ভিডিও EN
  1. Home/
  2. আন্তর্জাতিক

দ্য ইকোনমিস্টের প্রতিবেদন

জাপানে চাকরি ছাড়ার প্রবণতা বাড়ছে কেন?

আন্তর্জাতিক ডেস্ক | প্রকাশিত: ০৫:১৪ পিএম, ০২ এপ্রিল ২০২৫

জাপানে করপোরেট চাকরির ঐতিহ্যগত ধারা বদলে যাচ্ছে। একসময় যেখানে কর্মীরা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক হওয়ার পর একটি প্রতিষ্ঠানে যোগ দিয়ে সেখানেই পুরো জীবন কাটিয়ে দিতেন, সেখানে এখন চাকরি পরিবর্তনের হার উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়েছে।

কাওয়াটা ইয়াসুতোশির অভিজ্ঞতা এর উৎকৃষ্ট উদাহরণ। একসময় হেভি মেটাল ব্যান্ডের গিটারিস্ট ছিলেন তিনি। কিন্তু পরে একটি বৃহৎ ইলেকট্রনিক্স কোম্পানিতে কাজ করতে গিয়ে দেখেন, কঠোর করপোরেট শৃঙ্খলা এবং অকার্যকর প্রথাগুলো তাকে হতাশ করছে। বিশেষ করে, সিনিয়রদের প্রতি অন্ধ আনুগত্য, দীর্ঘ কর্মঘণ্টা এবং বাধ্যতামূলক অফিস-পরবর্তী পার্টিগুলো তাকে ক্লান্ত করে তুলেছিল। এক দশক আগে কাওয়াটা যখন একটি বহুজাতিক তথ্য-প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানে যোগ দিতে চান, তখন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা তাকে ‘বিশ্বাসঘাতক’ বলেও অভিহিত করেন। বর্তমানে ৪০-এর কোঠায় থাকা কাওয়াটা আবারও চাকরি বদলেছেন, কারণ তিনি নতুন চ্যালেঞ্জের সন্ধানে ছিলেন।

বিজ্ঞাপন

বিজ্ঞাপন

আরও পড়ুন>>

জাপানে এ ধরনের কর্মজীবী আগে বিরল ছিল, কিন্তু এখন পরিস্থিতি বদলাচ্ছে। ২০২৪ সালে প্রায় ৯ লাখ ৯০ হাজার কর্মী নতুন চাকরিতে যোগ দিয়েছেন, যা এক দশক আগের তুলনায় ৬০ শতাংশ বেশি। টোকিও চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির এক জরিপ অনুযায়ী, মাত্র ২১ শতাংশ তরুণ জাপানি কর্মী বলেন, তারা বর্তমান চাকরিতে অবসর পর্যন্ত থাকার পরিকল্পনা করছেন। ২০১৪ সালে এর হার ছিল ৩৫ শতাংশ।

বিজ্ঞাপন

বিজ্ঞাপন

চাকরি ছাড়ার কারণ

জাপানের জনসংখ্যাগত পরিবর্তন চাকরির বাজারে এই রূপান্তরের অন্যতম কারণ। কর্মক্ষম জনসংখ্যা কমে আসায় চাকরিপ্রার্থীদের দরকষাকষির ক্ষমতা বেড়েছে। এক জরিপ অনুযায়ী, অর্ধেকের বেশি জাপানি প্রতিষ্ঠানই এখন দক্ষ কর্মীর অভাবে ভুগছে। এমনকি একসময় অত্যন্ত মর্যাদাপূর্ণ হিসেবে বিবেচিত সরকারি চাকরিতেও তরুণ মেধাবীদের আকর্ষণ কমেছে।

সনাতনী ‘সালারিম্যান’ সংস্কৃতির উত্থান ঘটে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ-পরবর্তী অর্থনৈতিক উত্থানের সময়, যখন কর্মীরা আজীবন একটি প্রতিষ্ঠানের প্রতি অনুগত থাকতেন। তাদের কর্মনিষ্ঠার প্রতীক ছিল দীর্ঘ কর্মঘণ্টা ও অফিস-পরবর্তী সামাজিকতা। ১৯৮০-এর দশকের এক জনপ্রিয় বিজ্ঞাপনে এক এনার্জি ড্রিংকের প্রচারণায় প্রশ্ন তোলা হয়েছিল: ‘আপনি কি ২৪ ঘণ্টা লড়তে পারবেন?’

বিজ্ঞাপন

কিন্তু নতুন প্রজন্ম এই সংস্কৃতি নিয়ে প্রশ্ন তুলতে শুরু করেছে। কর্মীদের সন্তুষ্টি এবং কর্মজীবনের ভারসাম্যকে গুরুত্ব দিয়ে তারা নতুন পথ খুঁজছে। পিতৃত্বকালীন ছুটি নেওয়ার হারও বৃদ্ধি পেয়েছে—১০ বছর আগে যেখানে এই হার ছিল ২ শতাংশ, ২০২৩ সালে তা বেড়ে ৩০ শতাংশে দাঁড়িয়েছে।

তরুণ কর্মীরা এখন অফিসে ‘হাতারাকানাই ওজিসান’ বা ‘কাজ না করা প্রবীণদের’ নিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করছেন, যারা উৎপাদনশীল না হয়েও কঠোর শ্রম আইনে রক্ষিত। এক জরিপে দেখা গেছে, ২০ ও ৩০-এর কোঠায় থাকা প্রায় অর্ধেক কর্মীই এমন সহকর্মীর উপস্থিতিকে অফিসের মনোবল কমার অন্যতম কারণ বলে মনে করেন।

অর্থনীতিতে বড় প্রভাব

এই পরিবর্তন কর্মসংস্থানের ভবিষ্যতের ওপর বড় প্রভাব ফেলতে পারে। জাপানে দীর্ঘদিন ধরে মজুরি বৃদ্ধির মূল মাধ্যম ছিল শুন্তো বা বসন্তকালীন মজুরি আলোচনার প্রক্রিয়া। কিন্তু এখন চাকরি পরিবর্তনের মাধ্যমে কর্মীরা দ্রুত মজুরি বৃদ্ধি পাচ্ছেন। ২০২১ সালে যেখানে এক-তৃতীয়াংশ চাকরি বদলানো কর্মী ১০ শতাংশের বেশি বেতন বৃদ্ধি পেয়েছিলেন, ২০২৪ সালে এই হার দাঁড়িয়েছে প্রায় ৪০ শতাংশে।

বিজ্ঞাপন

বিশেষজ্ঞদের মতে, চাকরি পরিবর্তনের প্রবণতা জাপানের অর্থনীতিতে নতুন গতিশীলতা আনতে পারে। দীর্ঘদিন ধরে একই প্রতিষ্ঠানে কাজ করা কর্মীরা প্রথাগত মানসিকতায় আটকে থাকেন, যা নতুন উদ্ভাবনের পথে বাধা সৃষ্টি করে। কিন্তু এখন চাকরির বাজারে নতুন বাতাস বইছে।

কেএএ/

বিজ্ঞাপন