটমহলের বাসিন্দারা। তবে সেই অপেক্ষার ফল আশানুরুপ হবে কিনা সেটা সরকারই ভালো বলতে পারবে।
টিটিএন/এমএস