রিজেন্টের মতো মেয়াদোত্তীর্ণ লাইসেন্সে চলছে আরও অনেক হাসপাতাল!
শুধু রিজেন্ট হাসপাতাল নয়, তাদের মতো মেয়াদোত্তীর্ণ লাইসেন্সে চলছে দেশের আরও বেশ কিছু হাসপাতাল। র্যাবের ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযানে বেসরকারি রিজেন্ট হাসপাতালের অনিয়ম-জালিয়াতি ধরা পড়ার পর খোদ স্বাস্থ্য অধিদফতরের পরিদর্শনে আরও কিছু হাসপাতালের এমন কার্যকলাপের প্রমাণ মিলেছে। এ নিয়ে অধিদফতরের কর্মকর্তাদের মধ্যে আলোচনা চলছে।
স্বাস্থ্য অধিদফতরের সঙ্গে চুক্তি করে কোভিড-১৯ ডেডিকেটেড হিসেবে চিকিৎসা দিচ্ছিল রাজধানীর উত্তরা ও মিরপুরের রিজেন্ট হাসপাতাল। কিন্তু সম্প্রতি র্যাবের ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযানে ওই হাসপাতালের ভিন্ন মুখোশ উন্মোচিত হয়। দেখা যায়, করোনার নমুনা পরীক্ষা ছাড়াই ভুয়া রিপোর্ট দিয়ে যাচ্ছিল হাসপাতালটি। প্রতারণার আশ্রয় নিয়ে রোগী এবং সরকার— উভয়পক্ষ থেকেই কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিচ্ছিল তারা। কেবল এই জালিয়াতিই নয়, ভ্রাম্যমাণ আদালত দেখতে পান, এই হাসপাতাল মেয়াদোত্তীর্ণ লাইসেন্সে চলছিল ছয় বছরেরও বেশি সময় ধরে।
নমুনা পরীক্ষা না করেই রিজেন্ট হাসপাতালের ছয় হাজারেরও বেশি রিপোর্ট দেয়ার ঘটনা শুধু দেশেই নয়, বহির্বিশ্বেও দেশের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করেছে। যদিও এ ঘটনার পর রিজেন্ট হাসপাতালের চেয়ারম্যান সাহেদ করিম ওরফে মোহাম্মদ সাহেদসহ তার সহযোগীদের আইনের আওতায় আনা হয়েছে।
স্বাস্থ্য অধিদফতরের দায়িত্বশীল সূত্র বলছে, রিজেন্ট হাসপাতালের ওই ঘটনার পর স্বাস্থ্য অধিদফতর থেকে কমপক্ষে ১৬টি কোভিড ডেডিকেটেড ঘোষিত ও নন-কোভিড হাসপাতাল পরিদর্শন করা হয়। পরিদর্শনকালে কয়েকটি হাসপাতালের লাইসেন্স মেয়াদোত্তীর্ণ দেখতে পান কর্মকর্তারা। এমনকি হাসপাতাল পরিচালনার জন্য প্রয়োজনীয় অবকাঠামো, চিকিৎসক, নার্স, কর্মকর্তা-কর্মচারীসহ অন্যান্য স্টাফ, ল্যাবরেটরি সুবিধা না থাকার প্রমাণ মিলেছে এসব প্রতিষ্ঠানে।
ওই সূত্র জানায়, করোনার সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ে প্রতিদিন সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায় স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক (ডিজি) অধ্যাপক ডা. আবুল কালাম আজাদ করোনা মোকাবিলায় গঠিত একাধিক কমিটির সঙ্গে বৈঠক করেন। গত বৃহস্পতিবার (১৬ জুলাই) অনুষ্ঠিত সর্বশেষ বৈঠকে মেয়াদোত্তীর্ণ লাইসেন্সের এসব হাসপাতাল সম্পর্কে আলোচনা হয়।
বৈঠকে উপস্থিত একাধিক দায়িত্বশীল কর্মকর্তা জাগো নিউজকে জানান, যে ক’টি হাসপাতালের লাইসেন্স নবায়ন নেই এবং যাদের হাসপাতাল পরিচালনার জন্য উপযুক্ত পরিবেশ, জনবল, ল্যাবরেটরি সুবিধাদি অপর্যাপ্ত রয়েছে তাদের শিগগিরই চিঠি দিয়ে লাইসেন্স নবায়ন ও অন্যান্য অপর্যাপ্ততা দূর করতে সুযোগ দেয়া হবে। বেসরকারি পর্যায়ে পরিচালিত আরও অনেক হাসপাতাল নিয়মিত পরিদর্শন করা হবে।
স্বাস্থ্য অধিদফতরের সর্বশেষ তথ্য অনুসারে, রাজধানীসহ সারাদেশে বেসরকারি হাসপাতাল ও ক্লিনিকের সংখ্যা পাঁচ হাজার ৫৪টি এবং ডায়াগনস্টিক সেন্টারের সংখ্যা নয় হাজার ৫২৯টি। সারাদেশে লাইসেন্সবিহীন আরও অসংখ্য বেসরকারি হাসপাতাল, ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার রয়েছে বলে অভিযোগ আছে।
সংশ্লিষ্টদের মতে, প্রভাবশালী নানা মহলের তদবির ও সুপারিশে স্বাস্থ্য অধিদফতর থেকে লাইসেন্সপ্রাপ্ত হাসপাতালের অনেকগুলোই লাইসেন্স নবায়ন না করে পরিচালিত হচ্ছে। কালে-ভদ্রে স্বাস্থ্য অধিদফতরের প্রতিনিধিরা হাসপাতাল পরিদর্শনে গেলে অবৈধ আর্থিক লেনদেন করে তা এড়িয়ে যায় কর্তৃপক্ষ। কিন্তু খোদ রাজধানীতে রিজেন্ট হাসপাতাল ছয় বছর ধরে মেয়াদোত্তীর্ণ লাইসেন্সে চলতে থাকার বিষয়টি প্রকাশ হওয়ায় নড়ে-চড়ে বসতে হয়েছে অধিদফতরের কর্মকর্তাদের।
এ ব্যাপারে জানতে স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আবুল কালাম আজাদের মোবাইল ফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করেও তাকে পাওয়া যায়নি।
এমইউ/এইচএ/এমকেএইচ