ভিডিও EN
  1. Home/
  2. স্বাস্থ্য

দেশে পোলিও নির্মূল হলেও শঙ্কা এখনো কাটেনি

আবদুল্লাহ আল মিরাজ | প্রকাশিত: ০৯:৫৬ এএম, ২৪ অক্টোবর ২০২৩

পোলিওমাইলিটিজ এক ধরনের ভাইরাসজনিত সংক্রামক রোগ। এটি পোলিও নামেই পরিচিত। এক সময় গোটাবিশ্বে ভয়াবহ অবস্থা তৈরি করেছিল এই ভাইরাস। যে কারণে বিকলাঙ্গ বা পঙ্গুত্ববরণ করে মারা গেছে বহু মানুষ। বাংলাদেশে সর্বশেষ ২০০৬ সালে ১৮ জন পোলিও রোগী শনাক্ত হয়। এরপর থেকে দেশে এর অস্তিত্ব খুঁজে পাওয়া না গেলেও বিশেষজ্ঞরা শঙ্কার বিষয়টি উড়িয়ে দিচ্ছেন না। তারা বলছেন, এ রোগ সম্পর্কে সচেতনতার বিকল্প নেই।

বিশ্ব পোলিও দিবস আজ, ২৪ অক্টোবর। এবার দিবসটির মূল প্রতিপাদ্য ‘টিকা নিরাপদ এবং জীবন বাঁচায়’। দিবসটি ঘিরে বিভিন্ন দেশে সচেতনতার কর্মসূচি পালন করা হয়। এ রোগ নিয়ে আরও সচেতন হওয়ার পরামর্শ চিকিৎসকদের।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিওএইচও) তথ্য বলছে, ১৯৮৮ সালে সারাবিশ্বে এ রোগে আক্রান্তের সংখ্যা ছিল ৩ লাখ ৮৮ হাজার। ২০০৫ সালে ছিল দুই হাজার। ২০১৪ সালে ভারত, বাংলাদেশসহ দক্ষিণ এশিয়ার ১১টি দেশকে পোলিও মুক্ত ঘোষণা করে সংস্থাটি।

চিকিৎসা বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সাধারণত পাঁচ বছরের কম বয়সি শিশুরা এ রোগে আক্রান্ত হওয়ার সবচেয়ে ঝুঁকির মধ্যে থাকে। অনেকগুলো লক্ষণের মধ্যে গুরুতর হলো-জ্বর, শ্বাসকষ্ট শেষে পক্ষাঘাত বা পঙ্গুত্ববরণ। আক্রান্তের হার বেশি হলে নানা জটিলতাসহ মৃত্যু হয় এ রোগীর।

২০০৮ সালের পর তিনটি দেশে পোলিও মহামারি আকারে দেখা দেয়। দেশগুলো হলো নাইজেরিয়া, পাকিস্তান ও আফগানিস্তান। যেসব এলাকায় টিকা কম দেওয়া হয়েছিল বা যেসব এলাকার পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থা ভালো নয়, সেসব স্থানে পোলিও ভাইরাসের সংক্রমণ ঘটলে তা মহামারি আকার ধারণ করতে পারে। ফলে সবাইকে পোলিও টিকার আওতায় আনা একান্ত জরুরি।

 

এই ভাইরাস মানুষের শরীরে ঢুকলে পরবর্তী কয়েকমাস তার মল-মূত্রের সঙ্গে ছড়িয়ে পড়ে। সেকারণে পোলিও আক্রান্ত কোনো মানুষ এক অন্য দেশ থেকে অন্য দেশে গেলেও ছড়িয়ে পড়তে পারে এ রোগ।

আরও পড়ুন> ১০ বছরে আরও ৪ ভাইরাস এনেছিল বৈশ্বিক জরুরি অবস্থা 

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের ইপিআই টিকাদান কর্মসূচির আওতায় সারাদেশে নবজাতক শিশুদের পোলিওর মুখে খাওয়ার টিকা ও ইনজেকশনের মাধ্যমে টিকা দেওয়া হয়ে থাকে। সারাদেশে পোলিও নির্মূল ও ভবিষ্যতে এই রোগের প্রাদুর্ভাব যাতে না ঘটে এ লক্ষে কাজ করছে প্রতিষ্ঠানটি। জনস্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটের আওতায় ন্যাশনাল পোলিও, মিজেলস ও এমইএস ল্যাবরেটরি বাংলাদেশে পোলিও নজরদারির কাজ করে।

jagonews24

পোলিও রোগ সম্পর্কে জাগো নিউজের সঙ্গে সার্বিক বিষয়ে কথা হয় ন্যাশনাল পোলিও, মিজেলস (হাম) ও এমইএস ল্যাবরেটরির প্রধান ভাইরোলজিস্ট ডা. কেএইচ মাহবুবা জামিলের। তিনি জানান, ২০১৪ সালে বাংলাদেশ ও ভারতসহ দক্ষিণ এশিয়ার ১১টি দেশ পোলিও মুক্ত ঘোষণা করা হয়। এর আগে প্রতিবছর ১০ থেকে ১৫ জনের মতো প্যারালাইসড পোলিও রোগী পাওয়া যেত। তবে ২০০০ সালের পর দীর্ঘদিন দেশে এ ধরনের রোগী পাওয়া যায়নি। ২০০৬ সালে পোলিও মুক্ত ঘোষণা করার সময় আসলেও সে বছর হঠাৎ করেই দেশের বিভিন্ন জেলায় ১৮ জন পোলিও রোগী পাওয়া যায়। সঙ্গে সঙ্গে ব্যবস্থা নেওয়া হয়। ফলে এরপর থেকে আর পোলিওর কোনো রোগী পাওয়া যায়নি।

 

দেশে নতুন করে পোলিও রোগ ছড়ানোর শঙ্কা আছে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, একটা সময় গ্রামে দেখা যেত পা বাঁকা হয়ে যাওয়া কিংবা প্যারালাইসড হওয়া মানুষ। কিন্তু বর্তমানে তা দেখা যায় না। বর্তমান সময়ে এসে টিকার আওতার বাইরে থাকলে এবং পোলিও রোগীর সংস্পর্শে আসলে আবারও এর প্রাদুর্ভাব দেখা দিতে পারে। তাই দেশে এ রোগ নির্মূল হলেও শঙ্কা থেকেই যায়। যেমন, পাকিস্তান ও আফগানিস্তান থেকে অনেক লোক দেশে আসা যাওয়া করে। তাদের মাঝে পোলিওর জীবাণু বহনকারী যে কারো মাধ্যমে রোগ ছড়াতে পারে। এ জন্য পোলিও টিকা কার্যক্রম ও নজরদারি আমরা চলমান রেখেছি, যাতে ভবিষ্যতে কোনোভাবেই দেশে পোলিও রোগ ছড়াতে না পারে।

 

তিনি আরও জানান, বর্তমানে পাকিস্তান ও আফগানিস্তানে কিছু পোলিও রোগী পাওয়া যাচ্ছে। প্রতি বছর এখনও দুই থেকে তিনজন রোগী পাওয়া যায়। এতে করে বিশ্বকে এখনও পোলিও মুক্ত ঘোষণা করা সম্ভব হয়নি। বাংলাদেশে ইপিআই কর্মসূচির কার্যকরী টিকা কর্মসূচির ফলে দেশে পোলিও নির্মূল করা সম্ভব হয়েছে।

আরও পড়ুন> আইসিডিডিআর,বির গবেষণা/ নতুন পোলিও টিকা নবজাতকের রোগ প্রতিরোধ করতে সক্ষম 

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের ইপিআই কর্মসূচির ডেপুটি প্রোগ্রাম ম্যানেজার ডা. তানভীর রহমান বলেন, পোলিও ভাইরাস সবচেয়ে বড় ভাইরাসগুলোর মধ্যে একটি। এই ভাইরাস স্নায়ু টিস্যুর মাধ্যমে গিয়ে ব্রেইনে আঘাত করে। আর এটি ব্রেইনের মাধ্যমে পায়ে আক্রান্ত হয়। অনেক ক্ষেত্রে এটুকুতেই হয়তো সীমাবদ্ধ থাকে। আবার অনেক সময় তা পুরো শরীরকেই আক্রান্ত করে ফেলে। এতে আক্রান্ত অঙ্গ ক্রমশ দুর্বল হতে থাকে এবং পরে স্থায়ীভাবে পঙ্গু হয়ে যেতে পারে। পেশি অবশ হলে শ্বাস বন্ধ হয়ে শিশু মারাও যেতে পারে।

 

তিনি আরও বলেন, ইপিআই এর কর্মসূচি অনুযায়ী নিয়মিত প্রতিটি নবজাতক শিশুকেই পোলিও টিকা খাওয়ানো হয়। এর পাশাপাশি ৬টি অতিপ্রয়োজনীয় টিকা দেওয়া হয়ে থাকে। আমাদের টিকা কার্যক্রম খুবই কার্যকর পদ্ধতিতে পরিচালিত হয়। এছাড়া বাংলাদেশের মায়েরা এ বিষয়ে সচেতন। ফলে আমাদের কার্যক্রম আরও সফলতা পেয়েছে।

 

ডা. তানভীর রহমান বলেন, পোলিওর একমাত্র প্রতিরোধ হলো চার ডোজ পোলিও টিকা খাওয়ানো। এটি শিশুকে পোলিও রোগ থেকে রক্ষা করবে। সাধারণত শিশু জন্ম নেওয়ার পরপরই ৪২ দিনের মাঝে পোলিও টিকার প্রথম ডোজটি দেওয়া হয়, এবং পরের ডোজটি দেওয়া হয় ৪ মাস বয়সে। তৃতীয় ডোজ দেওয়ার দিন-তারিখ নির্ভর করে টিকার ধরনের ওপর। তবে এ ডোজটি ৬ থেকে ১৮ মাসের মধ্যেই দেওয়া উচিত। ৪ থেকে ৬ বছরের মাথায় একটি বুস্টার ডোজ দেওয়া হয়ে থাকে। এছাড়াও ১৪ দিন বয়সের মাঝে জিরো ডোজ হিসেবে পোলিও টিকা দেওয়া হয়। অনেকে এ টিকা নেয় না।

এএএম/এসএনআর/জিকেএস