করোনা সংক্রমণের উচ্চ ঝুঁকিতে ২৯ জেলা
সারাদেশে মহামারি করোনাভাইরাসের সংক্রমণ আবারও বেড়ে গেছে। ১২ দিন আগেও দেশে উচ্চ সংক্রমিত ঝুঁকিপূর্ণ জেলা ছিল ৬টি। কিন্তু এর মধ্যে এই সংখ্যা বেড়ে ২৯টিতে দাঁড়িয়েছে।
জেলাগুলোর মধ্যে রয়েছে- ঢাকা, চট্টগ্রাম, নারায়ণগঞ্জ, মুন্সিগঞ্জ, ফেনী, চাঁদপুর, নীলফামারী, সিলেট, টাঙ্গাইল, গাজীপুর, কুমিল্লা, রাজবাড়ী, শরীয়তপুর, কুড়িগ্রাম, নরসিংদী, নোয়াখালী, লক্ষ্মীপুর, মাদারীপুর, নওগাঁ ও রাজশাহী।
সোমবার স্বাস্থ্য অধিদফতরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (পরিকল্পনা ও উন্নয়ন) অধ্যাপক ডা. মীরজাদী সেব্রিনা ফ্লোরা জানান, তারা প্রতি সপ্তাহেই করোনাভাইরাস সংক্রমণের গতিধারা দেখে উচ্চ সংক্রমিত ঝুঁকিপূর্ণ জেলা চিহ্নিত করেন। গত ১৩ মার্চ তথ্য-উপাত্ত বিশ্লেষণকালে তারা উচ্চ সংক্রমিত জেলার সংখ্যা মাত্র ছয়টি পান। পরবর্তীতে এক সপ্তাহের ব্যবধানে ২০ মার্চ এ সংখ্যা বেড়ে ২০টি এবং ২৪ মার্চ বিশ্লেষণে এ সংখ্যা বেড়ে ২৯টিতে দাঁড়ায়।
তিনি আরও বলেন, ‘আমরা যদি সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে আনতে চাই, একজনের কাছ থেকে আরেকজনে সংক্রমণ বন্ধ করতে চাই তাহলে প্রত্যেককে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে হবে। শুধুমাত্র উচ্চ সংক্রমিত ২৯টি জেলা নয়, আমাদের দেশের সবাইকে সাধারণ স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে হবে। শতভাগ মানুষকে মাস্ক পরিধান করা নিশ্চিত করতে হবে। আমরা ইতোপূর্বে সাবান দিয়ে হাত ধৌত করার যে অভ্যাসটি করেছিলাম, সেটা অনেক ভালো ফলাফল বয়ে এনেছিল। করোনা সংক্রমণ হ্রাসের পাশাপাশি ডায়রিয়া আক্রান্তের সংখ্যাও কমে গিয়েছিল। সুতরাং হাত ধোয়ার অভ্যাসটিতে আবার ফিরে যেতে হবে এবং যত দূর সম্ভব সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখতে হবে। জীবন ও জীবিকাকে ব্যাহত না করে যত দূর সম্ভব সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখার সর্বোচ্চ প্রচেষ্টা চালাতে হবে।’
উচ্চ ঝুঁকিপূর্ণ জেলা সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে ব্যবস্থা গ্রহণ কেন্দ্রীয়ভাবে নাকি স্থানীয়ভাবে হবে, এমন প্রশ্নের জবাবে ডা. ফ্লোরা বলেন, স্থানীয় জেলা প্রশাসন, পুলিশ প্রশাসন ও স্বাস্থ্যবিভাগ যৌথভাবে স্থানীয় সংক্রমণ পরিস্থিতি পর্য়ালোচনা করে সম্ভাব্য সকল প্রকার ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।
স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আবুল বাশার মোহাম্মদ খুরশীদ আলম বলেছেন, দেশের ২৯টি জেলায় করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়েছে। সর্বত্র মানুষে মানুষে করোনার সংক্রমণ দ্রুতগতিতে ছড়িয়ে পড়ছে। দেশের শতভাগ মানুষ মাস্ক পরাসহ প্রয়োজনীয় স্বাস্থ্যবিধি না মেনে চললে এটা নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব নয়।
গত একদিনে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত আরও ৫ হাজার ১৮১ জন রোগী শনাক্ত হয়েছে, যা বাংলাদেশে একদিনে সর্বোচ্চ। এ নিয়ে শনাক্তকৃত রোগীর সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৬ লাখ ৮৯৫ জন। এছাড়া গত ২৪ ঘণ্টায় করোনায় আরও ৪৫ জনের মৃত্যু হয়েছে। তাদের মধ্যে ৩০ জন পুরুষ ও ১৫ জন নারী। এ নিয়ে দেশে মোট করোনায় মৃতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়াল ৮ হাজার ৯৪৯ জনে।
স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক বলেছেন, ‘গত ২৮ ফেব্রুয়ারি দেশে করোনা আক্রান্তের হার ছিল মাত্র ২ শতাংশের মতো। বর্তমানে তা হয়ে গেছে প্রায় ১৩ শতাংশ। প্রতিদিনই আক্রান্ত ও মৃত্যুর সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে। এই মুহূর্তে করোনার উৎপত্তিস্থল বন্ধ করতে না পারলে দেশের অর্থনীতির চাকা থমকে যেতে পারে, মানুষের বড় রকমের আর্থিক সংকট দেখা দিতে পারে।’
করোনাভাইরাস সংক্রমণে বিদ্যমান পরিস্থিতিতে সরকারের ১৮ দফা নির্দেশনা দিয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করেছে সরকার। সোমবার প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব ড. আহমদ কায়কাউস স্বাক্ষরিত প্রজ্ঞাপনে এ নির্দেশনা দেয়া হয়। এ নির্দেশনা আগামী দুই সপ্তাহ পর্যন্ত প্রতিপালন করতে হবে। এই নির্দেশনা বাস্তবায়নের সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রণালয়/বিভাগ/দফতর/সংস্থাকে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে বলা হয়েছে প্রজ্ঞাপনে।
এমইউ/এমএসএইচ