ভিডিও EN
  1. Home/
  2. স্বাস্থ্য

ডেল্টার তুলনায় ওমিক্রনে মিউটেশন বেশি থাকলেও ভয়ংকর নয়

নিজস্ব প্রতিবেদক | প্রকাশিত: ০৭:৫২ পিএম, ০৭ ডিসেম্বর ২০২১

করোনাভাইরাসের নতুন ধরন ওমিক্রন ধারণার চেয়ে দ্রুত ছড়ালেও, এতে মিউটেশন বেশি থাকলে, এটি ডেল্টা ভ্যারিয়েন্টের মতো এতোটা ভয়ংকর নয় বলে জানিয়েছেন গণবিশ্ববিদ্যালয়ের মাইক্রোবায়োলজি বিভাগের বিভাগীয় প্রধান ও বিশিষ্ট সংক্রমণ বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ড. বিজন কুমার শীল।

করোনার নতুন ধরন ওমিক্রন এরই মধ্যে বিশ্বের ৪৫টি দেশে শনাক্ত হলেও এনিয়ে ভয়ের কিছু নেই জানিয়ে সংক্রমণ প্রতিরোধে তিনি সবাইকে স্বাস্থ্যবিধি মানার ওপর জোর দিতে বলেছেন।

তিনি বলেন, ওমিক্রনে মিউটেশন অনেক বেশি। ফলে এর পরিবর্তনও ব্যাপক। এতে নতুন ধরনটি শক্তিশালী হওয়ার পাশাপাশি ভ্যাকসিনের কার্যকারিতাও কমতে পারে। এজন্যই মনে করা হচ্ছে, ওমিক্রন হয়তো ডেল্টার চেয়েও ভয়ানক হবে।

মঙ্গলবার (৭ ডিসেম্বর) রাজধানীর ধানমন্ডিতে গণস্বাস্থ্য নগর হাসপাতালে ‘কোভিড-১৯ ভ্যারিয়েন্ট অব কনসার্ন ডেল্টা-ওমিক্রন’ ভিত্তিক বিজ্ঞান, নৈতিকতা ও বৈষম্য বিষয়ক এক সেমিনারে তিনি এসব কথা বলেন।

বিজন কুমার বলেন, ওমিক্রনকে ভয়ংকর ভাবার কারণ এর মিউটেশন। এখন পর্যন্ত ডেল্টার সর্বোচ্চ ১৫টি মিউটেশন হয়েছে। ওমিক্রনের হয়েছে প্রায় ৫০টি। যার মধ্যে ৩২টি মিউটেশন হয়েছে স্পাইক প্রোটিন। যা দিয়ে সে মানুষকে খুব অল্প সময়ে সংক্রমিত করে। এছাড়া ১০টি মিউটেশন হয়েছে রিসেপ্টার ডোমেইন সাইডে। ভাইরাসের যে অংশটি প্রথম মানুষের দেহকোষের সঙ্গে সংযোগ ঘটায় তার নাম রিসেপ্টার বাইন্ডিং ডোমেইন।

এই সংক্রমণ বিশেষজ্ঞ আরও বলেন, ফিউরিন নামক একটি প্রোটিন পুরো ভাইরাসের বৈশিষ্ট্যকে পরিবর্তন করে দিতে পারে। এটি সার্সকভ-১-এ ছিল না, তবে সার্সকভ-২-তে আছে। এখন এটি যদি আরও বিস্তার লাভ করে তাহলে ডেল্টার চেয়েও মারাত্মক হতে পারে। তবে এ মুহূর্তে ডেল্টার মতো আতংকিত করার অবস্থায় যায়নি ওমিক্রন। যদিও এটাই শেষ নয়, অবস্থা খারাপ হতে পারে। আফ্রিকা থেকে অন্যান্য দেশে শনাক্তের পর এটি আরও শক্তিশালী হয়েছে, সংক্রমণ যত বাড়বে ততই এটি মারাত্মক হতে থাকবে।

ড. বিজন বলেন, এরইমধ্যে যারা ভ্যাকসিন নিয়েছেন, তারা অনেকটা সুরক্ষিত। তবে এর বিপরীতে ভ্যাকসিনের কার্যকারিতা কতটুকু সেটি সম্পর্কে এখনো পর্যালোচনা চলছে।

অনুষ্ঠানে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) ফার্মাকোলজি বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. মো. সায়েদুর রহমান খসরু বলেন, একদিনের লকডাউনে তিন হাজার কোটি টাকার ক্ষতি হয়। অথচ যদি বিনা টাকায় নমুনা পরীক্ষা করা যেতো, প্রয়োজনে বাড়িতে গিয়ে পরীক্ষা করাতে পারতাম, তবে অর্থনীতি সচল থাকতো। এদেশে এমন অনেক মানুষ আছে, যাদের অর্ধেক বেলা খাবারের জন্য কাজ ফেলে আসা সম্ভব নয়। প্রয়োজনে পরীক্ষার জন্য মানুষের হাতে টাকা দিতে হবে, তবেই আমরা লকডাউন নামক এ জঞ্জাল থেকে মুক্তি পাবো।

তিনি বলেন, দেশের ১৫ কোটি মানুষকে ৩০ কোটি মাস্ক বিনামূল্যে দিতে কী সমস্যা? সাদা-লাল রংয়ের দুই ধরনের মাস্ক দিয়ে বিশেষ ব্যবস্থায় প্রতিটি শহরে সাত দিনের মধ্যে মানুষকে সচেতন করা যায়। ১৬ ডিসেম্বর থেকে শুরু করেন, এতে সরকারের পদক্ষেপ সম্পর্কে মানুষ জানতে পারবে, গুরুত্ব দেবে। একইসঙ্গে প্রচুর বিশ্ববিদ্যালয়ে সিকুয়েন্স করার সক্ষমতা আছে, পিসিআর পরীক্ষা একেবারেই সহজ অবস্থায়। তাহলে এমন একটা সিদ্ধান্ত নিতে কি এত সময় লাগে?

ডা. সায়েদুর আরও বলেন, এখন রেস্টুরেন্টে গেলে ভ্যাকসিন সনদ চায়। আমরা জানি, নিবন্ধিত ৮০-৯০ লাখ এবং নিবন্ধন ছাড়া প্রায় কোটির মতো বয়স্ক মানুষ এখনো টিকার বাইরে। আমাদের বুঝতে হবে ঝুঁকি কার বেশি। ঝুঁকিতে থাকা মানুষের টিকা নিশ্চিত না করে নিচে নেমে আসা, বুস্টার ডোজ দেওয়া অনৈতিক, এটা বিজ্ঞানসম্মত নয়। যেখানে মৃতদের বেশিরভাগই বয়স্ক, সেখানে তারা টিকার বাইরে থাকার তো কোনো কারণ নেই।

সেমিনারে মূল প্রবন্ধ তুলে ধরেন অধ্যাপক ড. বিজন কুমার শীল। এতে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে বক্তব্য রাখেন গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের ট্রাস্টি ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী এবং অধ্যাপক ডা. মো. সায়েদুর রহমান। সেমিনার পরিচালনা করেন গণস্বাস্থ্য সমাজভিত্তিক মেডিকেল কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ ডা. মুহিব উল্লাহ খোন্দকার।

এএএম/এমকেআর/জিকেএস