ভিডিও EN
  1. Home/
  2. স্বাস্থ্য

ডেঙ্গু

প্রতিদিন গড়ে একজন করে মারা যাচ্ছেন মুগদা হাসপাতালে

ইয়াসির আরাফাত রিপন | প্রকাশিত: ০৯:৫৩ পিএম, ১৭ সেপ্টেম্বর ২০২৩

সারাদেশ লাগামহীন ডেঙ্গু পরিস্থিতি। প্রতিদিনই অবনতি হচ্ছে এ পরিস্থিতির। বছরের শুরুর দিকে ডেঙ্গুর প্রকোপ রাজধানীতে বেশি থাকলেও এখন তা ছড়িয়ে পড়েছে সারাদেশে। প্রতিদিনই আক্রান্তের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে মৃত্যু। চলতি সেপ্টেম্বর মাসে এখন পর্যন্ত গড়ে প্রতিদিন ১৩ জন করে ডেঙ্গুরোগীর মৃত্যু হচ্ছে।

এদিকে রাজধানীর যেসব হাসপাতালে ডেঙ্গুরোগীর চাপ বেশি তার মধ্যে অন্যতম মুগদা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল। সেবার দিক থেকেও বেশ ভালো অবস্থানে হাসপাতালটি। শুধু ডেঙ্গুরোগীর জন্যই তিনটি ওয়ার্ড খোলা হয়েছে এখানে। এই হাসপাতালে চলতি সেপ্টেম্বরে প্রতিদিন গড়ে প্রায় একজন করে ডেঙ্গুরোগীর মৃত্যু হচ্ছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে।

রোববার (১৭ সেপ্টেম্বর) মুগদা হাসপাতাল ঘুরে দেখা যায়, হাসপাতালটির তৃতীয় তলায় শিশু ওয়ার্ডে ডেঙ্গু আক্রান্ত শিশুদের সেবা দেওয়া হচ্ছে। তবে রোগীর চাপ বেশি হলে মেডিসিন ওয়ার্ডেও চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। হাসপাতালটির অষ্টম তলায় নারী রোগীদের জন্য একটি এবং দশম ও এগারো তলা মিলে পুরুষদের জন্য নির্ধারিত ওয়ার্ডে ডেঙ্গু আক্রান্তদের চিকিৎসা সেবা দেওয়া হচ্ছে। তবে অন্যান্য মাসের তুলনায় এই হাসপাতালে বর্তমানে রোগীর চাপ কিছুটা কম বলে জানা গেছে।

আরও পড়ুন>> ডেঙ্গুরোগীর চাপে বেসামাল মুগদা হাসপাতাল

মুগদা হাসপাতালে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে চিকিৎসা নিচ্ছেন সৌরভ। সেখানে কথা হয় তার সঙ্গে। তিনি জাগো নিউজকে বলেন, ‘আমাদের যাবতীয় পরীক্ষা এখানে করাচ্ছি। অন্য বেসরকারি হাসপাতালের চেয়ে এখানে খরচ অনেক কম। এখানে ডাক্তার আসেন নিয়মিত, নার্সদের ব্যবহারও ভালো। রোগীর চাপ কমেছে, এটা ভালো লাগছে। রোগীর অবস্থা বেশি খারাপ হলে আইসিইউতে নেওয়া হচ্ছে।’

jagonews24

এক রোগীর আত্মীয় শাহনাজ বলেন, ‘এখানে সব পরীক্ষা হচ্ছে, তবে দীর্ঘ লাইন থাকছে। এতে সময় একটু বেশি লাগলেও খরচ বেশ কম। এখানে লিফটের সুবিধা ভালো হলে আরও সুবিধা হতো। চারটি লিফটের দুটি করে চলে, এতে রোগী ও দর্শনার্থীদের ভোগান্তি কিছুটা হলেও বাড়ে।’

তবে রোগীর চাপ বেশি থাকুক আর কম থাকুক সেবার ক্ষেত্রে সবাইকে সমান চোখে দেখছেন নার্সরা। ডেঙ্গুরোগীদের সেবা দেওয়ার মধ্যেই কথা হয় সিনিয়র স্টার্ফ নার্স জাহিদুলের সঙ্গে। তিনি জাগো নিউজকে বলেন, ‘আমাদের পরিচালকের নির্দেশ সবাইকে সেবা দিতে হবে। আমরাও আন্তরিকতার সঙ্গে সবাইকে সমান সেবা দেওয়ার সর্বোচ্চ চেষ্টা করছি।’

এদিকে চলতি সেপ্টেম্বর মাসে হঠাৎ মৃত্যুর সংখ্যা বেড়ছে। এ মাসে এখন পর্যন্ত সারাদেশে গড়ে প্রতিদিন ১৩ জনের মৃত্যু হচ্ছে। এর মধ্যে এখন পর্যন্ত মুগদা হাসপাতালেই গড়ে প্রতিদিন একজন করে রোগীর মৃত্যু হচ্ছে। মুগদা হাসপাতালে গত জানুয়ারি থেকে এখন পর্যন্ত মোট ১০ হাজার ২৭০ জন ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগী ভর্তি হয়েছেন। তাদের মধ্যে মারা গেছেন ১১৬ জন। হাসপাতাল থেকে ছাড়পত্র পেয়েছেন নয় হাজার ৮৪৬ জন। আর চিকিৎসাধীন ৩০৮ জন।

এছাড়া সেপ্টেম্বরের ১৭ দিন অর্থাৎ রোববার দুপুর ১২টা পর্যন্ত মুগদা হাসপাতালে মোট পাঁচ হাজার তিনজন রোগী ভর্তি হয়েছেন। এর মধ্যে ছাড়া পেয়েছেন এক হাজার ৩৪৮ জন। মৃত্যু হয়েছে ১৬ জনের। অর্থাৎ গড়ে প্রতিদিন প্রায় একজন করে রোগী মৃত্যুবরণ করছেন।

আরও পড়ুন>> মুগদা হাসপাতালে টিকিট কাটার যুদ্ধ, ভোগান্তি

হাসপাতালের পরিচালক অধ্যাপক ডা. নিয়াতুজ্জামান টুটুল জাগো নিউজকে বলেন, ‘আমাদের এখানে ভর্তি রোগীর প্রায় সবাই সুস্থ হয়ে বাসায় ফিরছেন। তবে মৃত্যুর ঘটনা একটু অস্বাভাবিক।’

এদিকে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানিয়েছে, শনিবার (১৬ সেপ্টেম্বর) সকাল ৮টা থেকে রোববার সকাল ৮টা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে দেশের বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন তিন হাজার ১২২ জন। তাদের মধ্যে ঢাকার বাসিন্দা ৮৪৯ জন ও ঢাকার বাইরের দুই হাজার ২৭৩ জন। একই সময়ে মৃত্যু হয়েছে ১৮ জনের। তাদের মধ্যে ১২ জন ঢাকার ও ৬ জন ঢাকার বাইরের বাসিন্দা।

চলতি বছরের ১ জানুয়ারি থেকে ১৭ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন এক লাখ ৬৭ হাজার ৬৮৪ জন। তাদের মধ্যে রাজধানীর বিভিন্ন হাসপাতালে ৭৩ হাজার ২৩৩ জন ও ঢাকার বাইরের হাসপাতালগুলোতে ৯৪ হাজার ৪৫১ জন ভর্তি হয়েছেন।

এবছর এখন পর্যন্ত দেশে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন ৮২২ জন। তাদের মধ্যে ঢাকার ৫৬৪ জন এবং ঢাকার বাইরের ২৫৮ জন।

২০২২ সালে ডেঙ্গুতে দেশের ইতিহাসের সর্বোচ্চ ২৮১ জন মারা যান। ওই বছরের শেষ মাস ডিসেম্বরে ডেঙ্গুতে ২৭ জনের মৃত্যু হয়। একই সঙ্গে আলোচ্য বছরে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হন ৬২ হাজার ৩৮২ জন।

jagonews24

আরও পড়ুন>> ডেঙ্গু ওয়ার্ডে মশারিতে অনীহা, বেশি রোগী আসছে জটিলতা নিয়ে

২০২০ সালে করোনা মহামারিকালে ডেঙ্গু সংক্রমণ তেমন একটা দেখা না গেলেও ২০২১ সালে সারাদেশে ডেঙ্গু আক্রান্ত হন ২৮ হাজার ৪২৯ জন। একই বছর দেশব্যাপী ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে ১০৫ জনের মৃত্যু হয়েছিল।

এবার ঢাকায় মশার ঘনত্ব বেড়েছে, ডেঙ্গুরোগীর সংখ্যাও বেড়েছে, যা অন্যান্য বছরের তুলনায় অনেক বেশি। অনেক বাসার ফ্রিজের ট্রে, থালা-বাসন রাখার র্যাকের নিচে জমে থাকা পানিতে মশার লার্ভা পাওয়া গেছে। এতে ডেঙ্গু সংক্রমণ দীর্ঘায়িত হওয়ার আশঙ্কার কথা বলছেন বিশেষজ্ঞরা।

আবার এখনো ভুল ধারণায় আটকে আছেন এক শ্রেণির মানুষ। যাদের বসবাস ছয় কিংবা সাত তলায় তাদের ধারণা মশা এত উপরে থাকে না। তবে জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বাসা-বাড়ির যেকোনো তলা থেকে মশা সহজেই তার ওপরের তলায় যেতে পারে। ভুল ধারণার ওপর ভিত্তি করে অসাবধান হওয়ার কোনো সুযোগ নেই। একই সঙ্গে নিম্ন মানের কয়েল এড়িয়ে মশারির ব্যবহার বাড়ানোর পরামর্শও দিয়েছেন তারা।

ইএআর/ইএ/জিকেএস