ভিডিও EN
  1. Home/
  2. স্বাস্থ্য

স্বাস্থ্যখাতে ৩ বছরে ৭০ হাজার জনবল নিয়োগ হয়েছে: স্বাস্থ্যমন্ত্রী

নিজস্ব প্রতিবেদক | প্রকাশিত: ০৬:১৯ পিএম, ১৫ মে ২০২৩

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে গত ১০ বছরে বাংলাদেশের স্বাস্থ্যখাতে ব্যাপক উন্নয়ন হয়েছে উল্লেখ করে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক বলেছেন, গত ৩ বছরে স্বাস্থ্যসেবার মান বৃদ্ধি করতে নতুন করে প্রায় ৭০ হাজার জনবল নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে ২০ হাজার চিকিৎসক, ৩০ হাজার নার্স এবং ২০ হাজার অন্যান্য স্বাস্থ্যকর্মী নিয়োগ দেওয়া হয়েছে।

সোমবার (১৫ মে) সকালে জাপানের নাগাসাকি ইউনিভার্সিটি স্কুল অব মেডিসিন মেমোরিয়াল হলে ‘ইন্টারন্যাশনাল সিম্পোজিয়াম, অ্যাডভান্সিং দ্য গ্লোবাল হেলথ এজেন্ডা ফ্রম নাগাসাকি টু দ্য ওয়ার্ল্ড’ শীর্ষক সম্মেলনে তিনি এ কথা বলেন। নাগাসাকি বিশ্ববিদ্যালয় এ সম্মেলনের আয়োজন করে।

স্বাস্থ্যমন্ত্রী বাংলাদেশের স্বাস্থ্য ব্যবস্থার উন্নয়নে জাপান সরকার ও বিশ্বব্যাংক ব্যাপক ভূমিকা রেখেছে বলেও জানান।

বাংলাদেশের হাসপাতাল সেবার মান বৃদ্ধি প্রসঙ্গে স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, দেশের প্রায় ৫০০টি উপজেলায় ২৫ বেড থেকে বর্তমানে ৫০ বেডের আধুনিক হাসপাতাল করা হয়েছে। প্রতিটি জেলা হাসপাতালকে ২৫০ বেডে উন্নীত করা হয়েছে। ২২টি ৫০০ বেডের আধুনিক মানের চিকিৎসা ইনস্টিটিউট, ১ হাজার বেডের ৩৭টি মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল এবং ৫টি মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় করা হয়েছে। এসব হাসপাতালের চিকিৎসাসেবার মান সরেজমিনে পর্যবেক্ষণ করতে তার নেতৃত্বে একটি উচ্চ পর্যায়ের প্রতিনিধিদল দেশের ৮ বিভাগের স্বাস্থ্যসেবার মান পরিদর্শন করেছেন বলে জানান মন্ত্রী।

মন্ত্রী বলেন, প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবার মান বৃদ্ধিতে দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে ১৪ হাজার ২৮০টি কমিউনিটি ক্লিনিকে বিনামূল্যে ৩২ রকমের ওষুধ দেওয়া হয়। এ ক্লিনিকগুলোতে প্রায় ৫০ হাজার লোকবল স্বাস্থ্যসেবা দিয়ে যাচ্ছেন। এর সঙ্গে ৪ হাজার ৬৫০টি ইউনিয়ন স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্র থেকে প্রত্যন্ত অঞ্চলের মানুষদের বিনামূল্যে ওষুধ, পরামর্শ ও ডেলিভারি চিকিৎসা সেবা দেওয়া হচ্ছে।

স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সময়োপযোগী বিভিন্ন উদ্যোগ গ্রহণের ফলে দেশের জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব হয়েছে উল্লেখ করে জাহিদ মালেক বলেন, স্বাধীনতার পর দেশের প্রতিটি প্রাপ্তবয়স্ক বিবাহিত নারী গড়ে ৬ দশমিক ৯ জন সন্তান জন্ম দিতেন। বর্তমানে প্রতিটি নারী গড়ে ২ জন সন্তান জন্ম দিচ্ছেন। এতে দেশে জনসংখ্যা বৃদ্ধিতে ভারসাম্য রক্ষা পেয়েছে। বাংলাদেশ শিশুমৃত্যু ও মাতৃমৃত্যু হ্রাসে অভাবনীয় সাফল্য লাভ করায় জাতিসংঘের কাছ থেকে ২০১০ সালে এমডিজি পুরস্কার লাভ করে।

malek-2.jpg

টিকা প্রদানে বাংলাদেশের সফলতা তুলে ধরে স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, ১৯৮৪ সালে টিকাদানে বাংলাদেশের সফলতা ছিল মাত্র ২ ভাগের নিচে। বর্তমানে ২০২২ সালে সেটি দাঁড়িয়েছে ৯২ শতাংশে। বর্তমানে দেশের ৯২ শতাংশ ১২-১৩ বছর বয়সী শিশু যক্ষ্মা, হাম, পোলিও, টিটেনাস, হেপাটাইটিস রোগ মুক্ত।

দেশে ওষুধ শিল্পের ব্যাপক প্রসার ঘটেছে জানিয়ে স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, দেশে বর্তমানে ৩ দশমিক ১ বিলিয়ন ডলারের ওষুধ উৎপাদন হচ্ছে। এসব ওষুধ দেশের ৯৭ ভাগ চাহিদা মিটিয়ে বিশ্বের প্রায় ৮০টি দেশে রপ্তানি করে বাংলাদেশ বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করছে।

করোনা মোকাবিলায় বাংলাদেশ বিশ্বে পঞ্চম স্থান ও দক্ষিণ এশিয়ায় চ্যাম্পিয়ন হয়েছে উল্লেখ করে স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, করোনায় এত বড় সাফল্যের মূলে হচ্ছে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সময়োপযোগী ও দূরদর্শী সিদ্ধান্ত গ্রহণ। স্বল্প সময়ে অধিক জনবল কাজে লাগিয়ে দেশের লক্ষ্যমাত্রার ৯০ শতাংশ মানুষকে টিকা দেওয়া হয়েছে। এ টিকার প্রায় ৩৭ কোটি ডোজ মানুষকে বিনামূল্যে দেওয়া হয়েছে। এর ফলে বাংলাদেশ করোনায় কম ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে দ্রুত ঘুরে দাঁড়িয়েছে। করোনায় দেশের হাসপাতালগুলোতে থাকা মাত্র ৫৭৮টি আইসিইউ বেড থেকে বর্তমানে ২ হাজার আইসিইউ বেডে উন্নীত করা হয়েছে। মাত্র ১টি সেন্ট্রাল লাইন অক্সিজেন প্ল্যান্ট থেকে দেশে এখন ১২০টি সেন্ট্রাল অক্সিজেন লাইন করা হয়েছে। এতে করে করোনার দুর্যোগকাল থেকে এখন পর্যন্ত কোনো হাসপাতালেই অক্সিজেন সংকট দেখা দেয়নি।

এছাড়া আগামীতে ইউনিভার্সেল হেলথ কাভারেজের আওতায় সারাদেশের স্বাস্থ্য ব্যবস্থায় আমূল পরিবর্তন আনার পরিকল্পনা হাতে নেওয়া হয়েছে। বর্তমানে দেশে মোট মৃত্যুর প্রায় ৮০ শতাংশ অসংক্রমক রোগের কারণে মারা যাচ্ছে। এজন্য সংক্রমক রোগের পাশাপাশি অসংক্রমক রোগের চিকিৎসা ব্যবস্থায় উন্নয়ন ঘটাতে দেশের পাশাপাশি আন্তর্জাতিক পর্যায়ের আর্থিক সহায়তার প্রয়োজনীতা অনেক বেশি প্রয়োজন বলে উল্লেখ করেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক। বাংলাদেশের মতো একটি ঘনবসতিপূর্ণ দেশের স্বাস্থ্য ব্যাবস্থার উন্নয়ন ঘটাতে জাপানসহ, বিশ্বব্যাংক ও বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা আরও জোড়ালো ভূমিকা রাখবে বলে সম্মেলনে স্বাস্থ্যমন্ত্রী আশাবাদ ব্যক্ত করেন।

নাগাসাকি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিনিধি নায়োকো ইয়ামামোতোর সঞ্চালনায় সম্মেলনে সূচনা বক্তব্য রাখেন নাগাসাকি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রেসিডেন্ট কোহনো। এতে মূল প্রবন্ধ তুলে ধরেন নাগাসাকি বিশ্ববিদ্যালয় এবং লন্ডন স্কুল অব হাইজেনি অব ট্রপিক্যাল মেডিসিনের পক্ষে প্রফেসর কারা হ্যানসন। বাংলাদেশের পক্ষে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক সম্মেলনে নেতৃত্ব দেন। এছাড়া জাপান, কেনিয়া, ইন্দোনেশিয়া, কম্বোডিয়ার স্বাস্থ্য প্রতিনিধিরা সম্মেলনে বক্তব্য রাখেন।

এতে বাংলাদেশের স্বাস্থ্যশিক্ষা বিভাগের সচিব আজিজুর রহমান ও স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক এবিএম খুরশীদ আলম অংশ নেন। সম্মেলনে বিভিন্ন দেশের স্বাস্থ্য প্রতিনিধিরা স্বাস্থ্যসেবায় তাদের নিজ দেশ ও সংস্থার কার্যক্রম তুলে ধরেন।

এএএম/ইএ/এমএস