অবশেষে বন্ধ হয়েছে পিস টিভির সম্প্রচার
ভারতের ইসলামী বক্তা ও ধর্ম প্রচারক জাকির নায়েকের পিস টিভির সম্প্রচার বন্ধ করে দিয়েছে ভারত। শনিবার রাত থেকেই এই প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। খবর বিবিসির।
বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকার গুলশানের হলি আর্টিসান রেস্টুরেন্টে হামলা চালানো জঙ্গিদের মধ্যে দুজন টুইটারে জাকির নায়েককে অনুসরণ করতো। এমন তথ্য প্রকাশ হওয়ার পর পিস টিভির সম্প্রচার নিয়ে ঢাকা থেকে দিল্লিতে আনুষ্ঠানিক অনুরোধ জানানো হয়েছিল।
ভারতে পিস টিভি সম্প্রচার করার অনুমতি নেই। তবুও বেআইনিভাবে অনেক ক্যাবল অপারেটর এই চ্যানেলটি সম্প্রচার করে আসছিল।
জাকির নায়েক ভারতের মুম্বাই শহরের বাসিন্দা। তার পরিচালিত ট্রাস্ট থেকে পিস টিভি সম্প্রচার করা হচ্ছিল। সেখানকার পুলিশ কমিশনারের নেতৃত্বে একটি বিশেষ তদন্ত দল গঠন করা হয়েছে পিস টিভির কার্যক্রম খতিয়ে দেখার জন্য।
কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ও পিস টিভিতে প্রচারিত জাকির নায়েকের বক্তব্য পর্যবেক্ষণ করছে। তার কোনো বক্তব্যে কোনোভাবে সন্ত্রাসবাদকে সমর্থন বা তার প্রচারণা চালানো হয়েছে কিনা তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
কলকাতার কয়েকটি এলাকায় শনিবার স্থানীয় সময় রাত সাড়ে ৯টা পর্যন্তও পিস টিভি দেখা যাচ্ছিল। তারপরই হঠাৎ করে চ্যানেলটির সম্প্রচার বন্ধ হয়ে যায়। মুসলিমপ্রধান ট্যাংরা অঞ্চলের এক বাসিন্দা বিবিসিকে এ তথ্য জানিয়েছেন।
পশ্চিমবঙ্গের সংখ্যালঘু দপ্তরের মন্ত্রী সিদ্দিকুল্লা চৌধুরী বিবিসিকে বলেছেন, জাকির নায়েক এমন কিছু বলে থাকেন, যা ইসলামী শাস্ত্রমতে ঠিক নয়। ফলে যুবসমাজ উৎসাহিত হচ্ছে। তারা আইন-শৃঙ্খলা, সংবিধানকে ডিঙিয়ে কোনো কিছু করার কথা ভাবছে। তাদের মগজ গরম হয়ে যাচ্ছে।
কলকাতার স্থানীয় ক্যাবল টিভি অপারেটরা বলছেন, শনিবারই থানা থেকে তাদের বলা হয়েছে ওই চ্যানেলের বেআইনি সম্প্রচার বন্ধ করে দিতে। ভারতের অন্যান্য রাজ্যের পুলিশও একই নির্দেশ দিচ্ছে স্থানীয় ক্যাবল টিভি অপারেটদের।
মধ্যপ্রদেশের রাজধানী ভূপালের অন্তত দুজন ক্যাবল অপারেটর এই নির্দেশ আসার কথা নিশ্চিত করেছেন। তারা জানিয়েছেন, পুলিশ প্রশাসনের নির্দেশ আসার পরই পিস টিভির সম্প্রচার বন্ধ করে দিয়েছেন তারা।
বিশ্বের অন্যান্য কয়েকটি দেশে এর আগেই জাকির নায়েকের পিস টিভির সম্প্রচার নিষিদ্ধ করা হয়েছে। জাকির নায়েককে কানাডা, যুক্তরাজ্যের মতো বেশ কয়েকটি দেশ নিষিদ্ধ করেছে। শনিবারই কেন্দ্রীয় তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, ওই চ্যানেলটি ভারতে ডাউনলোড করার আইনি অনুমতি নেই।
মন্ত্রকের উপ-সচিব শঙ্কর লালকে উদ্ধৃত করে ভারতীয় সংবাদমাধ্যম বলছে, কোনোভাবে যদি ওই চ্যানেলটি ভারতের কোথাও বেআইনিভাবে সম্প্রচার করা হয়, তাহলে ক্যাবল টিভি রুলসের-৬(৬) ধারায় তার বিরুদ্ধে দ্রুত ব্যবস্থা নিতে হবে। তবে জাকির নায়েকের সম্প্রচারিত বক্তব্যে আদৌ সন্ত্রাসবাদকে উস্কানি দেয়া হয়েছে এ বিষয়টি নিয়ে ভারতে বেশ বিতর্ক রয়েছে।
মৌলভী, মওলানাদের একটা বড় অংশই জাকির নায়েকের মতামতকে মানতে চান না। কিন্তু ভারত শাসিত কাশ্মীরের বিচ্ছিন্নতাবাদী নেতারা মনে করেন জাকির নায়েকের বিরুদ্ধে এটা একটা ষড়যন্ত্র।
তবে গণমাধ্যমের বিভিন্ন খবরের পরিপ্রেক্ষিতে নিজের ফেসবুক পেজে এক ভিডিও বার্তায় গুলশানে হামলার বিষয়ে নিন্দা জানিয়ে ভারতীয় সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদনের বিষয়ে বক্তব্য দিয়েছেন জাকির নায়েক।
শুক্রবার দুপুরে নিজের ফেসবুক পেজে চার মিনিট ৩৮ সেকেন্ডের একটি ভিডিওতে গুলশান হামলা এবং তাকে ঘিরে ভারতজুড়ে আলোচনার বিষয়ে তিনি বলেন, কেউ যদি দাবি করে সে মানুষ হত্যা করে ইসলামের পথে রয়েছে, সেটা একদমই কোরআনের পরিপন্থী কথা।
গুলশান হামলায় জড়িত দুজন জাকির নায়েকের ভক্ত এমন খবরের বিষয়ে ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে জাকির নায়েক বলেন, ইসলামিক স্টেট অব ইরাক অ্যান্ড সিরিয়া (আইএস) নামটিই ইসলামবিরোধী। ইসলামিক স্টেট (আইএস) নামটি ব্যবহার করে আমরা আসলে ইসলামের নিন্দা করছি।
আইএসকে এন্টি ইসলামিক স্টেট অব ইরাক অ্যান্ড সিরিয়া নামে অভিহিত করে আইএস নামটি ইসলামের শত্রুদের দেওয়া বলেও উল্লেখ করেন তিনি।
গুলশান হামলায় জড়িতরা জাকির নায়েককে অনুসরণ করে এমন তথ্য মিথ্যা দাবি করে জাকির নায়েক বলেন, আমার ফেসবুক ফলোয়ারের বড় অংশই বাংলাদেশি। এছাড়া বাংলাদেশের প্রায় প্রতিটি অঞ্চলের মানুষই বাংলায় প্রচারিত পিস টিভিতে আমাকে দেখেন।
৯০ শতাংশ বাংলাদেশি আমাকে চেনেন। প্রবীণ রাজনীতিক থেকে সাধারণ মানুষ, ছাত্র, শিক্ষকরা রয়েছেন সেই তালিকায়। আর এই বিপুল মানুষের ৫০ শতাংশ আমার গুণমুগ্ধ। এই অবস্থায় জঙ্গিরা যদি আমায় চেনে তাহলে কি আমার খুব বেশি অবাক হওয়ার কথা?
হত্যাকারীরা আমার বক্তব্যের সঙ্গে পরিচিত হতেই পারে। কিন্তু তার মানে এই নয়, আমি তাদের অনুপ্রাণিত করেছি। আমি সাধারণত ধর্মীয় বই অনুসারে বক্তব্য দেই। আমার বক্তব্য শুনে তারা যদি সঠিক ইসলামকে বুঝতে না পারে সেটা তাদের দুর্ভাগ্য।
ভারতের স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী কিরেন রিজুজু গত বুধবার জানিয়েছিলেন, বাংলাদেশের অনুরোধ পেলে জাকির নায়েকের প্রতিষ্ঠান এমনকি তাকেও নিষিদ্ধ করার কথা ভাবতে পারে ভারত।
গত ১ জুলাই ঢাকার গুলশানের হলি আর্টিসান রেস্টুরেন্টে হামলাকারী পাঁচ সন্ত্রাসীর মধ্যে অন্যতম রোহান ইমতিয়াজ এবং নিবরাস ইসলাম দুই বছর ধরে টুইটারে জাকির নায়েককে অনুসরণ করত এমন তথ্য দিয়েছে পুলিশ। গত বছর জাকির নায়েকের বক্তব্য এবং পিস টিভির একটি অনুষ্ঠান ফেসবুকে পোস্ট করেছিল রোহান ইমতিয়াজ। এর পরই জাকির নায়েকের বিরুদ্ধে জঙ্গি তৎপরতায় ইন্ধন দেওয়ার অভিযোগ ওঠে।
এদিকে বিতর্কের মুখে সৌদি আরবের মক্কায় সফররত জাকির নায়েক জানিয়েছেন, আগামী ১১ জুলাই দেশে ফিরে পরদিন নিজের অবস্থান ব্যাখ্যা করে সংবাদ সম্মেলন করবেন তিনি। দেশে ফিরলে তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হতে পারে বলে জানিয়েছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ।
টিটিএন/পিআর