নবম গ্রেডের ভাতা-সুবিধা চান পোস্ট গ্র্যাজুয়েট ট্রেইনি চিকিৎসকরা
সরকারি সুযোগ-সুবিধাসহ ‘নবম গ্রেডে’ বেতন-ভাতা চালুর দাবি জানিয়েছে পোস্ট গ্রাজুয়েশন কোর্সে থাকা ডাক্তাররা। সহসা এই দাবি বাস্তবায়িত না হলে কর্মবিরতিসহ কঠোর কর্মসূচির ঘোষণা দিয়েছেন তারা।
মঙ্গলবর (১০ ডিসেম্বর) রাজধানীর সেগুনবাগিচাস্থ বাংলাদেশ ক্রাইম রিপোর্টার্স অ্যাসোশিয়েসন (ক্র্যাব) কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এ দাবি জানান পোস্ট গ্রাজুয়েড প্রাইভেট ট্রেইনি চিকিৎসকরা।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পোস্ট গ্রাজুয়েশন ট্রেইনি ডাক্তার ও ডাক্তার মুভমেন্ট ফর জাস্টিসের সাধারণ সম্পাদক ডা. নুরুন্নবী।
তিনি বলেন, মানুষের মৌলিক অধিকার ৫টি-খাদ্য, বস্ত্র, বাসস্থান, শিক্ষা ও চিকিৎসা। লক্ষ্য করলে দেখবেন, প্রথম চারটি অধিকার কখনোই বিনামূল্যে পাওয়া যায় না এবং কোনো মানুষ সেটার দাবিও করেন না। কিন্তু চিকিৎসা আমরা সবাই বিনামূল্যেই আশা করি। অথচ বিনামূল্যে ইঞ্জিনিয়ার বা উকিল কেউ সেবা দেন না। দিন শেষে আমরা কেউ কিছু বিনামূল্যে না পেলেও চিকিৎসা ব্যয়টুকু বিনামূল্যে খুঁজি আর সেটা না পেলেই ডাক্তাররা কসাই শুনতে হয়!
তিনি বলেন, এমবিবিএস হলো সর্বজন স্বীকৃত একটি অনন্য ডিগ্রি। দীর্ঘ ৫-৬ বছর সময় ধরে মানব দেহের ভেতরে প্রতিটি মূহর্তে ঘটতে থাকা রাসায়নিক ক্রিয়া-বিক্রিয়া থেকে শুরু করে প্রতিটি অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ নিয়ে বিশদভাবে পড়াশোনা করা হয় এই এমবিবিএস ডিগ্রিতে। দীর্ঘ ৫ বছরে প্রায় হাজার খানেক পরীক্ষা নেওয়া হয়।
- আরও পড়ুন
- আরও ২ দিনের কর্মবিরতিতে পোস্ট গ্র্যাজুয়েট ট্রেইনি চিকিৎসকরা
- বকেয়া ভাতার দাবিতে বিসিপিএসে প্রশিক্ষণার্থী চিকিৎসকরা
ডা. নুরুন্নবী আরও বলেন, যে কোনো সরকারি হাসপাতাল, বড় বড় সরকারি ইন্সটিটিউট, সরকারি মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল গুলোতে রাত দিন এক করে অক্লান্ত সেবা দিয়ে যাচ্ছেন ট্রেইনি চিকিৎসকরা। এমবিবিএস পাস করে আরও ৮/১০ বছর পর্যন্ত একাধিক ডিগ্রি নিতে অনেক গঞ্জনা সইতে হয় পোস্ট গ্রাজুয়েড ট্রেইনি চিকিৎসকদের।
সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পোস্ট গ্রাজুয়েড প্রাইভেট ট্রেইনি চিকিৎসক ইমরান সিকদার বলেন, বাংলাদেশে বর্তমানে কয়েকটি পোস্ট গ্রাজুয়েশন কোর্স চালু আছে। রেসিডেন্সি, নন-রেসিডেন্সি, এফসিপিএস এদের মধ্যে বিশ্বজনীন ও উল্লেখযোগ্য। প্রতি বছর নির্দিষ্ট সময়ে পরীক্ষা হয় এবং আবেদন ফরমের দাম পরীক্ষা ভেদে ৬ থেকে ১১/১৫ হাজার। কেউ ২-৩ বছরে চান্স পায় কেউ ১০-১২ বছরও পায় না। ভর্তি পরীক্ষা পাস করে ভর্তি হতে হয় কোর্সভেদে ৫০ হাজার থেকে ২ লাখ পর্যন্ত টাকা দিয়ে। এই সময়টায় একজন ডাক্তারের ক্যারিয়ার থেমে থাকলেও থেমে থাকে না বয়স। বৃদ্ধ বাবা মা, স্বামী-স্ত্রী, সন্তান, তাদের ভরণপোষণ সবই চলতে থাকে সমানতালে।
শর্ত অনুযায়ী, একজন পোস্ট গ্রাজুয়েশন কোর্সে থাকা ডাক্তার তার কোর্সের বাইরে কোথাও চাকুরি করতে পারবেন না। এই ডাক্তারদের মাসিক ভাতার শুরুটা হযেছিল ১০ হাজার টাকা দিয়ে ২০১০ সালে। কয়েকবার কয়েক দফায় এই ডাক্তারগুলো আন্দোলন করে আজ মাসিক ভাতা ২৫ হাজার টাকা। ঢাকা শহরে চাকরি সূত্রে যারা থাকেন তারা হয়তো জানেন এই টাকায় ঢাকার মতো শহরে থেকে খেয়ে নিজের পরিবার খরচ চালানো কতটা দায়। যাদের শুধু বই নিয়ে রোগী নিয়ে ব্যস্ত থাকার কথা ছিল। তাদের সারাক্ষণ ভাবতে হয় পরিবার কীভাবে চলবে?
তিনি বলেন, আমরা চাই দ্রুত বৈষম্য দূর হোক। আমাদের পোস্ট গ্রাজুয়েশন কোর্সের যে ডাক্তাররা আছেন তাদের অবিলম্বে বেতন-ভাতাসহ সুযোগ-সুবিধাদি যেন ৯ম গ্রেড অনুযায়ী ধার্য্য করা হয়। এটা আমাদের যৌক্তিক দাবি। ২৫ হাজার টাকা থেকে ৯ম গ্রেডে উত্তীর্ণ করা হোক। আমরা মেডিকেল অফিসার সমমর্যাদা চাই।
পোস্ট গ্রাজুয়েশন কোর্সে থাকা এ চিকিৎসক বলেন, ডিএমজে সোসাইটি (ডক্টরস মুভমেন্ট ফর আস্টিম সোসাইটি) নামক সংগঠন হয়েছে। সংগঠনের হয়ে ভাতা সরকারি সুযোগ-সুবিধাসহ নবম গ্রেডে উত্তীর্ণ করার দাবি আমরা জানিয়ে আসছি। আমাদের প্রস্তাবনা মন্ত্রণালয়ে আছে। আমাদের দাবি যদি সহসা বাস্তবায়ন করা হয় তাহলে হলে কর্মবিরতিসহ কঠোর কর্মসূচির হুমকি দেয়া হবে।
এসময় আরও উপস্থিত ছিলেন ডক্টরস মুভমেন্ট ফর জাস্টিসের সহ সভাপতি ডা. ইমরান, সহ সভাপতি ডা. ফরহাদ, যুগ্ম সম্পাদক ডা. সালমান এবং যুগ্ম সম্পাদক ডা. মো. মেজবাহ।
টিটি/এমআইএইচএস/এএসএম