সিগারেট সেবনে ৪০ শতাংশ মানুষ টাইপ-২ ডায়াবেটিসে আক্রান্ত
সিগারেটের কারণে ৩০ থেকে ৪০ শতাংশ মানুষ টাইপ-২ ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হন বলে জানিয়েছেন জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা। তারা বলেন, ধূমপানে আসক্ত ডায়াবেটিস রোগীদের শারীরিক জটিলতার পাশাপাশি অকাল মৃত্যুর ঝুঁকিও বেশি, যা একটি দেশের স্বাস্থ্যসেবা ও সামাজিক অর্থনীতির জন্য বোঝা হয়ে দাঁড়াতে পারে।
সোমবার (২২ মে) রাতে রাজধানীর একটি হোটেলে অ্যাসোসিয়েশন ফর কমিউনিটি এমপাওয়ারমেন্ট (এইস) আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে তারা এ তথ্য জানান।
অনুষ্ঠানে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন সেন্টার ফর সাবস্ট্যান্স ইউজ রিসার্চের (সিশুর) হেড অফ লনজিটিউডিনাল রিসার্চ ডা. ফারহানা হাসিন।
তিনি বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের খাদ্য ও ওষুধ প্রশাসনের (এফডিএ) তথ্যমতে সিগারেটের কারণে ৩০/৪০ শতাংশ মানুষের টাইপ-২ ডায়াবেটিস দেখা দেয়। একবার ডায়াবেটিস হয়ে গেলে যদি কেউ ধূমপান করে, সেটি আরও ভয়ংকর। কারণ, ডায়াবেটিস একটি মেটাবলিক ডিজঅর্ডার। শরীরের এমন কোনো অঙ্গ নেই যেখানে ডায়াবেটিস প্রভাব ফেলে না।
অনুষ্ঠানে জানানো হয়, ডায়াবেটিসে আক্রান্ত প্রাপ্তবয়স্কদের সংখ্যার দিক দিয়ে বাংলাদেশ শীর্ষ ১০টি দেশের একটি। দেশে দিন দিন ডায়াবেটিস রোগীর সংখ্যা বাড়ছে। বাংলাদেশে ২০২১ সালে ৩১ লাখ প্রাপ্তবয়স্ক মানুষ ডায়াবেটিসে আক্রান্ত ছিলেন। ২০৪৫ সালের মধ্যে এ সংখ্যা প্রায় দ্বিগুণ হবে বলে অনুমান করা হচ্ছে। এমন পরিস্থিতিতে ধূমপানের ক্ষতি সম্পর্কে এখন সচেতন না হলে ডায়াবেটিসসহ বিভিন্ন রোগ প্রতিরোধ চ্যালেঞ্জ হবে।
অন্য বক্তারা বলেন, সারাবিশ্বের মানুষের জন্য বিশেষ করে ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য ধূমপান একটি অন্যতম স্বাস্থ্য উদ্বেগ। নাটক-সিনেমায় ধূমপানের প্রচার বাড়ছে। প্রতিটি সিনেমা-নাটকে এখন সিগারেটের দৃশ্য দেখানো হচ্ছে। যদিও স্ক্রিনের নিচের দিকে ছোট একটা সতর্কীকরণ বার্তা দেওয়া হচ্ছে। কিন্তু এ বার্তা কতটা সতর্কতায় কাজ করবে, এটা নিয়ে যথেষ্ট সন্দেহ রয়েছে। বিপরীতে দৃশ্যগুলোতে যেভাবে সিগারেট খাওয়া দেখানো হয়, এতে করে বরং তরুণ-তরুণীরা সিগারেটকে একটা স্মার্টনেস হিসেবেই গ্রহণ করে।
বক্তরা বলেন, ধূমপান ত্যাগের খুব দ্রুত সময়ের মাঝেই ডায়াবেটিস রোগীদের দেহে ধূমপানের ক্ষতিকর প্রভাবগুলো হ্রাস পেতে থাকে। কিন্তু বাংলাদেশের বিভিন্ন স্বাস্থ্যকেন্দ্র বা হাসপাতালগুলোতে ধূমপায়ী ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য বিশেষায়িত সেবা ও বিস্তারিত তথ্য প্রদানের সুযোগ নেই বললেই চলে। ডায়াবেটিসে আক্রান্ত ধূমপায়ী ব্যক্তিদের ধূমপান বন্ধ করতে চায় এসিই। এজন্য ৪৪০ ব্যক্তির ওপর তিন বছর ধরে গবেষণা চালাবে। প্রতি বছর রোগীর অবস্থা জানানো হবে।
এইস বাংলাদেশ এবং যুক্তরাজ্য ভিত্তিক গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর সাবস্ট্যান্স ইউজ রিসার্চ লিমিটেডের সম্মিলিতভাবে প্রস্তাবিত ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালের জন্য ‘ইন্টারভেনশন টু অ্যাসেস দ্য লং টার্ম হেলথ ইফেক্টস অব স্মোকিং সেসেশন এমং টাইপ-২ ডায়াবেটিস উইথ স্মোকিং’ শিরোনামের প্রোটোকল তৈরি করেছে। সাভারের এনাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল প্রস্তাবিত গবেষণার জন্য ক্লিনিক্যাল পার্টনার হিসেবে কাজ করছে। ফাউন্ডেশন ফর এ স্মোক-ফ্রি ওয়ার্ল্ড এ গবেষণা প্রোটোকল তৈরিতে সহায়তা প্রদান করেছে।
এইসের হেলথ স্পেশালিস্ট ডা. আস-সাবা হোসেনের পরিচালনায় প্যানেল আলোচনায় অংশ নেন এনাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক শামস মো. এনাম, সিশুরের হেড অফ লনজিটিউডিনাল রিসার্চ ডা. ফারহানা হাসিন, স্টেট ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশের পাবলিক হেলথ বিভাগের প্রধান প্রফেসর ড. হাসনাত এম আলমগীর ও জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ডা. ফায়াজুল ইসলাম।
অনুষ্ঠানে অন্যদের মধ্যে এনাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ডায়াবেটিস ও এন্ডোক্রাইনোলোজি বিভাগের প্রধান প্রফেসর ডা. মো. শাহজামাল খান, অ্যাসোসিয়েশন ফর কমিউনিটি এমপাওয়ারমেন্টের হেড অব রিসার্চ আসিফ মঈনুর চৌধুরী, অ্যাসোসিয়েশন ফর কমিউনিটি এমপাওয়ারমেন্টের প্রেসিডেন্ট পারভীন এস হুদা উপস্থিত ছিলেন। স্বাগত বক্তব্য দেন এইসের নির্বাহী পরিচালক তানভীর হোসেন।
এএএম/ইএ/জিকেএস