জরায়ু মুখের ক্যান্সারে প্রতিদিন ১৮ জনের মৃত্যু
জরায়ুর মুখের ক্যান্সারে দেশে প্রতিদিন গড়ে ৩৩ জন মহিলা আক্রান্ত হচ্ছেন। প্রতিরোধযোগ্য হলেও ঘাতক এ ব্যাধিতে প্রতিদিন ১৮ জনের প্রাণহানি ঘটে। নারীদের বিভিন্ন ধরনের ক্যান্সার (স্তন, জরায়ু মুখ, খাদ্যনালী ও পিত্তথলি) এর মধ্যে জরায়ুর মুখের ক্যান্সারের স্থান দ্বিতীয়।
শুক্রবার জাতীয় প্রেসক্লাবের ভিআইপি মিলনায়তনে স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন ‘ক্যান্সার প্রতিরোধ ও গবেষণা কেন্দ্র’ (সিসিপিআর) ও সহযোগী সংগঠনের উদ্যোগে জরায়ু- মুখের ক্যান্সার সচেতনতা মাসের উদ্বোধন উপলক্ষে আয়োজিত এক গোলটেবিল আলোচনায় এ সব তথ্য জানানো হয়।
সভায় বক্তারা বলেন, জরায়ু- মুখের ক্যান্সার একটি প্রতিরোধযোগ্য ক্যান্সার। বাল্যবিবাহ, অধিক ও ঘন ঘন সন্তানধারণ, অবাধ মেলামেশা, হিউম্যান প্যাপিলোমা ভাইরাসের সংক্রমণ, ব্যক্তিগত পরিচ্ছন্নতার অভাব, অপুষ্টি মূলত জরায়ু মুখের ক্যান্সারের কারণ।
তারা বলেন, অতিরিক্ত সাদাস্রাব, যোনীপথে অস্বাভাবিক রক্তক্ষরণ, তলপেটে ব্যথা, শারীরিক সম্পর্কের সময় ব্যাথা ও রক্তপাত, মাসিক বন্ধ হওয়ার পর রক্ত যাওয়া এই রোগের প্রধান লক্ষণ। এই রোগে মৃত্যুর হাত থেকে রক্ষা পেতে এসব বিষয়ে জনসচেতনতার কোন বিকল্প নেই।
জাতীয় ক্যান্সার গবেষণা ইন্সটিটিউটের সর্বশেষ প্রকাশিত (২০১৪ সাল) হাসপাতাল ভিত্তিক ক্যান্সার নিবন্ধন প্রতিবেদন অনুযায়ী মহিলাদের ক্যান্সারের মধ্যে জরায়ু- মুখের ক্যান্সারের স্থান দ্বিতীয় (১৭.৯%), স্তন ক্যান্সার শীর্ষে (২৭.৪%)। নারী- পুরুষ নির্বিশেষে এর অবস্থান চার নম্বরে (৮%)।
জাতীয় ক্যান্সার গবেষণা ইন্সটিটিউটের ক্যান্সার ইপিডেমিওলজি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ও বিভাগীয় প্রধান ডা. মো. হাবিবুল্লাহ তালুকদার রাসকিনের সঞ্চালনায় সূচনা বক্তব্য উপস্থাপন করেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব বিশ্ববিদ্যালয়ের গাইনি অনকোলজি বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক সাবেরা খাতুন।
আলোচনায় অংশ নেন কবি ক্যান্সার সারভাইভার কাজী রোজী ,বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব বিশ্ববিদ্যালয় থেকে গাইনি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক শিরীন আক্তার ও ন্যাশনাল ক্যান্সার স্ক্রিনিং প্রকল্পের উপ- পরিচালক স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞ ডা. রেহেনা আক্তার, হলি ফ্যামিলি রেড ক্রিসেন্ট মেডিকেল কলেজের গাইনি বিভাগের প্রধান ও ওজিএসবি’র সভাপতি অধ্যাপক রওশন আরা বেগম।
জাতীয় ক্যান্সার গবেষণা ইন্সটিটিউট থেকে রেডিয়েশন অনকোলজি বিভাগের প্রধান অধ্যাপক শেখ গোলাম মোস্তফা, হিস্টোপ্যাথলজি বিভাগের প্রধান অধ্যাপক মো. গোলাম মোস্তফা, গাইনি অনকোলজি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ডা. রেহানা পারভীন, সহকারী অধ্যাপক ডা. আফরোজা খানম রুমু, শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজের গাইনি বিভাগের অধ্যাপক ফাতেমা আশরাফ, পাবলিক হেলথ ফাউন্ডেশন অব বাংলাদেশ- এর চেয়ারম্যান অধ্যাপক মুজাহেরুল হক।
বাংলাদেশ মেডিকেল কলেজের কমিউনিটি মেডিসিনের অধ্যাপক শারমিন ইয়াসমিন, এনাম মেডিকেল কলেজের গাইনি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক কামরুননেসা, ইউনিসেফ এর পরামর্শক ডা. তারেক মাহমুদ, শহীদ তাজউদ্দিন মেডিকেল কলেজের সহযোগী অধ্যাপক ডাঃ আব্দুল কাদের, স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন অপরাজিতার চেয়ারপারসন নিলুফার তাসনীম, রোকেয়া রুমি, ক্যান্সার সারভাইভার ও নির্বাহী পরিচালক, ইএইচআরডি ক্যান্সার সাপোর্ট সেন্টার, কবি ফারজানা মিতু।
ঢাকা ওয়াইডাব্লিওসিএ-এর স্বাস্থ্য কর্মসূচির দায়িত্বপ্রাপ্ত মেরি মার্গারেট রোজারিও ও ক্যান্সার সারভাইভার ও ব্যাঙ্কার হোসনে আরা পলি স্বাগত বক্তব্য রাখেন সিসিপিআরের নির্বাহী পরিচালক মোসাররত জাহান সৌরভ।
জননীর কাছে সবার আছে জন্মঋণ, জরায়ু- মুখের ক্যান্সার সচেতনতায় অংশ নিন- এই প্রতিবাদ্যভিত্তিক একটি পোস্টার প্রকাশ করা হয় এই অনুষ্ঠানে।
উদ্যোক্তারা জানান, মাসব্যাপী ঘোষিত কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে সচেতনতামূলক পোস্টার ও লিফলেট প্রকাশনা ও বিতরণ, ঢাকায় এলাকাভিত্তিক ৪টি এবং কর্মস্থলভিত্তিক অন্তত ৬টি অনুষ্ঠান আয়োজন করা হবে, যেখানে আলোচনার পাশাপাশি প্রাথমিক চিকিৎসা পরামর্শ দেয়া।
ঢাকার বাইরে রাজশাহী, চটগ্রাম ও ময়মন সিংহ বিভাগে আলোচনা ও র্যালি আয়োজন করা হবে। অন্যান্য স্থানে আগ্রহী স্থানীয় সংগঠন গুলিকে সহযোগিতা প্রদান । ৩০ জানুয়ারি ঢাকায় আয়োজন করা হবে ‘মায়ের জন্য পদযাত্রা’। শাহবাগ থেকে মিরপুর পর্যন্ত হেঁটে হেঁটে তথ্যসমৃদ্ধ লিফলেট বিতরণ করা হবে বলে জানানো হয়।
এমইউ/এসকেডি/এমএস