ভিডিও EN
  1. Home/
  2. স্বাস্থ্য

করোনা সংক্রমণের লাগাম টানার কোনো উপায় নেই?

মনিরুজ্জামান উজ্জ্বল | প্রকাশিত: ১২:৫১ পিএম, ০৯ এপ্রিল ২০২১

সারাদেশে মহামারি করোনাভাইরাসের সংক্রমণ উদ্বেগজনক হারে বাড়ছে। সংক্রমণ রোধে গত ৫ এপ্রিল থেকে আগামী ১১ এপ্রিল পর্যন্ত কঠোর বিধিনিষেধ জারি করে সরকার। তবে জীবন ও জীবিকার প্রয়োজনে হাজার হাজার মানুষ পথে নামছে, সব সিটি করপোরেশন এলাকায় গণপরিবহন চলছে, শুক্রবার থেকে শপিংমল ও মার্কেট খুলে দেয়া হয়েছে।

এদিকে দেশে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে ২৪ ঘণ্টায় এ যাবতকালের সর্বোচ্চ রেকর্ডসংখ্যক ৭৪ জনের মৃত্যু হয়েছে। তাদের মধ্যে পুরুষ ৪৮ জন ও নারী ২৬ জন। এ নিয়ে মোট মৃতের সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়ে দাঁড়িয়েছে নয় হাজার ৫২১ জনে। বৃহস্পতিবার (৮ এপ্রিল) স্বাস্থ্য অধিদফতরের বিজ্ঞপ্তিতে এসব তথ্য জানানো হয়।

গত কয়েক দিন টানা সাত হাজারেরও বেশি করোনা রোগী রোগী শনাক্ত হচ্ছে। মোট শনাক্ত রোগীর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ছয় লাখ ৬৬ হাজার ১৩২ জনে। সর্বশেষ নমুনা পরীক্ষা বিবেচনায় শনাক্তের হার ২০ দশমিক ৬৫ শতাংশ। মোট নমুনা পরীক্ষা বিবেচনায় শনাক্তের হার ১৩ দশমিক ৫৫ শতাংশ।

সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালে নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রের (আইসিইউ) শয্যার পাশাপাশি সাধারণ শয্যায় রোগী ভর্তি করা মুশকিল হয়ে পড়ছে। টাকা খরচ করেও হাসপাতালে ভর্তি হওয়া যাবে না— এমন ভয়ঙ্কর পরিস্থিতিরও আশঙ্কা করা হচ্ছে।

সম্প্রতি আইসিডিডিআর’বি, আইইডিসিআর ও স্বাস্থ্য অধিদফতরের যৌথ এক গবেষণায় দেখা গেছে, বর্তমানে করোনায় আক্রান্তদের ৮১ শতাংশের নমুনায় দক্ষিণ আফ্রিকার করোনাভাইরাসের ভ্যারিয়েন্টের মিল পাওয়া গেছে। এ ভাইরাসের কারণে দেশের সর্বত্র দ্রুত সংক্রমণ ঘটছে।

স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেছেন, হাসপাতালে আইসিইউ কিংবা সাধারণ শয্যা বৃদ্ধি সমাধান নয়। সংক্রমণ ও মৃত্যুর এই হার অব্যাহত থাকলে পরিস্থিতি সামাল দেয়া অসম্ভব হয়ে পড়বে। এখন দেশের সবার একটাই প্রশ্ন, করোনার লাগাম টেনে ধরার কি কোনো সমাধান নেই?

একাধিক রোগতত্ত্ব ও স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ জাগো নিউজকে বলেছেন, বর্তমানে করোনাভাইরাস সংক্রমণের ঊর্ধ্বগতি বিবেচনায় হাসপাতালে চিকিৎসা সুবিধা বৃদ্ধির পাশাপাশি সংক্রমণ প্রতিরোধে বেশি নজর দেয়া উচিত। করোনার সংক্রমণ রোধে সারাদেশে সঠিকভাবে মাস্ক পরিধানে সামাজিক আন্দোলন গড়ে তোলার মাধ্যমে মানুষকে উদ্ধুদ্ধ করতে পারলে সংক্রমণ ও মৃত্যুরোধ করা অসম্ভব কিছু নয়। সরকার করোনা চিকিৎসায় শত শত কোটি টাকা খরচ করছে।

বর্তমান প্রেক্ষাপটে সরকারিভাবে সারাদেশে বিনামূল্যে মাস্ক বিতরণ ও সঠিকভাবে মাস্কের ব্যবহার নিশ্চিত করতে কর্মসূচি পরিচালনা করা যেতে পারে। শুধু মাস্কের সঠিক ব্যবহার নিশ্চিত করতে পারলেই সংক্রমণ বহুলাংশে প্রতিরোধ করা সম্ভব বলে মনে করেন তারা।

রোগতত্ত্ব, রোগনিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (আইইডিসিআর) প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. এ এস এম আলমগীর হোসেন বলেন, দেশের ৪৮টি জেলায় করোনা সংক্রমণের হার (বিদেশগামী যাত্রীদের নমুনা পরীক্ষা ও শনাক্ত বাদে) সর্বনিম্ন ১০ শতাংশ থেকে ৪০ শতাংশ। মানুষ স্বাস্থ্যবিধি মেনে না চললে সামনে ভয়াবহ বিপদ। বিশেষ করে সঠিকভাবে মাস্ক পরিধান করলে সংক্রমণ থেকে অনেকটা রক্ষা পাওয়া সম্ভব।

সবাইকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে উদ্ধুদ্ধ করতে কী করা প্রয়োজন— এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, সরকারিভাবে বিভিন্ন জেলা প্রশাসনের মাধ্যমে মাস্ক বিতরণ চলছে। কিন্তু মাস্ক ব্যবহারে সবাইকে উদ্ধুদ্ধকরণে কোথায় নাগরিক সমাজ কোথায় বিভিন্ন সামাজিক, সাংস্কৃতিক সংগঠন ও পাড়া মহল্লার ক্লাব? তারা সবাই মিলে দল গঠন করে রাস্তার মোড়ে মোড়ে দাঁড়িয়ে সামাজিক দায়িত্বের অংশ হিসেবে বিনামূল্যে মাস্ক বিতরণ করতে পারে। যারা মাস্ক পরিধান করছে না তাদের মাস্ক পরার সুফল ও না পরার কুফল ইত্যাদি বুঝিয়ে মাস্ক দিতে পারে। কিন্তু তা হচ্ছে না।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) ফার্মাকোলজি বিভাগের অধ্যাপক ডা. সায়েদুর রহমান বলেন, দেশে করোনা পরিস্থিতি ভয়ঙ্কর হয়ে উঠছে। এই মুহূর্তে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা, বিশেষ করে মাস্কের সার্বক্ষণিক ব্যবহার নিশ্চিত করা জরুরি।

তিনি বলেন, দেশের বিভিন্ন প্রাকৃতিক দুযোর্গ-ঘূর্ণিঝড় ও বন্যার সময় বিভিন্ন শ্রেণি-পেশা নির্বিশেষে নিপীড়িতদের পাশে দাঁড়ানোর অতীত ইতিহাস আমাদের রয়েছে। কিন্তু বর্তমানে সামাজিকভাবে সাড়া মিলছে না, যা খুবই জরুরি বলে তিনি মন্তব্য করেন।

স্বাস্থ্য অধিদফতরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (পরিকল্পনা ও উন্নয়ন) অধ্যাপক ডা. মীরজাদি সেব্রিনা ফ্লোরা সম্প্রতি ভার্চুয়াল এক সাংবাদিক সম্মেলনে বলেন, দেশের শতভাগ মানুষকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে হবে। মানুষকে ঘরের বাইরে বের হলে মাস্ক পরিধান করতে হবে।

আইইডিসিআরের সাবেক এক ঊর্ধ্বতন দায়িত্বশীল কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, মাস্কের সঠিক ব্যবহার খুবই জরুরি। অনেক ক্ষেত্রে দেখা যায়, মন্ত্রী-সচিব থেকে শুরু করে স্বাস্থ্য কর্মকর্তাদের অনেকেই কথা বলার সময় মাস্ক খুলে কথা বলেন, যাতে ভুল ম্যাসেজ যায়। তখন সাধারণ মানুষ ধরে নেন, মাস্ক খুলে কথা বললে ভাইরাস সংক্রমিত হয় না।

তিনি আরও বলেন, করোনাভাইরাস সারাদেশেই ছড়িয়ে পড়ছে। স্বাস্থ্যবিধি বিশেষ করে সকলে মাস্ক সঠিকভাবে পরিধান না করলে সামনে ভয়াবহ বিপদ। সঠিকভাবে সকলে মাস্ক পরিধান করলে সংক্রমণ দ্রুত কমে যাবে।

এমইউ/এমএসএইচ/এমএস