বিএসএমএমইউতে পদোন্নতি বঞ্চিত ৪৫ চিকিৎসকের অবস্থান কর্মসূচি
উচ্চতর ডিগ্রি নেওয়ার পরও দেড় যুগ ধরে পদোন্নতি বঞ্চিত হওয়ার অভিযোগ করেছেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) ৪৫ চিকিৎসক। তারা জানান, ২০০৩-২০০৪ সালে নিয়োগপ্রাপ্ত ২০০ চিকিৎসকের কোনো পদোন্নতি হয়নি। সাম্প্রতি তাদের পদায়নে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ থেকে নির্দেশের এক মাস পার হলেও তা কার্যকরে গড়িমসির অভিযোগ করেছেন ভুক্তভোগী চিকিৎসকরা।
মঙ্গলবার (৯ জুলাই) বিশ্ববিদ্যালয়ের উপচার্যের কার্যালয়ে অবস্থান কর্মসূচিতে ভুক্তভোগী চিকিৎসকরা এসব অভিযোগ করেন।
অবস্থান কর্মসূচিতে ডা. কাজী কামরুল ইসলাম বলেন, বিএসএমএমইউর পদোন্নতি বঞ্চিত ৪৫ জন চিকিৎসককে পদায়ন করতে সুপ্রিমকোর্টের আপিল বিভাগ নির্দেশ দিলেও বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন তা কার্যকর করতে গড়িমসি করছে। এরই মধ্যে রায়ের এক মাস পার হয়ে গেছে। কিন্তু আদেশ বাস্তবায়ন না হওয়ায় হতাশ হয়ে পড়েছেন দেড় যুগের বেশি সময় পদোন্নতিবঞ্চিতরা।
মেডিকেল অফিসার মাহবুব জাকির বলেন, ‘আমরা ২১ বছরেও পদোন্নতি পেলাম না। অথচ আমাদের শিক্ষার্থীরাও সহযোগী অধ্যাপক হয়ে গেছেন। আমরা স্ব বেতনে অ্যাসিস্ট্যান্ট অফিসার হতে চাইলেও দিচ্ছে না। রাজনৈতিক প্রতিহিংসা থেকেই এমনটা করা হয়েছে।’
রিটকারী চিকিৎসকরা ২০০৩ থেকে ২০০৬ সালের মধ্যে মেডিকেল অফিসার হিসেবে নিয়োগ পান। পরে তারা সংশ্লিষ্ট বিষয়ে এমডি, এমএস, এফসিপিএস, এমআরসিএস, এমআরসিপি, এমফিলসহ উচ্চতর ডিগ্রি অর্জন করেন। এই তালিকায় বিএসএমএমইউর মেডিসিন, কার্ডিওলজি, রিউমাটোলজি, হেমাটোলজি, ফিজিকাল মেডিসিন, নেফ্রোলজি, জেনারেল সার্জারি, কোলোরেক্টাল সার্জারি, নিউরোসার্জারি, অর্থোপেডিক সার্জারি, কার্ডিয়াক সার্জারি, শিশু সার্জারি, ইএনটি, গাইনি অ্যান্ড অবস, অ্যানেস্থেসিয়া, ল্যাবরেটরি মেডিসিন, প্রোস্থোডন্টিক্সসহ ৫৪টি বিভাগের প্রায় দুই শতাধিক বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক রয়েছেন। যারা যোগদানের পর থেকে একই পদে (মেডিকেল অফিসার হিসাবে) রয়েছেন। অল্প কিছু সংখ্যাক কনসাল্টেন্ট হিসেবে পদোন্নতি পেয়েছেন। কিন্তু যোগ্যতা থাকা সত্তেও এই বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের সহকারী অধ্যাপক হিসেবে পদায়ন অথবা পদোন্নতি কোনটাই দেওয়া হচ্ছে না।
পদোন্নতির দাবিতে ২০১৯ সালের ১ ডিসেম্বর আন্দোলনে নামেন এসব চিকিৎসকরা। তারা তৎকালীন উপাচার্যকে স্মারকলিপিও দেন। সবশেষ ২০২১ সালে উপাচার্য বরাবর স্মারকলিপি দেওয়া ও মৌন মিছিল কর্মসূচি পালন করেন। এরপরও বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ তাদের দাবির প্রতি সুবিচার করেনি বরং বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়ম ভঙ করে যোগ্য বিভাগীয় প্রার্থী থাকার পরও বাইরে থেকে ব্যাপক দুর্নীতির মাধ্যমে সহকারী অধ্যাপক নিয়োগ দিয়েছেন বলে অভিযোগ ভুক্তভোগী চিকিৎসকদের।
তারা জানান, এমন পরিস্থিতিতে বঞ্চিত ৪৫ জন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক পদোন্নতির দাবিতে উচ্চ আদালতে রিট করেন। হাইকোর্ট ২০২৩ সালের ১৩ ডিসেম্বর আবেদনকারী চিকিৎসকদের সহকারী অধ্যাপক পদে পদায়ন করে ১৯৯৯ সালের বিধি মেনে সহকারী অধ্যাপক পদে নিয়মিত নিয়োগ দিতে নির্দেশ দেন। ১৪ ফেব্রুয়ারি আদেশের সার্টিফায়েড কপি প্রকাশ করা হয়। ১৭ ফেব্রুয়ারি পদোন্নতি বঞ্চিতরা বিএসএমএমইউ কর্তৃপক্ষের কাছে সেই রায়ের কপিসহ পদায়নের জন্য আবেদনপত্র জমা দেন। এরপর ৩ মাসের বেশি সময় পর বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে উচ্চ আদালতে আপিল করেন।
গত ৩ জুন ২০২৪ প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বে আপিল বিভাগের ফুল বেঞ্চ রিটকারী চিকিৎসকদের সহকারী অধ্যাপক পদে অবিলম্বে পদায়ন করার হাইকোর্টের আদেশ বহাল রেখে নির্দেশনাসহ রিট নিষ্পত্তি করে।
তবে এরপরও চিকিৎসকদের পদায়ন করা হয়নি জানিয়ে চিকিৎসকরা বলেন, আপিল বিভাগের রায়ের পরও কর্তৃপক্ষ পদায়ন না করে টালবাহানা করছেন। আপিল নিষ্পত্তির কার্যাদেশ অনুযায়ী অবিলম্বে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে রিটকারী চিকিৎসকদের সহকারী অধ্যাপক পদে পদায়ন করে রায় কার্যকর করতে হবে। আদেশ অনুযায়ী দ্রুত রায় কার্যকর না করলে তা আদালত অবমাননার শামিল হবে।
তাদের প্রতি অবিচার হয়েছে দাবি করে এসব চিকিৎসক বলেন, আমাদের অনেকেরই চাকরি শেষের দিকে। অনেকের সন্তান এই বিশ্ববিদ্যালয় স্নাতকোত্তর ডিগ্রিও গ্রহণ করছে। এটি আমাদের জন্য অত্যন্ত বিব্রতকর।
এএএম/এমআইএইচএস/এমএস