স্যালাইনের ভুল ব্যবহারে বাড়ছে শিশুদের কিডনি রোগ
স্যালাইনের ভুল ব্যবহারের কারণে শিশুদের মধ্যে কিডনি সমস্যা বাড়ছে বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশ শিশু হাসপাতাল ও ইনস্টিটিউটের শিশু কিডনি বিভাগের প্রধান অধ্যাপক শিরীন আফরোজ।
বৃহস্পতিবার (১৪ মার্চ) কিডনি দিবস উপলক্ষে শিশু হাসপাতালে এক অনুষ্ঠানে এ কথা বলেন তিনি। এ বিষয়ে অভিভাবকদের সচেতন থাকার পরামর্শ দেন।
অনুষ্ঠানে বক্তারা জানান, বিশ্বে কিডনি রোগী প্রতিনিয়ত বেড়েই চলেছে। সবশেষ পরিসংখ্যান অনুযায়ী সারা বিশ্বে প্রতি ৭ কোটি থেকে ১০ কোটি জনসংখ্যার মধ্যে ১০ শতাংশ দীর্ঘস্থায়ী কিডনি রোগে ভুগছে। আর বিশ্বে প্রায় ৮৫ কোটি জনসংখ্যা দীর্ঘস্থায়ী কিডনি রোগে আক্রান্ত।
বিভিন্ন সমীক্ষায় দেখা গেছে যে, বাংলাদেশের প্রাপ্তবয়স্ক লোকদের মধ্যে দীর্ঘস্থায়ী কিডনি রোগে আক্রান্ত প্রায় শতকরা ১৬-১৮ শতাংশ।
বক্তারা আরও জানান, শিশু কিডনি রোগের প্রাদুর্ভাবও কম নয়। বিশ্বে প্রতি ১০ লাখ শিশুর মধ্যে ১৫-৭৫ জন শিশু দীর্ঘস্থায়ী কিডনি রোগে ভুগছে। যা দিন দিন বেড়েই চলেছে। বাংলাদেশে শিশুদের মাঝে দীর্ঘস্থায়ী কিডনি রোগীর হার সঠিকভাবে জানা নেই। তবে বিভিন্ন হাসপাতালের সমীক্ষা অনুযায়ী তা ধারণা করা যায়। বাংলাদেশ শিশু হাসপাতাল ও ইনস্টিটিউটে বেডের সংখ্যা ৬৮২টি। এরমধ্যে শিশু কিডনি বিভাগের স্থায়ী বেডই ৪২টি।
শিশু হাসপাতালের তথ্য তুলে ধরে জানানো হয়, ২০২৩ সালের পরিসংখ্যানে দেখা যায়, হাসপাতালে মোট ভর্তি রোগীর ৪৩ হাজার ৯৬৭ জনের মধ্যে ৩ দশমিক ৬ শতাংশ বা এক হাজার ৫৯১ জন শিশু কিডনি রোগ নিয়ে ভর্তি হয়। যা ২০২২ সালের তুলনায় বেশি। শিশু কিডনি রোগীদের মধ্যে নেফ্রোটিক সিনড্রোম ৫১ শতাংশ, আকস্মিক কিডনি বিকল ১২ দশমিক ৮ শতাংশ, দীর্ঘস্থায়ী কিডনি বিকল ০ দশমিক ২ শতাংশ, কিডনির জন্মগত ত্রুটি ৫ দশমিক ১ শতাংশ। ২০২৩ সালের মোট ভর্তি শিশুর কিডনি রোগীর মধ্যে মৃত্যুর হার ছিল ৭ দশমিক ৫ শতাংশ।
বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা জানান, সঠিক সময়ে শিশুদের কিডনি রোগ নির্ণয় এবং এর চিকিৎসা ও নিয়মিত রোগীর ফলোআপ যদি করা যায়, তবে বয়সকালে কিডনি রোগের জটিলতা ও মৃত্যুহার কমানো সহজ। একবার কিডনি বিকল হয়ে গেলে বেঁচে থাকার একমাত্র উপায় কিডনি সংযোজন অথবা ডায়ালাইসিস। কিন্তু এই চিকিৎসা এতটাই ব্যয়বহুল যে, শতকরা ১০ জন রোগী তা বহন করতে পারে না।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে ছিলেন বাংলাদেশ শিশু হাসপাতাল ও ইনস্টিটিউটের ম্যানেজমেন্ট বোর্ড চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. মুহাম্মদ শহীদুল্লাহ। এছাড়া আরও ছিলেন হাসপাতালের পরিচালক অধ্যাপক ডা. জাহাঙ্গীর আলম, পেডিয়াট্রিক নেফ্রোলজী সোসাইটি অব বাংলাদেশের প্রাক্তন সভাপতি অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ হানিফ প্রমুখ।
এএএম/জেডএইচ/জিকেএস