ভিডিও EN
  1. Home/
  2. স্বাস্থ্য

দেশে ৭.০২ শতাংশ শিশু ত্রুটি নিয়ে জন্ম নেয়: গবেষণা

নিজস্ব প্রতিবেদক | প্রকাশিত: ০৮:২৮ পিএম, ০২ এপ্রিল ২০২৩

দেশে প্রতি বছর শতকরা ৭.০২ ভাগ শিশু নানা শারীরিক ত্রুটি নিয়ে ভূমিষ্ঠ হচ্ছে বলে এক গবেষণায় উঠে এসেছে। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) নবজাতক বিভাগে ২০১৪ থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত চিকিৎসা নিতে আসা ১১ হাজার ২৩২ জন নবজাতকের ওপর এ গবেষণা পরিচালিত হয়।

গবেষণায় দেখা গেছে, গত ৮ বছরে বিএসএমএমইউয়ের নবজাতক বিভাগে চিবিৎসা নিতে আসা শিশুদের মধ্যে নানা শারীরিক ত্রুটি নিয়ে জন্মগ্রহণ করেছে ৭৮৯টি শিশু। এ সংখ্যা মোট শিশুর ৭.০২ শতাংশ, যা উন্নত বিশ্বের জন্মগত ত্রুটির হারের চেয়ে বেশি।

রোববার (২ এপ্রিল) দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ ডা. মিল্টন হলে ‘বিশ্ব জন্মগত ত্রুটি দিবস-২০২৩’ উপলক্ষে আয়োজিত এক সেমিনার ও আলোচনা সভায় এ তথ্য জানানো হয়।

সেমিনারে জানানো হয়, পৃথিবীব্যাপী জন্মগত ত্রুটির হার প্রতি ১০০ জনে ৩ থেকে ৬ জন (৩-৬ শতাংশ)। বিশ্বে প্রতি ৩৩ জন শিশুর মধ্যে ১ জন জন্মগত ত্রুটি নিয়ে জন্মায়। সারাবিশ্বের মধ্যে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় জন্মগত ত্রুটির প্রবণতা সবচেয়ে বেশি। প্রতি বছর শুধুমাত্র জন্মগত ত্রুটির জন্য জন্মের ২৮ দিনের মধ্যে প্রায় ৩ লাখ শিশু মারা যায়। শিশুমৃত্যুর এ প্রভাব সাসটেইনেবল ডেভেলপমেন্ট গোলের (এসডিজি) লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে অনেকাংশে বিরূপ প্রভাব ফেলে।

আরও পড়ুন>> ‘ভুল’ চিকিৎসায় পুড়লো নবজাতকের দুই পা

আলোচনা সভায় জন্মগত ত্রুটির হার নির্ণয়, ত্রুটির কারণ, প্রতিরোধমূলক পরিকল্পনার ওপর আলোচনা হয়। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বিএসএমএমইউয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ডা. মো. শারফুদ্দিন আহমেদ।

ডা. মো. শারফুদ্দিন আহমেদ নবজাতকদের জন্মগ্রত ত্রুটি প্রতিরোধ এবং এর চিকিৎসার ওপর গুরুত্বারোপ করে বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের বর্তমান প্রশাসন উন্নত চিকিৎসাসেবা ও প্রশিক্ষণ নিশ্চিত করতে একের পর এক নিত্যনতুন ল্যাব প্রতিষ্ঠা করে যাচ্ছে। জেনেটিক ল্যাবও প্রতিষ্ঠা করা হবে। তবে, জন্মগ্রত ত্রুটির ক্ষেত্রে ট্রান্সজেন্ডারের বিষয়ে করণীয় কী হতে পারে তাও বিবেচনায় রাখতে হবে।

তিনি আরও বলেন, রোগীদের সুবিধার্থে ও চিকিৎসাসেবা কার্যক্রম আরও সম্প্রসারণের লক্ষ্যে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে পূর্ণাঙ্গরূপে ডাবল শিফটে ওটি (অস্ত্রোপচার বা সার্জারি) কার্যক্রম চালু করা হবে। এজন্য প্রয়োজনীয় অ্যানেসথেশিওলজিস্ট নিশ্চিত করা হবে। যাতে করে অ্যানেসথেশিয়া দেওয়ার অভাবে ওটি কার্যক্রম সেবা ব্যাহত না হয়।

সভায় জন্মগত ত্রুটি চিকিৎসার চেয়ে প্রতিরোধের ওপর গুরুত্ব দেওয়া হয়। যেমন গর্ভ পূর্ববর্তী এবং গর্ভকালীন চেকআপ, গর্ভকালীন (১৮-২২ সপ্তাহের মধ্যে) আল্ট্রাসনোগ্রামের মাধ্যমে জন্মগত ত্রুটি নির্ধারণ, গর্ভকালীন অসংক্রামক ব্যাধি যেমন- উচ্চ রক্তচাপ, ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ, অল্প বয়সে এবং অধিক বয়সে গর্ভনিরোধ, আয়োডিনযুক্ত লবণের মতো খাবারের সঙ্গে ফলিক অ্যাসিড মেশানোর মাধ্যমে বিভিন্ন ধরনের জন্মগত ত্রুটি প্রতিরোধ সম্ভব।

বিএসএমএমইউয়ের নবজাতক বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক অধ্যাপক ডা. সঞ্জয় কুমার দের সঞ্চালনায় সভায় জন্মগত ত্রুটির বিষয়ে বিশেষজ্ঞ মতামত প্রদান করেন বাংলাদেশ কলেজ অব ফিজিশিয়ানস্ অ্যান্ড সার্জনস্ (বিসিপিএস)-এর সভাপতি অধ্যাপক মোহাম্মদ সহিদুল্লা।

আরও পড়ুন>> ‘এখন বিকেলেও হাসপাতাল ডাক্তারশূন্য থাকবে না’

এসময় বিএসএমএমইউয়ের ফিটোম্যাটার্নাল মেডিসিন বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. নাহরীন আক্তার, শিশু সার্জারি বিভাগের অধ্যাপক ডা. তোসাদ্দেক হোসেন সিদ্দিকী, লাইন ডিরেক্টর ডা. সাইদুজ্জামান, ন্যাশনাল কনসালটেন্ট ডা. নুরুল ইসলাম প্রমুখসহ বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা, স্বাস্থ্য অধিদপ্তর, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন পর্যায়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা, শিক্ষক ও চিকিৎসক উপস্থিত ছিলেন। জন্মগত ত্রুটি সম্পর্কিত মূল প্রবন্ধ উপস্থাপনা করেন সহকারী অধ্যাপক ডা. ইসমাত জাহান।

বিশ্বের বিভিন্ন দেশের মতো বাংলাদেশেও জন্মগত ত্রুটি নিয়ে একটি প্রকল্প রয়েছে। সেটি হলো ন্যাশনাল নিওনেটাল অ্যান্ড পেরিনেটাল ডাটাবেজ (এনএনপিডি) অ্যান্ড নিউবর্ন বার্থ ডিফেক্ট (এনবিবিডি) সার্ভিলেন্স ইন বাংলাদেশ- সংক্ষেপে ‘বার্থ ডিফেক্ট সার্ভিলেন্স ইন বাংলাদেশ। বাংলাদেশের ২০টি সরকারি বেসরকারি হাসপাতাল ও ইনস্টিটিউটে এ প্রকল্প পরিচালিত হয়ে আসছে। প্রকল্পটিতে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা, এসইএআরও এবং স্বাস্থ্য অধিদপ্তর সহায়তা করে। আর বিএসএমএমইউয়ের নবজাতক বিভাগ প্রকল্পটির কার্যক্রম প্রত্যক্ষভাবে পরিচালনা করে।

এএএম/ইএ/জিকেএস