ভিডিও EN
  1. Home/
  2. স্বাস্থ্য

চট্টগ্রাম মেডিকেল

হাসপাতালের বিভিন্ন স্তরে দালালচক্র, র‍্যাবের অভিযানে ধরা ৩৮

নিজস্ব প্রতিবেদক | চট্টগ্রাম | প্রকাশিত: ০৭:৩৬ পিএম, ২০ মার্চ ২০২৪

#চমেক হাসপাতালে ভর্তি থেকে মৃত্যু, সবক্ষেত্রেই আছে দালাল সিন্ডিকেট
#বেসরকারি হাসপাতালে রোগী নিয়ে গেলে মেলে কমিশন

চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালে অভিযান চালিয়ে ৩৮ দালালকে আটক করেছে র‍্যাব-৭ এর ভ্রাম্যমাণ আদালত। অভিযানে হাসপাতালের বিভিন্ন স্তরে একাধিক দালালচক্রের তথ্য পেয়েছে র‍্যাব। বুধবার (২০ মার্চ) সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত টানা এই অভিযান পরিচালিত হয়।

অভিযানে আটক ২৪ জনকে এক মাসের সশ্রম কারাদণ্ড ও ৫ হাজার টাকা জরিমানা, অনাদায়ে আরও ১৫ দিনের সশ্রম কারাদণ্ড দেন ভ্রাম্যমাণ আদালত। এছাড়া বাকি ১৪ জনকে ১০ হাজার টাকা জরিমানা, অনাদায়ে এক মাসের সশ্রম কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে।  

র‍্যাব-৭ চট্টগ্রামের অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল মো. মাহবুব আলম বলেন, ‘সাদা পোশাকে র‍্যাবের টিম হাসপাতালের বিভিন্ন ওয়ার্ডে অভিযান চালায়। এসময় সন্দেহভাজন ৩৯ জনকে আটক করা হয়। এদের মধ্যে যাচাই-বাছাই শেষ একজনকে ছেড়ে দেওয়া হয়। বাকিদের অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় দণ্ডিত করা হয়।’

র‍্যাবের অভিযানে চট্টগ্রামে সরকারি হাসপাতালে যেভাবে অসুস্থ ও নিরুপায় রোগীদের হয়রানি করা হয় সে বিষয়গুলো উঠে এসেছে। যেখানে দেখা গেছে, শুধু কমিশনের জন্য একজন রোগী হাসপাতালে আসার পর ভর্তি থেকে শুরু করে মৃতের পরিবহনসহ সবক্ষেত্রে রোগী ও স্বজনদের দুর্বলতার সুযোগ নিয়ে কমিশন বাণিজ্য করে আসছে একাধিক দালাল চক্র।

পেশাদার দালালচক্র

জেলা ও উপজেলা হাসপাতাল এলাকায় গড়ে ওঠা বেসরকারি ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারগুলোর মালিকপক্ষ এলাকার স্থানীয় প্রভাবশালী ব্যক্তি, সিএনজি অটোরিকশা এবং ইজিবাইক চালকদের নিয়ে দালালচক্র তৈরি করে থাকে। প্রায় প্রতিটি সরকারি হাসপাতালেই দালালচক্রের প্রভাব লক্ষণীয়। দালালরা সরকারি হাসপাতালের চিকিৎসাব্যবস্থার অপ্রতুলতার কথা বলে রোগীদের বেসরকারি ডায়াগনস্টিক সেন্টার ও হাসপাতালে নিয়ে যায়। এছাড়াও চিকিৎসকরা রোগীদের পরীক্ষা-নিরীক্ষা দিলে সেগুলো দ্রুত করিয়ে দেওয়ার প্রলোভন দেখিয়ে এবং কমিশন পাওয়ার আশায় বিভিন্ন কৌশলে বেসরকারি ডায়াগনস্টিক সেন্টার নিয়ে যাচ্ছে।

চট্টগ্রাম মেডিকেল

শয্যা ও ওয়ার্ড সিন্ডিকেট

প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে আসা সাধারণ রোগীরা ভর্তি হওয়ার পর তারা পদে পদে বাধাগ্রস্ত হন। প্রথমেই জরুরি মুহূর্তে রোগীকে রোগী বহনের ট্রলি থেকে শুরু করে শয্যা ও ওয়ার্ড পাইয়ে দেওয়ার কথা বলে দালালরা একটা নির্দিষ্ট পরিমাণ অর্থ হাতিয়ে নেন।

দুরারোগ্য রোগের ভীতি সঞ্চার

দালালরা হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য রোগী আসার পরপরই রোগীর মধ্যে একটা ভীতি সঞ্চারের চেষ্টা করেন। ভুক্তভোগী রোগীকে তার প্রকৃত রোগের কথা বাড়িয়ে তাকে মরণব্যাধি ক্যানসার বা টিউমার বা অন্য কোনো বড় ধরনের রোগের কথা বলে বেসরকারি কোনো ক্লিনিক বা ডায়াগনস্টিক সেন্টারে নিয়ে যান এবং সেখানে ভর্তি করান। ফলে রোগীরা সরকারি হাসপাতালের বিনামূল্যের চিকিৎসা ও স্বল্পমূল্যে পরীক্ষা-নিরীক্ষা থেকে বঞ্চিত হন। এতে অধিক অর্থ ব্যয় করে স্বজনরা যেমন সর্বস্বান্ত হয়ে বাড়ি ফেরেন, তেমনি দালালদের প্রলোভনে পরে মানহীন হাসপাতালে সু-চিকিৎসার অভাবে অনেক সময় রোগীর মৃত্যুও হয়।

অ্যাম্বুলেন্স সিন্ডিকেট

হাসপাতালে সরকারি অ্যাম্বুলেন্স থাকলেও তার অপ্রতুলতার গুজব ছড়িয়ে সিন্ডিকেটকারীরা দ্রুত অ্যাম্বুলেন্সের ব্যবস্থা করে দেবেন কথা দিয়ে ব্যক্তিমালিকানাধীন অ্যাম্বুলেন্স বেশি টাকায় ভাড়া দেন। এমনকি চিকিৎসাধীন কোনো রোগী এক হাসপাতাল থেকে অন্য হাসপাতালে উন্নত চিকিৎসার জন্য স্থানান্তর করার প্রাক্কালে এবং কোনো রোগী মৃত্যুবরণ করলেও হাসপাতাল থেকে তার লাশ বহনেও সিন্ডিকেট করে অতিরিক্ত অর্থ হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগ রয়েছে এই দালালচক্রের বিরুদ্ধে।

চট্টগ্রাম মেডিকেল

পরীক্ষা-নিরীক্ষা সিন্ডিকেট

হাসপাতালের চিকিৎসক কর্তৃক রোগীদের রোগ নির্ণয়ের জন্য বিভিন্ন পরীক্ষা-নিরীক্ষা দিলে সেগুলো দ্রুত করিয়ে দেওয়ার প্রলোভন দেখিয়ে এবং কমিশন পাওয়ার আশায় বিভিন্ন কৌশলে দালালরা তাদের চুক্তিভিত্তিক বেসরকারি ডায়াগনস্টিক সেন্টার নিয়ে যান।

ওষুধ বাণিজ্য সিন্ডিকেট

সরকারি হাসপাতাল থেকে চিকিৎসা শেষে রোগীদের বিনামূল্যে সরকার কর্তৃক সরবরাহকৃত ওষুধ নেওয়া থেকে পথভ্রষ্ট করে স্বল্পমূল্যে উন্নতমানের ওষুধ ক্রয় করে দেওয়ার প্রলোভন দেখিয়ে তাদের কমিশনপ্রাপ্ত নির্দিষ্ট ফার্মেসিতে নিয়ে যায়। পরবর্তীতে ফার্মেসি কর্তৃক ওষুধের কৃত্রিম সংকট দেখিয়ে ঔষধের স্বাভাবিক মূল্যের চেয়ে অধিক মূল্যে বিক্রি করে থাকে।

আটক দালালদের জিজ্ঞাসাবাদে জানা গেছে, চমেক হাসপাতাল থেকে একজন রোগী নিয়ে আসতে পারলে দালালরা বেসরকারি হাসপাতালগুলো থেকে ২০০ থেকে ৫০০ টাকা এবং পরিস্থিতি ভেদে ৫ হাজার টাকা পর্যন্ত কমিশন পেয়ে থাকেন।

এএজেড/বিএ/জিকেএস