চট্টগ্রামে ১১ রোগীর ৮ জনেরই ওমিক্রন শনাক্ত: গবেষণা
করোনাভাইরাসের (কোভিড-১৯) নতুন ধরন ওমিক্রনের প্রভাবে সম্প্রতি চট্টগ্রামে ব্যাপকভাবে সংক্রমণ বেড়েছে। বন্দর নগরীতে শনাক্ত রোগীদের প্রায় ৭৩ শতাংশই ওমিক্রনে আক্রান্ত বলে সম্প্রতি এক গবেষণায় উঠে এসেছে। গেলো বছরের ২৫ ডিসেম্বর থেকে জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহ পর্যন্ত ১১ জন করোনায় আক্রান্ত রোগীর নমুনা জিনোম সিকোয়েন্সিং করে এই তথ্য পাওয়া যায়।
চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতাল এবং চট্টগ্রাম মা ও শিশু হাসপাতাল থেকে সংগ্রহ করা এসব নমুনার মধ্যে আটটি ওমিক্রন ভ্যারিয়েন্ট বলে গবেষকরা নিশ্চিত করেছেন। শুক্রবার (২১ জানুয়ারি) চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতালের সিনিয়র মেডিসিন কনসালট্যান্ট ডা. আব্দুর রব মাসুম জাগো নিউজকে এ তথ্য নিশ্চিত করেন।
তিনি জানান, গত বছরের নভেম্বর শুরু থেকে ২৫ ডিসেম্বর পর্যন্ত ১৯ জন করোনা রোগীর নমুনা জিনোম সিকোয়েন্সিং করা হয়। এদের সবাই করোনার ডেল্টা ভ্যারিয়েন্টে আক্রান্ত ছিল। এরপর থেকে জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহ পর্যন্ত আরও ১১ জনের জিনোম সিকোয়েন্সিং করা হয়। এতে আটজনের ওমিক্রন শনাক্ত হয়েছে।
এসব নমুনা বিশ্লেষণের তথ্য এরই মধ্যে জিনোম সিকোয়েন্সিংয়ের আন্তর্জাতিক ডাটাবেজ জার্মানির গ্লোবাল ইনিশিয়েটিভ অন শেয়ারিং অল ইনফ্লুয়েঞ্জা ডেটায় (জিআইএসএইড) প্রকাশিত হয়েছে বলে জানান গবেষকরা।
গবেষকরা জানান, নভেম্বর থেকে ২৫ ডিসেম্বর পর্যন্ত ডেল্টা ভ্যারিয়েন্টে আক্রান্ত ১৯ রোগীর মধ্যে নবজাতক থেকে ৮০ বছরের বৃদ্ধ রোগী ছিল। কিন্তু ২৫ ডিসেম্বরের পর যে ১১ জনের নমুনার জিনোম সিকোয়েন্সিং করে প্রায় ৭৩ শতাংশ রোগী ওমিক্রন ভ্যারিয়েন্টে আক্রান্ত পাওয়া যায়। তাদের মধ্যে দুজনের শরীরে ওমিক্রনের সাম্প্রতিক ধরন ‘বিএ২’ বা ‘স্টেলথ ওমিক্রন’ শনাক্ত হয়। যা জানুয়ারির শুরুর দিকে কয়েকটি দেশে ছড়িয়ে পড়ে। যুক্তরাষ্ট্রের টেক্সাস ও হিউস্টন, ভারত, চীন ও ওমানে এই ভ্যারিয়েন্টটি পাওয়া গেছে।
গবেষকরা আরও জানান, নতুন এই ভ্যারিয়েন্টটি খুব বেশি বিপজ্জনক নয়। তবে এর স্পাইক প্রোটিনে বেশ কিছু পরিবর্তন দেখা গেছে। যে কারণে এই ভ্যারিয়েন্ট শনাক্ত করা জটিল বলে মন্তব্য করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের সেন্টার ফর ডিজিজ কন্ট্রোলের (সিডিসি) গবেষকরা।
চট্টগ্রামে এটিই প্রথম ‘বিএ২’ শনাক্তকরণের তথ্য বলে জানান গবেষকরা। তারা বলেন, ওমিক্রনে আক্রান্ত রোগীদের মধ্যে ৯০ শতাংশের বেশি দেখা গেছে, গলা ব্যথা ও গলার স্বর বিকৃত হয়ে যাওয়ার লক্ষ্মণ। ৮৫ শতাংশ রোগীর শরীরের বিভিন্ন অংশে ব্যথা, মাথা ব্যথা এবং ৮০ ভাগের জ্বর হতে দেখা গেছে।
তারা আরও বলেন, ওমিক্রনে আক্রান্ত সবার বয়স ২১ বছরের ঊর্ধ্বে। শিশু ও কিশোরদের মধ্যে এখনো তা শনাক্ত হয়নি। তবে এত অল্প নমুনার বিশ্লেষণে কোনো উপসংহারে আসা সম্ভব নয়। অন্তত কয়েকশ নমুনার জিনোম সিকোয়েন্সিং করলে ধরনটির চরিত্র নিয়ে ভালো ধারণা পাওয়া যাবে।
জানা গেছে, গত বছরের এপ্রিল থেকে নিয়মিতভাবে জিনমিক সার্ভিলেন্স প্রজেক্টের আওতায় চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতাল এবং মা ও শিশু হাসপাতালের রোগীদের জিনোম সিকোয়েন্সিং করা হচ্ছে। এতে নেতৃত্ব দেন- চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতালের মেডিসিন কনসালট্যান্ট ও করোনা ইউনিটের চিকিৎসক ডা. এইচ এম হামিদুল্লাহ মেহেদী ও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড বায়োটেকনোলজি বিভাগের শিক্ষক ড. আদনান মান্নান।
প্রকল্পের সহ-পরিচালক হিসেবে আছেন চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতালের সিনিয়র মেডিসিন কনসালট্যান্ট ডা. আব্দুর রব মাসুম, মা ও শিশু হাসপাতালের মাইক্রোবায়োলজি বিভাগের অধ্যাপক ডা. সঞ্জয় বিশ্বাস এবং ডা. নাহিদ সুলতানা, আইসিডিডিআর,বির ভাইরোলজি বিভাগের বিজ্ঞানী ড. মুস্তাফিজুর রহমান ও ড. মোহাম্মদ এনায়েত হোসেন।
প্রকল্পের সহায়তা ও পৃষ্ঠপোষকতা করছে কানাডার ডালহৌসি বিশ্ববিদ্যালয়ের ল্যাবরেটরি অব ইমার্জিং ইনফেকশাস ডিজিজ এবং তথ্য-উপাত্ত বিশ্লেষণের দায়িত্বে আছেন অধ্যাপক ডেভিড কেলভিন ও আব্দুল্লাহ মাহমুদ আল রাফাত।
প্রকল্পে সহকারী গবেষক হিসেবে রয়েছেন চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতালের ডা. রাজদ্বীপ বিশ্বাস, ডা. মিনহাজুল হক এবং মা ও শিশু হাসপাতালের ডা. ফাহিম হাসান রেজা। সিকোয়েন্সিংয়ের সামগ্রিক তত্ত্বাবধান করছেন আইসিডিডিআর,বির ভাইরোলজি ল্যাবরেটরির বিজ্ঞানীরা।
মিজানুর রহমান/এআরএ/এএসএম