স্বাদ-ঘ্রাণশক্তি নেই মানেই কি করোনা?
করোনাভাইরাস (কোভিড-১৯) মহামারির শুরুর দিকে বলা হচ্ছিল জ্বর, গলাব্যথা, খুশখুশে কাশি, সর্দি, শ্বাসকষ্ট এই রোগের প্রাথমিক লক্ষণ। তবে এসব উপসর্গের পাশাপাশি ঘ্রাণশক্তি এখন সবথেকে বড় চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। কারণ, কোভিডের অন্যতম উপসর্গ হিসেবে ঘ্রাণশক্তি হারিয়ে ফেলার কথা বলছেন অনেকে। খাবারে কোনো স্বাদই পাচ্ছেন না তারা।
স্বাদ এবং ঘ্রাণশক্তি হারিয়ে ফেলা কয়েকজনের লালারস পরীক্ষায় করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার প্রমাণ মিলেছে ব্রিটেন ও যুক্তরাষ্ট্রে। ফলে মে মাসেই এই দুই উপসর্গকে করোনা সংক্রমণের প্রাথমিক লক্ষণ বলে জানিয়ে দেয় তারা।
স্নায়ুরোগ বিশেষজ্ঞদের মতে, ৩০ থেকে ৩২ শতাংশ করোনা আক্রান্ত রোগীর ক্ষেত্রেই স্নায়ুতন্ত্রে প্রভাব পড়ে। তবে সবার ক্ষেত্রেই যে বিপজ্জনক, তা কিন্তু নয়। স্নায়ুতন্ত্রে প্রভাব পড়ছে বলেই ঘ্রাণশক্তি কিংবা স্বাদের সমস্যা হচ্ছে।
ঠিক কী হচ্ছে
>> গন্ধ পাচ্ছেন না অনেকেই। অনেকের ক্ষেত্রেই এই অনুভূতি ফিরে আসতে সময় লাগছে। আবার কেউ সেরে গিয়ে কোভিড নেগেটিভ হয়ে গন্ধের অনুভূতি ফিরে পাননি দু-তিন মাস পরেও।
>> কারও ক্ষেত্রে স্বাদের সমস্যা হচ্ছে।
>> কোভিড এনকেফালাইটিসের (মস্তিষ্কের প্রদাহ) রোগী ২ থেকে ৩ শতাংশ। এ ক্ষেত্রে মস্তিষ্কের কোষ থেকে কোভিড ভাইরাসের অস্তিত্ব মিলেছে। কোভিড রক্তে ছড়িয়ে পড়লে যেকোনো জায়গায় যেতে পারে, তাই প্রভাব পড়ছে মস্তিষ্কেও এবং স্নায়ুতন্ত্রে।
>> কারও ক্ষেত্রে স্বাদ-গন্ধের অনুভূতি হারানোর সঙ্গে সঙ্গে মাথাতেও তীব্র যন্ত্রণা হচ্ছে।
এখন প্রশ্ন দেখা দিয়েছে-একদিন জ্বর জ্বর ভাব লাগছে, খেতে ইচ্ছে করছে না, গন্ধ পাওয়া যাচ্ছে না, সে ক্ষেত্রে কী করা উচিত? এ বিষয়ে ভারতের মেডিসিনের চিকিৎসক অরিন্দম বিশ্বাস বললেন, ‘এই উপসর্গ তিন-চারদিনের বেশি স্থায়ী হলে অবশ্যই নিজেকে আইসোলেট করে রাখা উচিত। কোভিড টেস্ট করা উচিত ডাক্তারের পরামর্শ নিয়ে। কারও কারও ক্ষেত্রে সমস্যাটা সাময়িক হলেও অনেকের দীর্ঘকালীন ক্ষতি হচ্ছে। তাই সচেতন থাকতে হবে।’
স্বাদ-গন্ধ না পেলেই কি করোনা
চিকিৎসক অরিন্দম এ প্রসঙ্গে বলেন, ‘একদমই তা নয়। গন্ধের সঙ্গে স্বাদের সমস্যাও হবে। ঘ্রাণশক্তি সম্পূর্ণভাবে চলে গেছে বেশকিছু কোভিড কেসের ক্ষেত্রে। কারও ক্ষেত্রে নাক বন্ধ হয়ে যায় বা নাক দিয়ে জল পড়ে, সে ক্ষেত্রে শ্বাস নিতে সমস্যা হবে অন্য ভাইরাসের ক্ষেত্রে। তবে তা সামান্য। এটা কিন্তু কোভিড নয়। কোভিডের ক্ষেত্রে ঘ্রাণশক্তি সম্পূর্ণ চলে গেলে নাকের মাধ্যমে শ্বাস-প্রশ্বাসে প্রভাব পড়ছে কম। নাক দিয়ে শ্বাস নিতে সমস্যা হচ্ছে না খুব একটা।’
সুবর্ণ গোস্বামী নামে আরেক চিকিৎসক বলেন, ‘কোভিডের ক্ষেত্রে শুধু নয়, অনেক ক্ষেত্রে যেকোনো ভাইরাল জ্বরেই স্বাদ-গন্ধ চলে যায়। শুধু স্বাদ-গন্ধ চলে গেলেই কোভিড হবে এমনটা নয়। সঙ্গে আরও কিছু দেখা প্রয়োজন।’
স্বাদ-গন্ধ চলে গেলেও আতঙ্কিত না হয়ে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে বলছেন এই চিকিৎসক। তিনি বলেন, ‘অ্যাডেনো ভাইরাসের ক্ষেত্রে বা ফ্লু থেকেও স্বাদ-গন্ধের অনুভূতি চলে যায়। তবে কোভিড চিকিৎসার ক্ষেত্রে ক্লিনিক্যালি অর্থাৎ শুধুমাত্র উপসর্গ দেখে চিকিৎসার বিষয়টা শুধু নয়, পরীক্ষা করে দেখতেই হবে পজিটিভ আসছে কি-না। ম্যালেরিয়ার জ্বরের ক্ষেত্রে যেমন স্বাদ-গন্ধ চলে যায়, লিভার বড় হয়ে যায়-এমন কিছু হলে ম্যালেরিয়া ধরেই এগোতে হবে। ন্তু কোভিডের ক্ষেত্রে বিষয়টা আরও বেশি জটিল। উপসর্গ দেখা গেলে তারপর টেস্ট করে তবেই কোভিডের চিকিৎসা করা হচ্ছে।
নাকের ভিতরে পলিপ থাকলে, কিংবা ডায়াবিটিস, অ্যালঝেইমার্স ও পার্কিনসনসের মতো অসুখ হলে অনেক সময় রোগীরা ঘ্রাণশক্তি হারিয়ে ফেলেন। এই প্রসঙ্গে বেলেঘাটা আইডির চিকিৎসক যোগীরাজ রায় বললেন, ‘শুধু স্বাদ-গন্ধ হারিয়ে যাওয়া নয়, কোভিডের ক্ষেত্রে আরও কোনো একটা অস্বস্তি থাকবে শরীরে। হতে পারে মাথাব্যথা বা অল্প জ্বর। গা-হাত পা ব্যথার সঙ্গে স্বাদ-গন্ধের অনুভূতি চলে যাওয়া এমনও হয়েছে কোভিডে। অনেক ক্ষেত্রে শ্বাসকষ্টের সমস্যা শুরু হয়েছে। তাই টানা চার পাঁচ দিন এ জাতীয় সমস্যা হলে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।
এসআর