ভিডিও EN
  1. Home/
  2. আন্তর্জাতিক

ভারতে নেপালি শিক্ষার্থীর মৃত্যু ঘিরে উত্তেজনা, কূটনৈতিক টানাপোড়েন

আন্তর্জাতিক ডেস্ক | প্রকাশিত: ০৫:৪১ পিএম, ১৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৫

ভারতের উড়িষ্যায় অবস্থিত কালিঙ্গা ইনস্টিটিউট অব ইন্ডাস্ট্রিয়াল টেকনোলজি (কেআইআইটি) বিশ্ববিদ্যালয়ের বাৎসরিক উৎসব চলাকালে এক নেপালি শিক্ষার্থীর মরদেহ উদ্ধারকে কেন্দ্র করে ব্যাপক উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়েছে। ২০ বছর বয়সী প্রকৃতি লামসালের মৃত্যু ঘিরে ওঠা অভিযোগ, গ্রেফতার, কূটনৈতিক অস্থিরতা ও শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভের ঘটনায় প্রভাব পড়েছে ভারত-নেপাল সম্পর্কেও।

কী ঘটেছিল?

গত রোববার বিকেলে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রাবাস থেকে প্রকৃতি লামসালের মরদেহ উদ্ধার করা হয়। তিনি কেআইআইটিতে কম্পিউটার সায়েন্সের তৃতীয় বর্ষের ছাত্রী ছিলেন। প্রথমদিকে পুলিশ এটিকে আত্মহত্যা হিসেবে ধরে নিলেও ঘটনা দ্রুতই বিক্ষোভে রূপ নেয়।

বিজ্ঞাপন

বিজ্ঞাপন

নেপালি শিক্ষার্থীদের দাবি, প্রকৃতি লামসাল দীর্ঘদিন ধরে সহপাঠী আদ্বিক শ্রীবাস্তবের মাধ্যমে মানসিক ও শারীরিক নির্যাতনের শিকার হচ্ছিলেন। ২১ বছর বয়সী আদ্বিক উত্তর প্রদেশের লখনৌয়ের বাসিন্দা। গত সোমবার তাকে ভুবনেশ্বর বিমানবন্দর থেকে আটক করা হয় এবং আত্মহত্যায় প্ররোচনার অভিযোগে তার বিরুদ্ধে মামলা করা হয়।

আরও পড়ুন>>

বিজ্ঞাপন

বিজ্ঞাপন

এর মধ্যে একটি অডিও ক্লিপ ছড়িয়ে পড়লে ক্ষোভ আরও বাড়ে। অডিওতে এক ব্যক্তি এক নারীকে গালাগাল করছেন এবং তাকে জোর করে ‘অপমানজনক’ কথা বলাতে বাধ্য করছিলেন। এই অডিওটি প্রকৃতি ও আদ্বিকের বলে দাবি করা হলেও এনডিটিভি এটি স্বাধীনভাবে যাচাই করতে পারেনি।

প্রকৃতির মরদেহ অল ইন্ডিয়া ইনস্টিটিউট অব মেডিকেল সায়েন্সেস (এআইআইএমএস) ভুবনেশ্বর-এ ময়নাতদন্তের পর তার পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়। মরদেহ মঙ্গলবার নেপালে পাঠানো হয়।

বিজ্ঞাপন

নেপালি শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে দমন-পীড়ন

প্রকৃতির মৃত্যুর জেরে নেপালি শিক্ষার্থীরা ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ শুরু করলে কেআইআইটি কর্তৃপক্ষ আলোচনার বদলে বলপ্রয়োগের পথ নেয়। নিরাপত্তারক্ষী ও বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মকর্তারা শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা চালান বলে অভিযোগ ওঠে, যার ভিডিও দ্রুতই ছড়িয়ে পড়ে।

কিছু ভিডিওতে দেখা যায়, বিশ্ববিদ্যালয়ের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তারা নেপালের অর্থনীতি নিয়ে অবমাননাকর মন্তব্য করছেন। একজন কর্মকর্তা দাবি করেন, কেআইআইটির বাজেট নেপালের মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) চেয়েও বেশি!

এরপর হঠাৎ করেই কেআইআইটি কর্তৃপক্ষ সব নেপালি শিক্ষার্থীকে বিশ্ববিদ্যালয় ছাড়ার নির্দেশ দেয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের এক বিবৃতিতে বলা হয়, সব নেপালি শিক্ষার্থীর জন্য বিশ্ববিদ্যালয় অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করা হলো। ১৭ ফেব্রুয়ারির মধ্যে তাদের ক্যাম্পাস ছাড়তে হবে।

বিজ্ঞাপন

বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন কোনো ব্যাখ্যা ছাড়াই শিক্ষার্থীদের বাসে তুলে কটকের রেলস্টেশনে নামিয়ে দেয়। এক শিক্ষার্থী বলেন, তারা আমাদের কিছু জানায়নি, শুধু বললো চলে যেতে।

সরকারের হস্তক্ষেপ

প্রকৃতির মৃত্যু ও পরবর্তী পরিস্থিতি নিয়ে মঙ্গলবার উড়িষ্যার রাজ্য সরকার তিন সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছে। অতিরিক্ত মুখ্যসচিবের (গৃহবিভাগ) নেতৃত্বে উচ্চশিক্ষা ও নারী ও শিশু উন্নয়ন দপ্তরের কর্মকর্তারা এই তদন্ত করবেন।

রাজ্যের উচ্চশিক্ষামন্ত্রী সূর্যবংশী সুরজ জানিয়েছেন, কেআইআইটি কর্তৃপক্ষ শিক্ষার্থীদের জোর করে বের করে দেওয়ার ঘটনা সম্পর্কে সরকারকে কিছু জানায়নি। তিনি বলেন, প্রায় ৮০০ নেপালি শিক্ষার্থী ক্যাম্পাস ছেড়েছেন, ১০০ জন এখনো রয়ে গেছেন।

বিজ্ঞাপন

গ্রেফতার ও আইনি ব্যবস্থা

প্রকৃতির মৃত্যুর ঘটনায় ও বিক্ষোভ দমনের অভিযোগে এ পর্যন্ত মোট ছয়জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এর মধ্যে কেআইআইটির তিন শীর্ষ কর্মকর্তাও রয়েছেন। তারা হলেন ডিরেক্টর জেনারেল (এইচআর) শিবানন্দ মিশ্র, ডিরেক্টর (অ্যাডমিন) প্রতাপ কুমার চমুপতি এবং হোস্টেল ডিরেক্টর সুধীর কুমার রাথ।

এছাড়া, নিরাপত্তারক্ষী যোগেন্দ্র বেহেরা ও রামকান্ত নায়ককেও গ্রেফতার করা হয়েছে।

কূটনৈতিক টানাপোড়েন

কেআইআইটির যে দুই কর্মকর্তা- মঞ্জুষা পান্ডে ও জয়ন্তী নাথ- নেপাল সম্পর্কে অবমাননাকর মন্তব্য করেছিলেন, তুমুল বিতর্কের মুখে তারা শেষ পর্যন্ত প্রকাশ্যে ক্ষমা চান। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষও দুঃখ প্রকাশ করে এবং দুই কর্মকর্তাকে বরখাস্ত করে।

বিজ্ঞাপন

তবে নেপাল সরকার এই ঘটনায় তীব্র প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে। নেপালের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় একে ‘অগ্রহণযোগ্য’ বলে উল্লেখ করেছে এবং বলেছে, ন্যায়বিচার নিশ্চিত না হলে উড়িষ্যার বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে নেপালি শিক্ষার্থীদের পড়াশোনার অনুমতি (এনওসি) দেওয়া বন্ধ করা হবে।

নেপালের প্রধানমন্ত্রী কেপি শর্মা ওলি বিষয়টি সরাসরি পর্যবেক্ষণ করছেন এবং দূতাবাসের মাধ্যমে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে বলে জানিয়েছেন।

বিষয়টি নিয়ে উড়িষ্যার বিধানসভাতেও উত্তপ্ত আলোচনা হয়েছে। সেখানে সব দলের বিধায়করা ঘটনার তীব্র নিন্দা জানিয়েছেন। এক কংগ্রেস বিধায়ক বলেন, এই ঘটনা রাজ্যের সুনাম নষ্ট করেছে, এটি মেনে নেওয়া যায় না।

বিজ্ঞাপন

সূত্র: এনডিটিভি
কেএএ/

বিজ্ঞাপন