পাঁচদিনে শনাক্ত তিন সহস্রাধিক, ওমিক্রনে কত?
দেশে আবারও মহামারি করোনাভাইরাসের সংক্রমণ বাড়ছে। চলতি বছরের প্রথম পাঁচদিনেই ৩ হাজার ২৫৮ জন করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। সর্বশেষ গত ২৪ ঘণ্টায় ২১ হাজার ৩০২টি নমুনা সংগ্রহ ও ২১ হাজার ২৫১টি নমুনা পরীক্ষা করে ৮৯২ জনের করোনা শনাক্ত হয়। নমুনা পরীক্ষার বিপরীতে শনাক্তের হার ৪ দশমিক ২০ শতাংশ। মাসখানেক আগেও শনাক্তের হার দেড় থেকে দুই শতাংশের নিচে ছিল।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, চলতি বছরের প্রথম দিন ১ জানুয়ারি থেকে সংক্রমণের হার বাড়তে থাকে। বছরের প্রথম দিন ৩৭০ জন, ২ জানুয়ারি ৫৫৭ জন, ৩ জানুয়ারি ৬৬৪ জন, ৪ জানুয়ারি ৭৭৫ জন এবং ৫ জানুয়ারি ৮৯২ জনের করোনা শনাক্ত হয়। শনাক্তের হার যথাক্রমে ২ দশমিক ৪৩ শতাংশ, ২ দশমিক ৯১ শতাংশ, ৩ দশমিক ৩৭ শতাংশ, ৩ দশমিক ৯১ শতাংশ এবং ৪ দশমিক ২০ শতাংশে দাঁড়ায়।
বিশ্বব্যাপী করোনার নতুন ধরন ওমিক্রনের ব্যাপক সংক্রমণ ঘটেছে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্যানুসারে ২০২১ সালের ডিসেম্বরে ওমিক্রনে আক্রান্ত ৭ জন রোগীর সন্ধান পাওয়া গেছে। নতুন বছর ২০২২ সালের প্রথম পাঁচদিনে তিন হাজারের বেশি নতুন রোগী শনাক্ত হলেও কোন ধরনের ভ্যারিয়েন্ট—ডেল্টা, ওমিক্রনে বা অন্য কোনো ভ্যারিয়েন্টে আক্রান্ত কি না তার সঠিক তথ্য নেই অধিদপ্তরে!
নাম প্রকাশ না করার শর্তে করোনা প্রতিরোধে গঠিত জাতীয় কারিগরি পরামর্শক কমিটির একাধিক সদস্য বলেন, নতুন করে সংক্রমণ বাড়ার প্রেক্ষিতে বেশি বেশি করে সংক্রমিত রোগীদের নমুনার জিনোম সিকোয়েন্সিং করা অত্যাবশ্যক হলেও তা করার জন্য প্রয়োজনীয় সংখ্যক ল্যাবরেটরি নেই। হাতেগোনা স্বল্প সংখ্যক ল্যাবরেটরিতে র্যান্ডমলি কিছু জিনোম সিকোয়েন্সিং হচ্ছে, যা প্রয়োজনের তুলনায় খুবই কম।
জাতীয় কারিগরি পরামর্শক কমিটির সদস্য ও স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদের সভাপতি অধ্যাপক ডা. এম ইকবাল আর্সলান বলেন, ওমিক্রনে আক্রান্তের সংখ্যা জানার জন্য অধিক সংখ্যক জিনোম সিকোয়েন্সিং করা প্রয়োজন। প্রয়োজনের তুলনায় কম জিনোম সিকোয়েন্সিং হচ্ছে এমন অভিমত ব্যক্ত করে তিনি জাতীয় পরামর্শক কমিটির সুপারিশে সরকারঘোষিত ১৫ দফা নির্দেশনা কঠোরভাবে পালন করার আহ্বান জানান।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিচালক (রোগ-নিয়ন্ত্রণ) অধ্যাপক ডা. মো. নাজমুল ইসলামের কাছে সংক্রমণ বাড়ার এ পরিস্থিতিতে ওমিক্রন আক্রান্তের সংখ্যা কত তা জানতে জিনোম সিকোয়েন্সিং করা হচ্ছে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, জিনোম সিকোয়েন্সিং একটি সময়সাপেক্ষ ব্যাপার, যা আইইডিসিআর ও অন্যান্য প্রতিষ্ঠান করছে। যখনই ফলাফল পাওয়া যাচ্ছে তখনই ওয়েবসাইটের মাধ্যমে জানানো হচ্ছে। এখন পর্যন্ত জিনোম সিকোয়েন্সিং সন্তোষজনক বলে দাবি করেন তিনি।
অধ্যাপক ডা. মো. নাজমুল ইসলাম বলেন, ওমিক্রন বা ডেল্টা বা অন্য যেকোনো ভ্যারিয়েন্টের সংক্রমণ হোক না কেন সংক্রমণ রোধে ব্যক্তিগত শিষ্টাচার ও প্রয়োজনীয় স্বাস্থ্যবিধি (মাস্ক পরিধান, সাবান বা স্যানিটাইজার দিয়ে বারবার হাত ধোয়া, জনসমাগম এড়িয়ে চলা ইত্যাদি) মেনে চলার বিকল্প নেই। এছাড়া সরকারঘোষিত ১৫ দফা নির্দেশনা মেনে চললে ওমিক্রনের সংক্রমণ ঠেকানো যাবে বলে তিনি মন্তব্য করেন।
ওমিক্রনের বিস্তার ঠেকাতে সরকারঘোষিত ১৫ নির্দেশনা
করোনার নতুন ধরন ওমিক্রনের বিস্তার রোধে ১৫ দফা নির্দেশনা দিয়েছে সরকার। গত মঙ্গলবার (৪ জানুয়ারি) এক সরকারি তথ্যবিবরণীতে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের নির্দেশনাগুলো জানানো হয়েছে। নির্দেশনাগুলো হলো-
১. ওমিক্রন আক্রান্ত দেশ থেকে আগত যাত্রীদের বন্দরে স্বাস্থ্য পরীক্ষা ও স্ক্রিনিং জোরদার করতে হবে।
২. সব ধরনের (সামাজিক/রাজনৈতিক/ধর্মীয় ও অন্যান্য) জনসমাগম নিরুৎসাহিত করতে হবে।
৩. প্রয়োজনে বাইরে গেলে প্রত্যেক ব্যক্তিকে বাড়ির বাইরে সর্বদা সঠিকভাবে নাক-মুখ ঢেকে মাস্ক পরাসহ সব স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা নিশ্চিত করতে হবে।
৪. রেস্তোরাঁয় বসে খাওয়ার ব্যবস্থা ধারণক্ষমতার অর্ধেক বা তার কম করতে হবে।
৫. সব ধরনের জনসমাবেশ, পর্যটন স্থান, বিনোদন কেন্দ্র, রিসোর্ট, কমিউনিটি সেন্টার, সিনেমা হল/থিয়েটার হল ও সামাজিক অনুষ্ঠানে (বিয়ে, বৌভাত, জন্মদিন, পিকনিক, পার্টি ইত্যাদি) ধারণক্ষমতার অর্ধেক বা তার কম সংখ্যক লোক অংশগ্রহণ করতে পারবে।
৬. মসজিদসহ সব উপাসনালয়ে মাস্ক পরিধানসহ অন্যান্য স্বাস্থ্যবিধি নিশ্চিত করতে হবে।
৭. গণপরিবহনে স্বাস্থ্যবিধি নিশ্চিত করতে হবে।
৮. আক্রান্ত দেশ থেকে আগত যাত্রীদের ১৪ দিন কোয়ারেন্টাইন নিশ্চিত করতে হবে।
৯. সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান (সব মাদরাসা, প্রাক-প্রাথমিক, প্রাথমিক, মাধ্যমিক, উচ্চ মাধ্যমিকসহ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, বিশ্ববিদ্যালয়) ও কোচিং সেন্টারে স্বাস্থ্যবিধি নিশ্চিত করতে হবে।
১০. সব স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠানে সেবাগ্রহীতা, সেবাদানকারী ও স্বাস্থ্যকর্মীদের সর্বদা সঠিকভাবে নাক-মুখ ঢেকে মাস্ক পরাসহ সব স্বাস্থ্যবিধি নিশ্চিত করতে হবে।
১১. যারা এখনো কোভিড-১৯ এর টিকা গ্রহণ করেননি টিকাকেন্দ্রে গিয়ে তাদের কোভিড-১৯ এর ১ম ও ২য় ডোজ নিতে হবে।
১২. করোনা উপসর্গ/লক্ষণযুক্ত সন্দেহজনক ও নিশ্চিত করোনা রোগীর আইসোলেশন ও করোনা পজিটিভ রোগীর ঘনিষ্ঠ সংস্পর্শে আসা অন্যদের কোয়ারেন্টাইনের ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে।
১৩. কোভিড-১৯ এর লক্ষণযুক্ত ব্যক্তিকে আইসোলেশনে রাখা এবং তার নমুনা পরীক্ষার জন্য স্থানীয় কর্তৃপক্ষের সাথে সমন্বয় করে সহায়তা করা যেতে পারে।
১৪. অফিসে প্রবেশ এবং অবস্থানকালীন বাধ্যতামূলকভাবে নাক-মুখ ঢেকে মাস্ক পরা নিশ্চিত করতে হবে। স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা দাপ্তরিকভাবে নিশ্চিত করতে হবে।
১৫. টিকা নেওয়া থাকলেও বাইরে বের হলে অবশ্যই মাস্ক পরতে হবে। কোভিড-১৯ রোগ নিয়ন্ত্রণ ও হ্রাস করার নিমিত্তে কমিউনিটি পর্যায়ে মাস্ক পরাসহ স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার সচেতনতা তৈরির জন্য মাইকিং ও প্রচারণা চালানো যেতে পারে। এক্ষেত্রে প্রয়োজনে মসজিদ, মন্দির, গির্জা, প্যাগোডার মাইক ব্যবহার করা যেতে পারে এবং ওয়ার্ড কাউন্সিলর বা ইউনিয়ন পরিষদের সদস্যসহ নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের সম্পৃক্ত করা যেতে পারে।
এসব নির্দেশনা দেশব্যাপী কঠোরভাবে পালনের জন্য স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের রোগ-নিয়ন্ত্রণ বিভাগ সবার প্রতি আহ্বান জানিয়েছে বলে তথ্যবিবরণীতে উল্লেখ করা হয়েছে।
এমইউ/এআরএ/জিকেএস