বুস্টার ডোজে আগ্রহ কম মানুষের
করোনাভাইরাসের সংক্রমণ রোধে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর থেকে বুস্টার সপ্তাহ ঘোষণার দ্বিতীয় দিনেও টিকা কেন্দ্রে তেমন ভিড় চোখে পড়েনি। কেন্দ্রগুরোতে দেখা যায়নি কোনো লাইন। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, করোনা সংক্রমণ ও মৃত্যু কমে আসায় টিকা গ্রহণে আগ্রহ কমেছে।
রোববার (৫ জুন) সরজমিনে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব বিশ্ববিদ্যালয় (বিএসএমএমইউ) টিকাকেন্দ্র ও অস্থায়ী কেন্দ্রে ঘুরে দেখা যায়, কেন্দ্রগুলোতে স্বাভাবিক সময়ের মতো টিকাদান কর্মসূচি চলমান। তবে গণটিকা কার্যক্রমে বাড়েনি উপস্থিতি।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বিশ্বের অন্যান্য দেশে করোনার প্রকোপ বাড়লেও দেশে করোনা পরিস্থিতি অনেক ভালো। সবমিলিয়ে মানুষের মধ্যে টিকায় আস্থা বাড়লেও বুস্টার ডোজ নিতে ঢিলেঢালা ভাব দেখা যাচ্ছে। প্রচারের অভাবে অধিকাংশ কেন্দ্রে টিকাগ্রহীতার উপস্থিতি কম। ফলে ভোগান্তি ছাড়াই সহজে মিলছে টিকা।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা বলছেন, ধীরে ধীরে টিকাকেন্দ্রে ভিড় বাড়বে। একই সঙ্গে বাড়ানো হবে প্রচার-প্রচারণা। তবে বিশেষ ক্যাম্পেইনের মেয়াদ বাড়ছে না।
রোববার দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে বিএসএমএমইউ টিকাকেন্দ্রে বুস্টার ডোজ নিতে আসেন রাজধানীর আজিমপুর কবরস্থান এলাকার বাসিন্দা সোহেল রানা। তিনি জানান, দ্বিতীয় ডোজ নেওয়ার দিন তাকে দীর্ঘসময় লাইনে অপেক্ষা করতে হয়েছিল। ভিড় ছিল খুব। তবে আজ আসা মাত্রই টিকা পেয়েছেন তিনি। কোনো ধরনের ঝমেলা পোহাতে হয়নি তাকে।
এই কেন্দ্রের সমন্বয়ক ডা. মো. দাউদ আহমেদ তালুকদার বলেন, রোববার দুপুর ২টা পর্যন্ত এই কেন্দ্রে ৬৪৮ জনকে বুস্টার ডোজ দেওয়া হয়েছে। এর আগের দিনও প্রায় এই সংখ্যাক মানুষ টিকা নিয়েছেন। করোনা নিয়ন্ত্রণে চলে আসায় অনেকেই ইচ্ছেকৃতভাবে টিকা নিচ্ছেন না। করোনা নিয়ন্ত্রণে থাকায় বুস্টারপ্রতাশীদের মধ্যে একটা অংশ বড় মনে করছেন টিকা নেওয়ার দরকার নেই। এছাড়া অফিস, আদালত ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেওয়ার কারণে টিকা নেওয়ার পর একদিন বিশ্রাম নেওয়ার সুযোগ পাবে না ভোবে টিকা নিচ্ছেন না অনেকেই। বুস্টারের ক্যাম্পেইনে তেমন প্রভাব তৈরি করতে পারেনি জনমনে।
তিনি আরও বলেন, আমার কেন্দ্রে প্রথম দুই ডোজ গ্রহণকারীদের বেশিরভাগই বুস্টার ডোজ নিয়েছেন। তবে এখনো যারা বাকি আছেন তারা আসছেন না। বর্তমানে যারা আসছেন, তারা অধিকাংশই অন্য কেন্দ্র থেকে আসা। টিকার ক্যাম্পেইন বেশি বেশি হওয়া দরকার বলে জানান তিনি।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য বলছে, গত বছরের ১৯ ডিসেম্বর দেশে বুস্টার ডোজ দেওয়া শুরু হয়। এ পর্যন্ত মোট বুস্টার ডোজ পেয়েছেন ১ কোটি ৬৭ লাখ মানুষ। প্রথম ডোজ নেওয়া টিকাগ্রহীতার ১৪ দশমিক ২৩ শতাংশ বুস্টার ডোজের আওতায় আনা সম্ভব হয়েছে। দ্বিতীয় ডোজ সম্পন্ন হয়েছে এমন সাড়ে ৪ কোটি মানুষ বুস্টার ডোজের অপেক্ষায় রয়েছেন। দ্রুত সময়ের মধ্যে এ জনগোষ্ঠীকে টিকার আওতায় আনতে সপ্তাহব্যাপী বিশেষ ক্যাম্পেইন পরিচালনা করছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। তবে প্রচারণার অভাবে এই ক্যাম্পেইনে টিকাদানে গতি বাড়েনি।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের করোনাভ্যাকসিন ব্যবস্থাপনা কমিটির সদস্যসচিব শামসুল হক বলেন, আস্তে আস্তে টিকাগ্রহীতার আগ্রহ বাড়বে। টিকা নিতে মানুষের আগ্রহ কমে এসেছে, এটা আমরা লক্ষ্য করছি। এর প্রধান কারণ দেশে করোনা সংক্রমণ অনেকটাই নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। মানুষ নিজেদের ইচ্ছেমতো চলাফেরা করছেন। অনেকেই স্বাস্থ্যবিধি মানছেন না। এমনকি টিকা নেওয়ার ক্ষেত্রেও আগ্রহ দেখাচ্ছেন না।
তিনি আরও বলেন, দেশের মানুষের মধ্যে রোগী বেশি দেখা দিলে সেবা নেওয়ার প্রবণতা দেখা দেয়। করোনা নিয়ন্ত্রণে থাকায় টিকা নিতে আসছেন না তারা। তবে সংক্রমণ আবার বাড়লে অনেক মানুষ টিকা নিতে পারবেন না।
বিশেষ ক্যাম্পেইনের সময় বাড়ছে না জানিয়ে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের এই কর্মকর্তা বলেন, লক্ষ্য পূরণ না হলেও বাড়ছে না ক্যাম্পেইনের মেয়াদ। আগামী ১০ জুনের মধ্যেই এই কর্মসূচি শেষ হবে। তবে টিকাগ্রহীতাদের আগ্রহ বাড়াতে প্রচার-প্রচারণ আরও বাড়ানো হবে।
স্বাস্থ্য অধিদফতর জানিয়েছে, সারাদেশে মোট ১৬ হাজার ১৮১ টিকাকেন্দ্রে বুস্টার ডোজ টিকা দেওয়া হয়। এর মধ্যে ৬২৩টি স্থায়ী কেন্দ্র ও ১৫ হাজার ৫৫৮টি অস্থায়ী কেন্দ্র। স্থায়ী কেন্দ্রগুলোতে ৭ দিন ও অস্থায়ী কেন্দ্রগুলোতে ২ দিন টিকাদান কার্যক্রম চলবে। অস্থায়ী কেন্দ্রে টিকা দেওয়ার তারিখ স্থানীয় পর্যায়ে প্রচার-প্রচারণা ও মাইকিং করে জানানো হয়। একযোগে ৪৫ হাজার ৫৩৫ জন টিকাদান কর্মী ও স্বেচ্ছাসেবী কাজ করছেন। দ্বিতীয় ডোজের টিকা নেওয়ার পর ৪ মাস পার হয়েছে এমন ১৮ বছর ও এর বেশি বয়সের নাগরিকরা বুস্টার ডোজ পাবেন।
এএএম/ইএ