ঢাকায় সঠিক সময়ে শিশুদের টিকা দেন না এনজিও কর্মীরা
ঢাকা দক্ষিণ ও উত্তর সিটি কর্পোরেশন এলাকায় এনজিও স্বাস্থ্যকর্মীরা শিশুদের সঠিক সময়ে টিকা প্রদান করছেন না! শিশু বিশেষজ্ঞদের মতে শিশুর জন্মের ২৮ দিনের আগে প্রথম ডোজ ও ৪২ দিনের আগে দ্বিতীয় ডোজ দেয়ার নিয়ম না থাকলেও এসব এলাকায় কর্মরত এনজিও কর্মীরা নির্ধারিত সময়ের আগেই টিকা প্রদান করছেন। এছাড়া তারা মায়েদের নির্ধারিত সময়ে টিকা প্রদানের ব্যাপারেও সচেতন করছেন না। ফলে ডিসিসি (উত্তর ও দক্ষিণ) এলাকায় টিকাদানের হার জাতীয় টিকাদানের হারের চেয়ে কমে গেছে।
বুধবার ইমিউনাইজেশন প্ল্যাটফর্ম অব সিভিল সোসাইটি ইন বাংলাদেশ (আইপিসিএসবি)-এর উদ্যোগে ‘ব্যারিয়ারস অব ভ্যালিড ডোজ অব ইমিউনাইজেশন এবং চিলড্রেন এইজড টুয়েলভ মানথস ইন দ্য আরবান এরিয়া’ শীর্ষক এক গবেষণা প্রতিবেদনে এ তথ্য ওঠে এসেছে।
গবেষণা প্রতিবেদন উপস্থাপন করেন আইপিসিএসবি ও বাংলাদেশ ব্রেষ্ট ফিডিং ফাউন্ডেশন (বিবিএফ) চেয়ারপারসন ড. এস কে রয়। তিনি জানান, ডিসিসি উত্তর ও দক্ষিণ এলাকায় গড়ে প্রায় শতকরা ৩ ভাগ শিশুকে সঠিক সময়ে টিকা প্রদান করা হয়নি। ২০১৪ নভেম্বর থেকে ২০১৫ সালের নভেম্বর পর্যন্ত ডিসিসি (উত্তর ও দক্ষিণ) এলাকায় জন্মের এক বছরের মধ্যে সব ধরণের টিকা গ্রহণ করেছে এমন ১৫ হাজার ৬শ’ ৬৫ জন শিশুর ওপর গবেষণা চালিয়ে এ প্রতিবেদন তৈরি করা হয়েছে।
এছাড়া গবেষণা প্রতিবেদনে পৃথক হিসেবে ডিসিসি উত্তরে শতকরা ৩ দশমিক ৫৭ ভাগ ও দক্ষিণে ২ দশমিক ২৮ ভাগ সঠিক সময়ে টিকা দেয়নি।
জাতীয়ভাবে দেশে বৈধ ও সঠিক সময়ে টিকা প্রদানের হার শতকরা ৮১ দশমিক ৬ ভাগ হলেও এ হার ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশন (ডিএনসিসি)-তে শতকরা ৭৪ দশমিক ১ ভাগ এবং ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন (ডিএসসিসি)-তে শতকরা ৭৪ দশমিক ২ ভাগ।
গবেষণায় ব্যালিড ডোজ না হওয়ার যে সকল কারণ চিহ্নিত করা হয় তা হলো- টিকা প্রদানের কার্ড হারিয়ে যাওয়া, অভিভাবকের টিকার ডোজ সম্পর্কে অজ্ঞতা, পরিবারের স্থান পরিবর্তন ও নির্ধারিত সময়ের আগে গেলেও স্বাস্থ্য কর্মীদের টিকা প্রদান করা।
রাজধানীর সিরডাপ মিলনায়তনে গবেষণা প্রতিবেদনটি প্রকাশকালে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ও স্বাস্থ্য অধিদফতরের কর্মকর্তারা বলেন, ব্যালিড ডোজ বৃদ্ধির জন্য সকলকে সম্মিলিতভাবে কাজ করতে হবে। ডিসিসি এলাকায় তাদের কোনো স্বাস্থ্য কর্মী নেই। স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের অধীনে এনজিওরা কাজ করে। তাদের জন্য প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণের পুনঃব্যবস্থা করতে হবে।
স্বাস্থ্য অধিদফতরের পরিচালক (প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা) ডা. হাবিব আবদুল্লা সোহেলের সভাপতিত্বে গবেষণা প্রতিবেদন প্রকাশ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (জনস্বাস্থ্য ও বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা) রোকসানা কাদের। বিশেষ অতিথি ছিলেন স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম প্রধান (পরিকল্পনা) মো. হেলাল উদ্দিন, জনস্বাস্থ্য পুষ্টি প্রতিষ্ঠান পরিচালক ডা. মো. কামরুল ইসলাম, বিগ্রেডিয়ার জেনারেল ডা. এস এম এম সালেহ ভুইয়া প্রমুখ।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে রোকসানা কাদের বলেন, গ্রামাঞ্চলে টিকাদানে যেমন উন্নতি হয়েছে একইভাবে শহরাঞ্চলে সফলতার ধারাবাহিকতা রক্ষার জন্য স্বাস্থ্য ও স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের সমন্বয় জোরদার করতে হবে। ভ্যালিড ডোজের হার বাড়াতে হবে।
উল্লেখ্য, বাংলাদেশ সরকার মা ও শিশু স্বাস্থ্য সেবা জোরদার করার লক্ষ্যে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ও ইউনিসেফের সহায়তায় ১৯৭৯ সালের ৭ এপ্রিল দেশে এক বছরের কম বয়সী সকল শিশুদের ৬টি সংক্রামক রোগ ডিপথেরিয়া, হুপিং কাশি, টিটেনাস, বিসিজি, হাম ও পোলিও টিকাদানের মাধ্যমে সম্প্রসারিত টিকা দান কর্মসূচী শুরু হয়। ১৯৮৫ সালে ভ্যালিড টিকাদানের হার শতকরা মাত্র ২ ভাগ হলেও ২০১৪ সালে তা বৃদ্ধি পেয়ে ৮১ দশমিক ৬ ভাগে উন্নীত হয়।
এমইউ/আরএস/আরআইপি