ভিডিও EN
  1. Home/
  2. স্বাস্থ্য

শীতে গোসলের গরম পানিতে পুড়ছে শিশুরা, ভুক্তভোগী নারীরাও

আবদুল্লাহ আল মিরাজ | প্রকাশিত: ১২:৫৮ পিএম, ০৬ জানুয়ারি ২০২৫

সারা বছরই আগুন ও দুর্ঘটনায় পুড়ে রোগীরা চিকিৎসা নিতে আসেন রাজধানীর জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে। কিন্তু শীতের মৌসুমে সবচেয়ে বেশি রোগী আসে গরম পানিতে দগ্ধ হয়ে, ঘর বা খড়ের স্তূপে আগুন লেগে নয়তো আগুন পোহাতে গিয়ে দগ্ধ হয়ে।

হাসপাতালে কর্মরত নার্সরা জানান, শীতকালে ঘরে পোড়া রোগীর সংখ্যা বাড়ে। এর মূল কারণ হলো- ঠান্ডা থেকে বাঁচতে গরম পানি দিয়ে গোসল করা হয়। কিংবা বাইরে আগুন জ্বালিয়ে উষ্ণতা নিতে গিয়ে সেখানে লাগা আগুন থেকেও প্রায়ই দুর্ঘটনা ঘটে। এসব দুর্ঘটনায় সবচেয়ে বেশি পড়ে শিশুরা।

জাতীয় বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটের জরুরি বিভাগ ও বহির্বিভাগে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, পোড়া ও দুর্ঘটনার শিকার রোগীদের আর্তনাদ। জরুরি বিভাগে অধিকাংশ রোগী গরম পানি কিংবা আগুনে পুড়ে হাসপাতালে এসেছেন।

ইনস্টিটিউটের প্রধান গেট দিয়ে ঢুকলেই প্রথমে পড়ে টিকিট কাউন্টার। সেখানে সকাল থেকেই রোগীদের ভিড়। আউটডোরে সকাল ৮টা থেকে দুপুর ২টা পর্যন্ত চিকিৎসা দেওয়া হয়। নিচতলায় টিকিট কাউন্টারের বাঁ দিকে একটু ভেতরে আছে জরুরি বিভাগ। সেখানে ২৪ ঘণ্টাই রোগীরা এসে চিকিৎসা নিতে পারেন।

হাসপাতালের জরুরি বিভাগের একটি বেডে ছেলে নূর মোহাম্মদকে বুকে নিয়ে রেখেছেন তার বাবা শাহ আলম। নূর মোহাম্মদের বয়স দুই বছর আট মাস। তার মাথার ওপর থেকে মুখ ও পিঠ গরম পানিতে ঝলসে গেছে। ক্ষতস্থানে লাগানো হয়েছে ওষুধ। আর নাক দিয়ে লাগানো হয়েছে নল। এ নলের মাধ্যমেই খাওয়ানো হচ্ছে স্যুপ ও পানি।

বাবা শাহ আলম জাগো নিউজকে জানান, রাজধানীর খিলক্ষেত এলাকার একটি বাসায় থাকেন তারা। ঘটনার দিন সামনে উপস্থিত ছিলেন তার মা ও চাচি। তার দাদি গোসলের জন্য গরম পানি করছিলেন পাতিলে। সেই পানি নিয়ে বাথরুমে যাওয়ার সময় নূর মোহাম্মদের গায়ের ওপর পড়ে। এ অবস্থায় পরিবারের সদস্যরা দ্রুত তাকে বার্ন ইনস্টিটিউটে নিয়ে আসে।

শাহ আলম বলেন, ‘এ হাসপাতালে বিনা মূল্যে অনেক ভালো চিকিৎসা দিচ্ছে। এখানকার সেবায় আমি সন্তুষ্ট। শুধু শরীরে লাগানোর জন্য একটি লোশন ছাড়া বাকি ওষুধ দিচ্ছে। বেডের টাকাও লাগছে না।’

বার্ন ইনস্টিটিউটের দেওয়া তথ্যে জানা যায়, নূর মোহাম্মদের মতো রোগীর সংখ্যাই বেশি। হাসপাতালের জরুরি বিভাগে ২০২৪ সালে ১৪ হাজার ৪০২ জন রোগী চিকিৎসা নিয়েছেন। যার মধ্যে আগস্টে এক হাজার ১৩ জন, সেপ্টেম্বরে ৯২০ জন, অক্টোবরে ৭৪৭ জন, নভেম্বরে ৮২৭ জন ও ডিসেম্বরে ৮৪৪ জন। এদের মধ্যে পোড়া ও প্লাস্টিক সার্জারির রোগীও রয়েছে।

হাসপাতালের তথ্যে আরও জানা যায়, শীতে দুর্ঘটনা বাড়ায় গড়ে ২৫ থেকে ৩০ জন রোগী প্রতিদিন ভর্তি হচ্ছেন। ২১ ও ২২ ডিসেম্বর দুদিনে চিকিৎসা নিয়েছেন ৮১৬ জন। অর্থাৎ গড়ে প্রতিদিন চার শতাধিক রোগী চিকিৎসা নিচ্ছেন। ইনস্টিটিউটের ২০ শয্যার আইসিইউ, ২৭ শয্যার পুরুষ এইচডিইউ এবং ৩০ শয্যার নারী এইচডিইউ'র প্রায় সবই রোগীতে পূর্ণ। যাদের মধ্যে ৬০ শতাংশই শিশু ও নারী।

আরও পড়ুন: বাবা-মা ও ছোট ভাইয়ের পর আব্দুল্লাহও না ফেরার দেশে

ইনস্টিটিউটের জরুরি বিভাগের আবাসিক চিকিৎসক ডা. শাওন বিন রহমান জাগো নিউজকে বলেন, দেশে প্রথমত ইলেকট্রিক বার্ন অর্থাৎ বৈদ্যুতিক শর্টসার্কিট থেকে অগ্নিদুর্ঘটনার শিকার হন বেশি। দ্বিতীয়ত স্ক্যাল্ব বার্ন তথা গরম পানি, গরম তেল বা গরম কোনো তরল পদার্থে পুড়ে। যেটি শীতকালে বেশি ঘটে। তৃতীয়ত ফ্লেম বার্ন তথা সরাসরি আগুনের সংস্পর্শে পুড়ে থাকে, যেমন: মোমবাতি, কেরোসিন বাতি, চুলা বা অন্যভাবে শাড়ি, ওড়না, জামা-পায়জামা বা পরিধেয় বস্ত্রে আগুন লাগা। চতুর্থত কেমিক্যাল বার্ন তথা দাহ্য পদার্থ জাতীয় রাসায়নিকে পুড়ে থাকেন।

তিনি বলেন, এখন শীতকাল হওয়ায় গরম পানি, গরম তেলে পোড়া রোগী বাড়ছে। এছাড়া তাপ পোহাতে খড়কুটোয় আগুন ধরানোর পর তা আশপাশে ছড়িয়ে অনেক সময় বড় দুর্ঘটনাও ঘটে। এ সময়ে সবাইকে সতর্ক থাকার পরামর্শ দিয়েছেন তিনি।

এএএম/এমএইচআর/এমএমএআর/