ভিডিও EN
  1. Home/
  2. স্বাস্থ্য

মুগদা মেডিকেল

২৮৫ টাকা রেখে বিক্রেতা বললেন দুই টাকা কম রাখলাম মামা

আল-আমিন হাসান আদিব | প্রকাশিত: ০৭:৩০ পিএম, ১১ সেপ্টেম্বর ২০২৩

ডেঙ্গুর প্রকোপে পাকা পেঁপের চাহিদা বেড়েছে। রাজধানীতে স্থানভেদে দেশি জাতের এ পেঁপের কেজি ৮০-১০০ টাকার মধ্যে। তবে ভিন্নচিত্র রাজধানীর মুগদা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সামনে। সেখানে পেঁপের কেজি হাঁকা হচ্ছে ১৫০ টাকা। দর-দামে ৫-১০ টাকা কম রাখলেও ১৪০ এর নিচে নামছেন না বিক্রেতারা। দাম বেশি হওয়ায় ফিরে যাচ্ছেন অনেক রোগীর স্বজনরা। কেউ কেউ বাড়তি দাম নিয়ে বিক্রেতার সঙ্গে জড়াচ্ছেন বাগবিতণ্ডায়ও।

শুধু পেঁপে নয়, দেশি-বিদেশি সব ধরনের ফলের দাম চড়া এ হাসপাতালের সামনে। ডেঙ্গুরোগীদের সেরে ওঠার জন্য সহায়ক ফলগুলোর দাম আরও একটু বেশি। যেমন- জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের অভিযানে ঢাকায় ডাবের দাম কমলেও মুগদার সামনে এখনো সেই ১৬০-১৮০ টাকাই।

বিজ্ঞাপন

বিজ্ঞাপন

রোববার (১০ সেপ্টেম্বর) বিকেলে মুগদা মেডিকেলের সামনের উত্তর মুগদাপাড়া সড়ক ঘুরে এমন তথ্য জানা গেছে। হাসপাতালের সামনের এ রাস্তার পাশের ফুটপাত ফল ব্যবসায়ীদের দখলে। সব ধরনের ফল পাওয়া যায় এখানে। উত্তর মুগদাপাড়া সড়কের ক্রেতাদের বড় অংশ হাসপাতালে আসা রোগী ও তাদের স্বজনরা।

আরও পড়ুন>> ডেঙ্গু রোগীকে যেসব খাবার খাওয়াবেন

বিজ্ঞাপন

বিজ্ঞাপন

রোগী-স্বজনদের অভিযোগ, বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা খরচ বেশি, পকেট কাটেন চিকিৎসকরা। স্বল্প খরচে চিকিৎসা নিতে মুগদা মেডিকেলে আসা রোগী-স্বজনদের পকেট কাটছেন ফল ব্যবসায়ীরা।

সরেজমিনে দেখা গেছে, মুগদাপাড়া সড়কের ফুটপাতে এখন সবচেয়ে বেশি বিক্রি হচ্ছে ডাব। হাসপাতালের ফটক থেকে বের হয়েই বামপাশে ভ্যানে করে ডাব বিক্রি করতে দেখা যায় ৪-৫ জনকে। একটু দূরে আছেন আরও ৭-৮ জন ডাব ব্যবসায়ী। ফটকের পাশের সারিতে দ্বিতীয় ভ্যানটি বিল্লাল হোসেনের। ১৫ বছরের বেশি সময় হলো তিনি এ এলাকায় বিভিন্ন রকমের ফল বিক্রি করেন। বয়স ৫০ ছুঁই ছুঁই। তবে তিন মাস ধরে তিনি শুধুই ডাব বিক্রি করছেন।

বিজ্ঞাপন

রোগী-স্বজনদের ‘পকেট কাটছেন’ ফল ব্যবসায়ীরাও

ডাবের দরদাম জিজ্ঞাসা করতেই বিল্লাল জানালেন, বড় আকারের ডাব ১৮০ টাকা। মাঝারিগুলো ১৬০ এবং তুলনামূলক ছোট ও গাছ থেকে কয়েকদিন আগে নামানো এমন ডাব ১৫০ টাকা।

আরও পড়ুন>> ২০০ টাকা ছুঁয়েছে ডাবের দাম

বিজ্ঞাপন

অন্য এলাকার তুলনায় এখানে ডাবের দাম বেশি কেন- এমন প্রশ্নে বিল্লাল ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠেন। উচ্চস্বরে তিনি বলতে থাকেন, ‘আরে বাবা, মুগদার সামনে থেইকা ডাব কিনবা, দাম তো বেশি হইবোই। দাম বেশি কইতাছেন, ক’দিন আগে কী অবস্থাডা আছিল? ম্যাজিস্ট্রেট পাইকারদের চাপ দেওয়ায় তো এখন কম দামে পাইতাছেন। না হলে এগুলোই (বড় ডাব) ২২০ টাকায় ঠেকতো।’

পাশাপাশি থাকা অন্য ডাব বিক্রেতারাও তার সঙ্গে একমত। সবার কাছেই বড়, মাঝারি, ছোট সাইজের ডাব। দামও প্রায় একই হাঁকছেন তারা। ব্যবসায় প্রতিদ্বন্দ্বিতা থাকলেও সবাই মিলেই দাম ঠিক করেন বলেও জানালেন তারা।

এদিকে, হাসপাতালের সামনের ফুটপাতে ফলের দোকানগুলোতে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, সেখানে মাল্টা বিক্রি হচ্ছে ৪২০-৪৩০ টাকা কেজি, গালা আপেল ৩৭০-৩৮০ টাকা, ড্রাগন ৩৫০-৪০০ টাকা, লাল আঙুর ৪৮০-৪৯০ টাকা, কমলার কেজি ৩৮০-৪২০ টাকা পর্যন্ত।

বিজ্ঞাপন

সবচেয়ে বেশি আনারের দাম। আকারভেদে এক কেজি আনার ৫০০-৫২০ টাকা চাইছেন বিক্রেতারা। অন্যদিকে দেশি জাতের আমড়ার কেজি ৬০-৮০ টাকা, পেয়ারা ৭৫-৮০ টাকা। এছাড়া সাগর কলা ৯৫-১১০ টাকা ডজন, সরবি কলা ১৫০-১৫৫ টাকা ডজন (১৩ টাকা পিস)।

বড় বোন ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালের তৃতীয় তলায় নারী ওয়ার্ডে ভর্তি। মায়েরও জ্বর জ্বর ভাব। তাদের জন্য ফল কিনতে হাসপাতালের সামনে ঘুরছিলেন সজীব হোসেন নামে এক তরুণ। তিনি জাগো নিউজকে বলেন, ‘এখানে সব ফলের দাম বেশি চাইছে। ওদিকটায় (সড়কের ভেতরে) অনেক ঘুরলাম, দেখি সব দোকানি একই দাম বলেন। সবাই সিন্ডিকেট করে বেশি দামে কিনতে বাধ্য করছেন আমাদের (রোগী-স্বজন)।

রোগী-স্বজনদের ‘পকেট কাটছেন’ ফল ব্যবসায়ীরাও

বিজ্ঞাপন

তিনি বলেন, ‘কী আর করার, বোনটা পেঁপে আর মাল্টা নিতে বলেছে। একটা পেঁপে নিলাম ১ কেজি ৪০০ গ্রাম ওজন, দাম পড়লো ১৯৬ টাকা। মাল্টার কেজি নিলো ৪১৫ টাকা করে। তিনটা মাল্টায় প্রায় সাড়ে ৭০০ গ্রাম ওজন। ২৮৭ টাকা দাম হইলো, বিক্রেতা ২৮৫ টাকা রেখে কইলো দুই টাকা কম রাখলাম মামা।’

আরও পড়ুন>> ডেঙ্গু আক্রান্ত ভাইয়ের টেস্ট রিপোর্ট পেতে ছোট্ট হুমাইরার ‘যুদ্ধ’

তবে হাসপাতালের সামনে ফলের দাম কেজিতে ৫-১০ টাকা বেশি হওয়া স্বাভাবিক বলে মনে করেন ফল বিক্রেতা সোহরাব হোসেন। তিনি জাগো নিউজকে বলেন, ‘ফলের দাম সব জায়গাতেই বেশি। এখানে একটু তো বেশি হবেই। আবার জায়গা (ফুটপাতে) পেতেও পয়সা গুনতে (চাঁদা) হয় প্রতিদিন। ব্যবসাও তো খুব ভালো চলছে না, কেনাবেচা কম। একটু লাভ না হইলে টিকবো কীভাবে?’

বিজ্ঞাপন

এদিকে, মুগদা মেডিকেলের সামনের ফলের যে দাম, তার চেয়ে অন্য এলাকায় বেশ কম। সেখান থেকে ৯০০ মিটার থেকে ১ কিলোমিটার দূরে বাসাবো বৌদ্ধ মন্দির। মন্দিরের সামনে বেশকিছু ফলের দোকান। সেখানে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, হাসপাতালের সামনে যে গালা আপেল ৩৮০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে, তা এখানে ৩২০-৩৩০ টাকা কেজি। আর মাল্টা বিক্রি হচ্ছে ৩৯০ টাকা কেজি। আঙুর, কমলা, পেঁপে, পেঁয়ারা, কলা, ড্রাগনসহ সব ফলই ২০-৩০ টাকা কমে বিক্রি হচ্ছে বৌদ্ধ মন্দিরের সামনে।

রামপুরা কাঁচাবাজার এলাকায় ঘুরেও দামের একই রকম পার্থক্য দেখা গেছে। বরং বাসাবোর বৌদ্ধ মন্দিরের সামনের দোকানগুলোর চেয়ে রামপুরায় ফলের দাম আরও কিছুটা কম। মহাখালী, মধ্যবাড্ডা, উত্তরবাড্ডা এলাকায় ঘুরেও দেখা গেছে একই চিত্র (দাম কম)।

রোগী-স্বজনদের ‘পকেট কাটছেন’ ফল ব্যবসায়ীরাও

আখের রসও ৩০ টাকা গ্লাস

চিকিৎসকরা ডেঙ্গুরোগীদের তরল জাতীয় খাবার গ্রহণের পরামর্শ দেওয়ায় অনেকে বেশি দামে ডাব না কিনে আখের রস খাওয়াচ্ছেন। মুগদা মেডিকেলের সামনের সড়কের পাশ দিয়ে ৪-৫ জনকে আখের রস বিক্রি করতে দেখা যায়। তবে সেখানে প্রতি গ্লাস আখের রসের দামও অন্য জায়গার তুলনায় বেশি।

আরও পড়ুন>> রাতেও হাসপাতালে ডেঙ্গুরোগীর ভিড়

বোতল নিয়ে আখের রস কিনতে আসা লোকমান আলী বলেন, ‘আমাগো এলাকায় (মধ্যমান্ডা) আখের রস ২০ টাকা গ্লাস। তাও এর চেয়ে গ্লাস বড়। এখানে গ্লাসও ছোট, দামও বেশি। এক গ্লাস রস ৩০ ট্যাহা চাই। মেয়েকে খাওয়ানো লাগবো, তাই লাইয়া যাইতেছি।’

আখের রস বিক্রেতা আব্দুস সামাদ বলেন, ‘এখানে সব দোকানেই ৩০ টাকা। অন্যখানে কে কত দামে বিক্রি করলো তা দেখলে তো আমার চলবে না। আখ পাওয়া কষ্ট। দামও বেশি দিয়ে কিনি। মেশিন চালাতে তেল খরচা আছে। ৩০ টাকা গ্লাস না বেচলে লাভই থাকে না।’

এএএইচ/ইএ/জেআইএম

বিজ্ঞাপন