ভিডিও EN
  1. Home/
  2. স্বাস্থ্য

জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে রোগব্যাধি বেড়ে যাচ্ছে: স্বাস্থ্যমন্ত্রী

নিজস্ব প্রতিবেদক | প্রকাশিত: ০৪:৫১ পিএম, ০৪ ডিসেম্বর ২০২৩

ডেঙ্গুসহ অন্যান্য ভেক্টর-বর্ন ডিজিজসমূহ বৃদ্ধির জন্য জলবায়ু পরিবর্তনই দায়ী বলে উল্লেখ করেছেন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণমন্ত্রী জাহিদ মালেক। তিনি বলেন, এ জলবায়ু পরিবর্তন ও এর ক্ষতিকর প্রভাব বিস্তারে বিশ্বের শক্তিশালী দেশগুলো দায় এড়াতে পারে না। এ কারণে জলবায়ু পরিবর্তনে ক্ষতি কমিয়ে নিতে বিশ্বের শক্তিশালী দেশগুলোকে সহযোগিতার হাত আরও প্রসারিত করতে হবে। পিছিয়ে থাকা দেশগুলোতে সহযোগিতা বৃদ্ধি করতে হবে।

রোববার (৩ ডিসেম্বর) দুবাইয়ে ৩০ নভেম্বর থেকে ১২ ডিসেম্বর পর্যন্ত অনুষ্ঠিত বিশ্ব জলবায়ু সম্মেলনে (কপ ২৮) এক দিনের জন্য একটি বিশেষ হেলথ ডে (স্বাস্থ্য দিবস) উদযাপন অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন।

এদিন সকালে প্রথমে এশিয়ান ডেভলপমেন্ট ব্যাংক কর্তৃক আয়োজিত গোলটেবিল বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠকে বাংলাদেশের পক্ষে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে স্বাস্থ্যখাতে বাংলাদেশের চ্যালেঞ্জসমূহ তুলে ধরেন। মন্ত্রী জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে সৃষ্ট নানাবিধ চ্যালেঞ্জসমূহ মোকাবিলায় বর্তমান সরকারের উদ্যোগসমূহ তুলে ধরেন।

স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক এসময় বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের পাশাপাশি বিভিন্ন ধরনের ভেক্টর বর্ন রোগব্যাধিও বেড়ে যাচ্ছে। এর মধ্যে এডিস মশা বৃদ্ধি পেয়ে বিশ্বব্যাপী ডেঙ্গু আক্রান্তের হার বেড়ে যাওয়া অন্যতম। মন্ত্রী তার বক্তব্যে এ প্রসঙ্গে নানাবিধ তথ্য উপাত্ত তুলে ধরেন। তিনি বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে কিছু রোগের প্রাদুর্ভাব বেড়ে গেছে। যার ফলে আমাদের এসব রোগ ম্যানেজ করতে অনেক বেশি ব্যয় করতে হচ্ছে। হাসপাতালের বিছানা ডেঙ্গু রোগীদের দিয়ে ভর্তি থাকছে। যার ফলে একদিকে যেমন ব্যয় বাড়ছে অন্যদিকে বেশি ডেঙ্গু রোগী হাসপাতালে ভর্তি থাকায় অন্য রোগীরা স্বাভাবিক সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।

জলবায়ু পরিবর্তনে ক্ষতিকর দিক সমূহ তুলে ধরে সভায় বিশ্বব্যাপী আঞ্চলিক ও বৈশ্বিক সহযোগিতা বৃদ্ধির কথা বলেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী। এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট ব্যাংকের উদ্যোগ ও সহায়তায় বাংলাদেশে জলবায়ুবান্ধব ভ্যাক্সিন প্ল্যান্ট স্থাপিত হতে যাচ্ছে বলে উল্লেখ করেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী। এসময় তিনি এডিবি প্রতিনিধিদের বিশেষ ধন্যবাদ জানান। একই সঙ্গে অন্যান্য উন্নয়ন সহযোগীদের জলবায়ুবান্ধব স্বাস্থ্য ব্যবস্থা বিনির্মাণে কার্যকরী পদক্ষেপসহ কারিগরি ও আর্থিক সহযোগিতা বৃদ্ধি করার আহ্বান জানান।

পরে স্বাস্থ্যমন্ত্রী আরেকটি অনুষ্ঠানে অংশ নেন। সেখানে মন্ত্রী জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে স্বাস্থ্যসেবায় কী ধরনের ক্ষতি হয় এবং কীভাবে এর সঠিক ব্যবস্থাপনা করা যায় তা তুলে ধরেন।

স্বাস্থ্যমন্ত্রী পুষ্টি ও জনসংখ্যা উন্নয়ন প্রোগ্রামে (৫ম সেক্টর প্ল্যান) নামে আরেকটি বৈঠকে অংশ নিয়ে জলবায়ুবান্ধব স্বাস্থ্য ব্যবস্থার গুরুত্ব সম্পর্কে আলোকপাত করেন। তিনি সব উন্নয়ন সহযোগী সংস্থাকে স্মার্ট এবং জলবায়ুবান্ধব স্বাস্থ্য ব্যবস্থা বিনির্মাণে অংশগ্রহণ করার আহ্বান জানান।

এরপর স্বাস্থ্য দিবস উপলক্ষে বিকেলে আরেকটি প্রোগ্রামে অংশগ্রহণ করেন স্বাস্থ্যমন্ত্রীসহ বাংলাদেশের প্রতিনিধিরা। এ সভায় অংশ নিয়ে বাংলাদেশের পক্ষে বক্তব্য দেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক। সভায় উন্নত দেশগুলোকে বাংলাদেশ তথা যেসব দেশ বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে তাদের কমিটমেন্ট অনুযায়ী সহযোগিতা করার আহ্বান জানান স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক।

জানা গেছে, এ সভায় প্রথমবারের মতো Health Ministerial Declaration গৃহীত হয়। বাংলাদেশের পক্ষ থেকে এ Declaration কে জলবায়ু বান্ধব স্বাস্থ্য ব্যবস্থার জন্য একটি মাইলফলক হিসেবে উল্লেখ করা হয়।

এ সভায় স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক তিনটি সুপারিশ দেন;
১. জলবায়ু পরিবর্তনের সঙ্গে মানানসই স্বাস্থ্য ব্যবস্থা গড়ে তুলতে হবে
২. স্বাস্থ্যখাতে জলবায়ু পরিবর্তনের মূল কারণ খুঁজে বের করে সে অনুযায়ী পরিকল্পনা করতে হবে
৩. আঞ্চলিক ও বৈশ্বিক অংশীদারত্ব এবং সহযোগিতার ওপর জোর দিতে হবে।

অনুষ্ঠানে প্যানেলিস্ট বক্তা হিসেবে স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের সচিব মো. জাহাঙ্গীর আলমও অংশ নেন। সচিব তার বক্তব্যে বাংলাদেশের জলবায়ু এবং স্বাস্থ্য বিষয়ক পলিসিসমূহ এবং সরকারের গৃহীত পদক্ষেপসমূহ তুলে ধরেন। পরবর্তীতে জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে সৃষ্ট নানাবিধ চ্যালেঞ্জসমূহ মোকাবিলায় সবার করণীয় কী কী তাও তার বক্তব্যে উল্লেখ করেন এবং সবাইকে একযোগে কাজ করার আহ্বান জানান।

হেলথ দিবস উপলক্ষে আয়োজিত দিনের প্রতিটি অনুষ্ঠানেই উন্নয়ন সহযোগী সংস্থাগুলো জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে বাংলাদেশ যেসব উদ্যোগ নিয়েছে সেগুলোর প্রশংসা করেন এবং ভবিষ্যতে স্বাস্থ্যখাতে আরও সহযোগিতা এবং বিনিয়োগের আশ্বাস দেন।

ডুবাইয়ের কপ ২৮ এর বিশেষ স্বাস্থ্য দিবসে স্বাস্থ্য প্রতিনিধি দলের অংশ হিসেবে আরও উপস্থিত ছিলেন স্বাস্থ্য সেবা বিভাগের সচিব মো. জাহাঙ্গীর আলম, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক প্রফেসর আহমেদুল কবির, স্বাস্থ্য সেবা বিভাগের যুগ্মসচিব মামুনুর রশিদ, স্বাস্থ্যমন্ত্রীর একান্ত সচিব রিয়াজুল হক, সচিবের একান্ত সচিব মো. আবু রায়হান দোলন, ডা. মো. মফিজুল ইসলাম বুলবুলসহ অনেকে।

এএএম/এমআইএইচএস/এএসএম