সদস্যপদ দেয়ার ক্ষেত্রে বড় ধরনের কোনো ভুল হয়নি : ইকবাল আর্সলান
স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদ (স্বাচিপ) এর সদস্যপদ প্রদানের ক্ষেত্রে বড় ধরনের কোনো ভুল হয়নি বলে জানিয়েছেন স্বাচিপের বর্তমান মহাসচিব ও আসন্ন সম্মেলনে সভাপতি পদপ্রত্যাশী অধ্যাপক ডা. এম ইকবাল আর্সলান। সোমবার বিকেলে জাগো নিউজের এ প্রতিবেদকের সঙ্গে আলাপকালে তিনি এ কথা জানান।
তিনি বলেন, আসন্ন সম্মেলনকে সামনে রেখে স্বাচিপের এক শ্রেণির নেতা-কর্মী ব্লেম গেমের রাজনীতি শুরু করেছেন। বর্তমান কমিটির কর্মকাণ্ডকে বিতর্কিত ও কলঙ্কিত করতে অপচেষ্টা চালাচ্ছেন। স্বাচিপে ছাত্রদল-শিবিরের চিকিৎসকের অনুপ্রবেশের অভিযোগকে তারা অতিরঞ্জিতভাবে গণমাধ্যমে চিত্রায়িত করেছেন।
তিনি আরো বলেন, স্বাচিপের জেলা পর্যায়ের নেতারা আন্তরিকভাবে স্বাধীনতার স্বপক্ষের চিকিৎসকদের সদস্য পদ দেয়ার আন্তরিক প্রচেষ্টা চালিয়েছেন। নেতাদের চোখকে ফাঁকি দিয়ে তথ্য গোপন করে স্বাচিপ কর্মী সেজে ছাত্রদল ও শিবিরের অনুসারী চিকিৎসকরা স্বাচিপের সদস্যপদ নিয়েছেন। সদস্য যাচাই-বাছাই কমিটির সুপারিশে সকলের সদস্যপদ বাতিল করতে কোনো আপত্তি নেই বলে তিনি মন্তব্য করেন।
স্বাচিপের সহ-সভাপতি অধ্যাপক ডা. আলী আজগর মোড়লকে প্রধান করে গঠিত কমিটির সোমবারের দাখিলকৃত প্রতিবেদন অনুসারে ১৬৮ বিএনপি ও জামায়াতপন্থী চিকিৎসক স্বাচিপ সদস্যপদ পেয়েছেন। বিএমডিসির রেজিস্ট্রেশন জমা দেয়া ছাড়াই কিম্বা ভুল রেজিস্ট্রেশন নম্বর দিয়ে স্বাচিপের সদস্যপদ ভাগিয়ে নিয়েছেন এমন চিকিৎসকের সংখ্যা ১২০ জন। এছাড়া ৩৪৫ জন চিকিৎসকের মধ্যে একই চিকিৎসকের নামে দুই তিন বার সদস্যপদ ইস্যু করা হয়েছে।
তবে ইকবাল আর্সলানের কঠোর সমালোচক নাম প্রকাশ না করার শর্তে একাধিক স্বাচিপ নেতা বলেছেন, ইকবাল আর্সলান এখন দায় এড়াতে নিজেকে নিদোর্ষ প্রমাণের চেষ্টা চালাচ্ছেন। তারা বলেন, সম্প্রতি তিনি স্বাচিপের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির বৈঠকে ১৩ হাজার ৭শ’ সদস্যের সকলকেই সদস্য করে ইসি কমিটির অনুমোদন নিতে অপচেষ্টা চালান। কিন্তু স্বাচিপকে যারা মনেপ্রাণে ভালবাসেন তারা তা হতে দেয়নি। আর দেয়নি বলেই এখন পর্যন্ত ১৬৮ জন বিএনপি জামায়াত-শিবিরপন্থী চিকিৎসক খুঁজে বের করা গেছে।
তারা জানান, এখন দুটি বড় মেডিকেল কলেজ (স্যার সলিমুল্ল্যাহ ও বরিশাল) ও প্রাইভেট মেডিকেল কলেজের সদস্যপ যাচাইবাছাই বাকি রয়েছে। তাছাড়া প্রতিটি ফরম ও ফরমের ছবি দেখে যাচাই করতে পারলে এ সংখ্যা আরো বাড়বে। যদি ২৫০ বিএনপি জামায়াত ও স্বাচিপের সদস্য হতো তবে তা সংগঠনটির আস্তিনে সাপ রাখার মতো ব্যাপার হতো। মহাসচিব হিসাবে তিনি কোনোভাবেই দায় এড়াতে পারেন না বলে তারা মন্তব্য করেন।
বিএনপি-জামায়াতপন্থী চিকিৎসকরা কিভাবে সদস্যপদ পেলো- এ প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, প্রধানত স্বাচিপের জেলা সভাপতি/মহাসচিবের সুপারিশে সদস্যপদ দেয়ার আবেদন কেন্দ্রীয় কমিটিতে আসে।
তিনি উদহারণ টেনে বলেন, একজন চিকিৎসক চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ থেকে পাস করেছেন যিনি বিএনপি বা জামায়াতপন্থী রাজনীতির সাথে জড়িত ছিলেন কিন্তু পাস করে বের হয়ে চাকরি নিয়ে হয়তো দিনাজপুরে পোস্টিং পেয়েছেন। তিনি সেখানে গিয়ে প্রকৃত রাজনৈতিক পরিচয় গোপন করে স্বাচিপের চিকিৎসকদের সাথে মেলামেশা করেন। মিটিং মিছিলে যান। যখন সদস্য সংগ্রহ করা হয় তখন ওই মেডিকেল কলেজের স্বাচিপ নেতারা তাকে কোনো প্রকার সন্দেহ না করে সদস্য ফরম পূরণ করান। এভাবে খুব বেশি না হলেও বিএনপি জামায়াত সমর্থক চিকিৎসক এভাবেই স্বাচিপ সদস্য হয়েছেন বলে তিনি মন্তব্য করেন।
ভুল রেজিস্ট্রেশন কিংবা রেজিস্ট্রেশন ছাড়া সদস্যপদ প্রদান প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ভুল রেজিস্ট্রেশনের অভিযোগ সত্যি নয়। অনেক ইন্টার্নি চিকিৎসক সাময়িকভাবে বিএমডিসির প্রাপ্ত রেজিস্ট্রেশন দিয়ে সদস্য হয়েছেন। কিন্তু ইন্টার্নি পাস করে স্থায়ী রেজিস্ট্রেশনে নম্বর পাল্টে গেছে। তাই সফটওয়্যারে নতুন নম্বর দিয়ে সার্চ দিলে তা সঠিক নয় দেখাচ্ছে। কেউ কেউ তড়িঘড়ি করে বিএমডিসির রেজিস্ট্রেশন ছাড়াই আবেদনপত্র পূরণ করেছে।
একই চিকিৎসকের দুই তিন বার স্বাচিপ সদস্যপদ প্রদানের ব্যাপারে তিনি বলেন, সরকারি চাকরি সূত্রে অনেককেই বদলি হতে হয়। অনেকে না জেনে না বুঝে যেখানে গিয়েছেন সেখানে ফরম পূরণ করেছেন। ফলে এমন ঘটনা ঘটেছে।
তিনি যাচাই-বাছাই কমিটির সদস্যদের ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, যাচাই-বাছাইয়ের মাধ্যমে একটি পূর্ণাঙ্গ সদস্য তালিকা প্রণয়ন করা সম্ভব হবে।
এমইউ/এসএইচএস/আরআইপি