নমুনা সংগ্রহে ১৫ হাজার বেকার মেডিকেল টেকনোলজিস্ট নিয়োগের দাবি
দেশে করোনাভাইরাস সংক্রমণ ক্রমাগতভাবে বাড়তে থাকায় প্রান্তিক পর্যায় থেকে নমুনা সংগ্রহ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। এ সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের জন্য কমিউনিটি হেলথ কেয়ার প্রোভাইডার (সিএইচসিপি) দের দিয়ে নমুনা সংগ্রহের উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। গত (বৃহস্পতিবার) এ সম্পর্কে একটি চিঠি ইস্যু করেছে স্বাস্থ্য অধিদফতরের সংশ্লিষ্ট বিভাগ।
স্বাস্থ্য অধিদফতরের কমিউনিটি বেইজড হেলথ কেয়ারের লাইন ডিরেক্টর সহদেব চন্দ্র রাজবংশী চিঠিতে বলেন, ‘বিশ্বব্যাপী করোনাভাইরাস মহামারি আকার ধারণ করেছে। বর্তমানে বাংলাদেশেও করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ক্রমাগত বাড়ছে। ভবিষ্যতে আমাদের দেশেও ভয়াবহ আকার ধারণ করতে পারে। এই পরিস্থিতি মোকাবিলায় প্রান্তিক জনসাধারণের মধ্যে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ চিহ্নিত করার জন্য কমিউনিটি ক্লিনিক লেভেলে নমুনা সংগ্রহ করার প্রয়োজন হতে পারে।’ চিঠিতে উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কর্মকর্তাদের গাইডলাইন অনুযায়ী একদিনের প্রশিক্ষণ দেওয়ার অনুরোধ করা হয়।
এ চিঠির পর সংশ্লিষ্ট মহলে দেখা দিয়েছে আলোচনা-সমালোচনা। বিশেষ করে এ সিদ্ধান্ত ‘আত্মঘাতী’ হতে পারে বলে মনে করছেন মেডিকেল টেকনোলজিস্ট (ল্যাবরেটরি)-সহ বিভিন্ন বিভাগের তিন বছর মেয়াদি কোর্সে পাস করে বসে থাকা বেকার টেকনোলজিস্টরা।
তারা বলছেন, স্বাস্থ্য অধিদফতর কমিউনিটি হেলথ কেয়ার প্রোভাইডারদের দিয়ে নমুনা সংগ্রহের যে উদ্যোগ নিয়েছে তাদের চিকিৎসাসেবা সংক্রান্ত কোনো একাডেমিক সনদ এবং সংশ্লিষ্ট বিষয়ে ল্যাবরেটরি কাজের কোনো প্রশিক্ষণও নেই। অপরদিকে করোনা পরীক্ষার জন্য নমুনা সংগ্রহ অত্যন্ত জটিল প্রক্রিয়া।
নাক এবং গলার ভেতর থেকে নমুনা সংগ্রহকারীদের এনাটমি ও ফিজিওলজি বিষয়ে জ্ঞান থাকা আবশ্যক। নমুনা সংগ্রহকারীদের এই জ্ঞান না থাকলে রোগীর ক্ষতি হতে পারে এবং নমুনা সংগ্রহকারী নিজেও করোনায় আক্রান্ত হতে পারেন। করোনার নমুনা সংগ্রহ সঠিকভাবে করা না হলে পরীক্ষার ফলাফল পরিবর্তন হয়ে যেতে পারে। যার ফলে করোনা রোগী শনাক্তকরণে জটিলতা তৈরি হবে এবং লোকালয়ে ব্যাপকভাবে করোনা ছড়িয়ে পড়তে পারে৷ এক্ষেত্রে সরকারি উদ্যোগ ব্যাহত হবে।
বেকার অ্যান্ড প্রাইভেট সার্ভিসেস মেডিকেল টেকনোলজিস্ট অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মো. শফিকুল ইসলাম বলেন, ‘আমরা ৩ বছর মেয়াদি ১৫ হাজার ডিপ্লোমা মেডিকেল টেকনোলজিস্ট (ল্যাবরেটরি)-সহ অন্যান্য বিভাগের আরোও ১৫ হাজার মেডিকেল টেকনোলজিস্ট প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশ মোতাবেক করোনা মোকাবিলায় জীবন বাজি রেখে ঝাঁপিয়ে পড়তে প্রস্তুত আছি।’
তিনি বলেন, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার নিয়ম অনুযায়ী ১ জন চিকিৎসকের বিপরীতে ৫ জন মেডিকেল টেকনোলজিস্ট থাকার কথা থাকলেও দেশে চিকিৎসক আছেন প্রায় ৭০ হাজার, অন্যদিকে মেডিকেল টেকনোলজিস্টের পদ সর্বসাকুল্যে ৯ হাজার।
খোঁজ নিয়ে জানা যায় ১০ বছর যাবৎ নিয়োগ না হওয়ায় টেকনোলজিস্টের কয়েক হাজার পদ শূন্য আছে। দেশের এই সংকটকালে বেকার মেডিকেল টেকনোলজিস্টদের নিয়োগ প্রদানের দাবি জানান তিনি।
জানা গেছে, দেশে করোনার প্রাদুর্ভাব দেখা দেওয়ার পর থেকেই করোনা শনাক্তে রোগীদের নমুনা সংগ্রহ (রক্ত এবং নাক ও গলা থেকে লালা) পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে আসছেন সরকারি হাসপাতালে কর্মরত মেডিকেল টেকনোলজিস্টরা।
সরকারি হাসপাতালে কর্মরত মেডিকেল টেকনোলজিস্টদের দিয়ে প্রাথমিক পর্যায়ে স্বল্প পরিসরে করোনা পরীক্ষা-নিরীক্ষা সম্ভব হলেও বর্তমানে রোগীর সংখ্যা এবং পরীক্ষাকেন্দ্র বৃদ্ধি পাওয়ায় তাদেরকে দিয়ে সুষ্ঠুভাবে এ কাজ অসম্ভব হয়ে পড়েছে।
এছাড়া করোনা রোগীদের পরীক্ষায় নিয়োজিত বেশ কয়েকজন মেডিকেল টেকনোলজিস্ট করোনা আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছেন এবং অনেকে কোয়ারেন্টাইনে আছেন। সরকারি পর্যায়ে কর্মরত সীমিত সংখ্যক মেডিকেল টেকনোলজিস্ট দিয়ে পরিস্থিতি সামাল দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না।
এ বিষয়ে বাংলাদেশ মেডিকেল টেকনোলজিস্ট অ্যাসোসিয়েশন-এর সাবেক মহাসচিব মো. সেলিম মোল্লা বলেন, ‘স্বাস্থ্য অধিদফতর যাদেরকে দিয়ে করোনা রোগীর নমুনা সংগ্রহ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তারা এই কাজে প্রশিক্ষিত ও যোগ্য নয়। মেডিকেল টেকনোলজিস্ট (ল্যাবরেটরি) এই কাজের যোগ্য। স্বাস্থ্য অধিদফতরের গৃহীত এই সিদ্ধান্ত সঠিক এবং বাস্তবসম্মত নয়।’
এমইউ/এসএইচএস/জেআইএম