ভিডিও EN
  1. Home/
  2. আন্তর্জাতিক

তুরস্কে সেনা অভ্যুত্থান : ক্ষমতা দখলের দাবি

প্রকাশিত: ০২:২৬ এএম, ১৬ জুলাই ২০১৬

সামরিক অভ্যুত্থানের পর তুরস্কের ক্ষমতা দখলের দাবি করেছে দেশটির সেনাবাহিনী। বার্তা সংস্থা রয়টার্সের এক প্রতিবেদনে এ খবর জানানো হয়েছে।

অভ্যুত্থানের পর সেনাবাহিনী এক বিবৃতিতে ক্ষমতা দখলের দাবি করেছে বলে জানিয়েছে রয়টার্স।

বিবৃতি থেকে উদ্বৃত করে দেশটির টিভি চ্যানেলগুলোর খবরে বলা হয়েছে, ‘গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা ও মানবাধিকার রক্ষার স্বার্থে’ সশস্ত্র বাহিনী তুরস্কের ক্ষমতা দখল করেছে। দেশটির গণমাধ্যমেরও নিয়ন্ত্রণ নিয়েছে তারা।

বাংলাদেশ সময় শুক্রবার দিবাগত রাত আড়াইটার দিকে এ অভ্যুত্থান হয় বলে এখনো পর্যন্ত পাওয়া খবরে জানা যাচ্ছে।

এদিকে অভ্যুত্থানের মুখেই তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এর্দোয়ান ইস্তানবুলে ফিরেছেন।  দেশে ফেরার পর দেখা গেছে সমর্থকরা তাকে ঘিরে রেখেছেন। টেলিভিশনে প্রচারিত এক ভাষণে, সেনা অভ্যুত্থানের এই চেষ্টাকে রাষ্ট্রদ্রোহ বলে আখ্যায়িত করেছেন।

এরআগে সেনাবাহিনীর একটি অংশ দাবি করে, বর্তমানে তুরস্কের নিয়ন্ত্রণ একটি পিস কাউন্সিলের হাতে এবং সেখানে কারফিউ এবং মার্শাল ল জারি করা হয়েছে।

কিন্তু প্রধানমন্ত্রী বিনালি ইলদ্রিম পরে বলেন, পরিস্থিতি মোটামুটি সরকারের নিয়ন্ত্রণেই রয়েছে রাজধানী আঙ্কারার আকাশ ‘নো ফ্লাই জোন’ ঘোষণা করা হয়েছে। ১৩০ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে বলেও জানিয়েছেন তিনি।

এরআগে ইস্তানবুলের রাস্তায় সেনা সদস্যদের কৌশলী অবস্থান দেখা গেছে এবং আঙ্কারায় খুব কম উচ্চতায় বিমান উড়তে দেখা গেছে। ইস্তানবুলের তাকসিম স্কয়ারের কাছে দুটি শক্তিশালী বিস্ফোরণের শব্দও পাওয়া গেছে।

আঙ্কারায় পার্লামেন্ট বিল্ডিংয়েও বিস্ফোরণেও খবর রয়েছে। মনে করা হচ্ছে এমপিরা কোথাও লুকিয়ে রয়েছেন।

সিএনএন তুর্কি ব্রডকাস্টারের নিয়ন্ত্রণ নিয়েছে সেনাবাহিনী এবং তাদের সরাসরি সম্প্রচারও বন্ধ করা হয়েছে।

সেনা অভুত্থানের এই চেষ্টার পেছনে কাদের, কতটা সমর্থন রয়েছে তা এখনো স্পষ্ট নয়। ঊর্ধ্বতন সেনা কর্মকর্তাদের কয়েকজন আটক হয়েছেন বলেও খবর পাওয়া যাচ্ছে।

বিবিসির খবরে বলা হয়েছে, তুরস্কের মানুষ প্রচণ্ড বিস্মিত এবং দ্বিধান্বিত যে আসলে হচ্ছেটা কী সেখানে।

মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা দেশটির সব রাজনৈতিক দলকে গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত সরকারকে সমর্থন জানানো আহ্বান জানিয়েছে।

তুরস্কের গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানগুলোর প্রতি পূর্ণ সমর্থনের কথা বলেছে ন্যাটোও।

স্থানীয় সময় শনিবার সকালের দিকে এর্দোয়ান বলেছেন, যারা ট্যাংক নিয়ে নেমেছেন তারা যেখান থেকে এসেছেন সেখানে ফিরে যেতে হবে। অভুত্থানে যারা নেতৃত্ব দিচ্ছেন তাদের সন্ত্রাসী বলেও আখ্যায়িত করেছেন তিনি।       

জনগণকে রাস্তায় নেমে এসে অভ্যুত্থান চেষ্টা বানচাল করে দেয়ারও আহ্বান জানিয়েছেন তিনি। তিনি বলেছেন, আমি তুরস্কের মানুষকে আহ্বান জানাবো তারা যেন বিভিন্ন সড়কে ও এয়ারপোর্টে সমবেত হন। সাধারণ মানুষের চেয়ে বেশি ক্ষমতা কারো ক্ষমতা কারো আছে, আমি কখনো তা বিশ্বাস করিনি।

তিনি বলেছেন, তুরস্কের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের মারমারিস হলিডে রিসোর্ট থেকে তিনি ইস্তানবুলে ফিরে এসেছেন।

কারফিউ অমান্য করে শুক্রবার রাতেই দিকেই তাকসিম স্কয়ারে জড়ো হন এর্দোয়ানের বেশ ক’জন সমর্থক।

এরপর থেকে সেখানে বিচ্ছিন্নভাবে সংঘর্ষের খবর পাওয়া যাচ্ছে। টুইটারে অনেকে বলেছেন, স্কয়ারর কাছ থেকে গুলির আওয়াজও পাওয়া গেছে।

এরআগে ইলদ্রিম দাবি করেন, এটা কোনো অভ্যুত্থান নয়। সরকার এখনো নিয়ন্ত্রণে আছে।    

সামরিক বাহিনীর যে বিবৃতি রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যম টিআরটিতে প্রচারিত হয়েছে, সেখানে ঘোষককে বলতে শোনা যাচ্ছে, বর্তমান সরকারের সময়ে গণতান্ত্রিক এবং ধর্ম নিরপেক্ষ শাসনব্যবস্থা ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। নতুন সংবিধান প্রবর্তন করা হবে।

তবে তুরস্কের রাষ্ট্রপতি সংশ্লিষ্ট একটি সূত্রের বরাত দিয়ে বিবিসির খবরে বলা হয়েছে, বিবৃতিটি যথাযথ কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে অনুমোদিত নয়।  

তুরস্কের সেনাপ্রধান জেনারেল হুলুসি আকারিকেও আরো অনেকের সঙ্গে সেনা সদর দফতরে জিম্মি করা হয়েছে বলে খবর রয়েছে।

এনটিভি নামে একটি টেলিভিশন চ্যানেলকে ইলদ্রিম বলেছেন, সামরিক নির্দেশনা না মেনে সেনাবাহিনীর একটি অংশ বেআইনি কাজ করছে। সবার জানা দরকার, আমরা এমন কিছু বরদাশত করবো না যা গণতন্ত্রের জন্য ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়াতে পারে।

ইস্তানবুলে পুলিশ সদর দফতরের বাইরেও গোলাগুলির আওয়াজ পাওয়া গেছে এবং ইস্তানবুল এয়ারপোর্টের বাইরে ট্যাংক অবস্থান করছে।

ইউরোপিয় ইউনিয়নের একটি সূত্র রয়টার্সকে বলেছেন, দেখে মনে হচ্ছে, ক্ষমতাশালী কারো নেতৃত্বে এটি খুব সুপরিকল্পিত একটি অভ্যুত্থান, এমন নয় যে মাত্র কয়েকজন কর্নেল এখানে জড়িত।

এরআগে ১৯৯৩, ১৯৮০, ১৯৭১ ও ১৯৬০ সালেও তুরস্কে সেনা অভ্যুত্থানের খবর রয়েছে।

এনএফ/এমএস