ভিডিও EN
  1. Home/
  2. স্বাস্থ্য

স্বতন্ত্র বেতন স্কেলের দাবিতে রাজপথে ঢামেকের চিকিৎসকরা

প্রকাশিত: ১০:১৩ এএম, ০৭ অক্টোবর ২০১৫

চিকিৎসকদের জন্য স্বতন্ত্র বেতন স্কেল ঘোষণা, সিলেকশন গ্রেড ও টাইম স্কেল পুনর্বহালের দাবিতে এবার রাজপথে আন্দোলনে নেমেছেন ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের চিকিৎসকরা। এ দাবিতে বুধবার দুপুরে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে মানববন্ধন করেছেন তারা।  

ঢামেক হাসপাতালের সর্বস্তরের চিকিৎসকদের ব্যানারে অনুষ্ঠিত এ মানববন্ধন কর্মসূচিতে স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদ (স্বাচিপ) ও ঢাকা মেডিকেল কলেজের  শিক্ষক সমিতির নেতারা অংশগ্রহণ করেন।

মানববন্ধনে অংশগ্রহণকারী ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের একজন জুনিয়র চিকিৎসক ক্ষোভ প্রকাশ করে এ প্রতিবেদককে জানান, ‘এমবিবিএস পাস করে সরকারি চাকরিতে মেডিকেল অফিসার পদে যোগদান করেন একজন চিকিৎসক। ৩০ বছর চাকরির পরও তাদের অনেককে মেডিকেল অফিসার হিসেবেই অবসরে যেতে হয়। উচ্চতর (স্নাতোকোত্তর) ডিগ্রি অর্জন না করলে পদোন্নতি পাওয়া যায়না।

তিনি আরো বলেন, আবার দিনরাত কষ্ট করে পড়াশুনা করে ডিগ্রি অর্জন করলেও সীমিত সংখ্যক পদ থাকায় যোগ্যতা থাকা স্বত্ত্বেও যথাসময়ে পদোন্নতি পাননা চিকিৎসকরা। প্রশাসনসহ অন্যান্য ক্যাডারের কর্মকর্তারা সহজেই পদোন্নতি পেয়ে দ্রুততম সময়ে বড় কর্মকর্তা বনে যান।

ওই চিকিৎসক আরো জানান, সদ্য ঘোষিত পে স্কেলে সিলেকশন গ্রেড ও টাইম স্কেল বন্ধ করে দেয়ায় একই ব্যাচ ও কর্মকর্তাদের মধ্যে বেতন বৈষম্য বাড়বে। তাছাড়া উপজেলা কর্মকর্তার বেতন বিলে ইউএনওর সাক্ষরের সিদ্ধান্ত চিকিৎসকদের জন্য চরম অবমাননাকর।

ঢামেক হাসপাতালের ক্যাজুয়েটি বিভাগের আবাসিক চিকিৎসক রিয়াজ মোর্শেদ জাগো নিউজকে জানান, পাঁচ দফা দাবি আদায়ে তারা রাজপথে নেমেছেন। দাবিগুলো হলো : সিলেকশন গ্রেড ও টাইম স্কেল পুনর্বহাল, স্বাস্থ্য ক্যাডারে চাকরির বয়স অনুযায়ী অন্যান্য ক্যাডারের মতো নতুন পদ সৃষ্টি করে পদোন্নতির ব্যবস্থা, সকল বিভাগের সর্বোচ্চ কর্মকর্তার পদ মর্যাদা একই রকম করা, সকল ক্যাডারকে পদোন্নতির ক্ষেত্রে সমান সুযোগ প্রদান ও উপজেলা কর্মকর্তার বেতন বিলে ইউএনওর সাক্ষরের সিদ্ধান্ত বাতিল করা।

চিকিৎসকদের অভিযোগ সদ্য ঘোষিত পে-স্কেলে সর্বোচ্চ গ্রেড ১ ও ২ শুধুমাত্র আমলাদের জন্য সংরক্ষিত রাখা হয়েছে। অন্য ক্যাডারের প্রবেশাধিকার বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। এছাড়াও সিনিয়র সচিব ও মন্ত্রী পরিষদ সচিব নামে আরো দুটি স্কেল শুধু আমলাদের জন্য আগেই নির্ধারিত করা হয়েছে।

তারা জানান, স্বাস্থ্য ক্যাডারের অধ্যাপকরা গ্রেড-৩ অনুযায়ী বেতন ভাতা ও সুবিধা পান। সিলেকশন গ্রেড পেলে তারা গ্রেড-২ এ উন্নীত হতে পারতেন। কিন্তু সিলেকশন গ্রেড বাতিল হওয়ায় তাদের গ্রেডের উন্নতি বন্ধ হয়ে গেছে। এ ব্যাপারটি যতটা না আর্থিক তার চেয়ে বেশি অবমাননাকর।

মানববন্ধনে অংশগ্রহণকারী চিকিৎসকরা আরো জানান, গতবছর বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও বিভাগের ৩০টি শীর্ষ পদকে গ্রেড-১ ও গ্রেড-২ এ উন্নীত করে প্রজ্ঞাপন জারি করে জনপ্রশাসন মন্ত্রনালয়। প্রশাসনে গ্রেড-১ সচিব ও গ্রেড-২ অতিরিক্ত সচিব পদমর্যাদার পদ। নতুন পে স্কেলে সিলেকশন গ্রেড বাতিলের ফলে মেডিকেলের অধ্যাপকদের জন্য গ্রেড-৩ সর্বোচ্চ পদ।

চিকিৎসকদের মতে, সিলেকশন গ্রেড ও টাইমস্কেল বন্ধ করায় একই ব্যাচ ও বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তাদের মধ্যে বেতন বৈষম্য বাড়বে এবং ক্ষেত্র বিশেষে অবনমন হবে। কারণ প্রশাসন ক্যাডারের কর্মকর্তাদের নিজস্ব ক্যাডার তফসিলের নির্ধারিত পদের (লাইন পদে) বাইরে উপসচিব বা তদূর্ধ্ব পর্যায়ের পদে পদোন্নতি দেয়া হয়। এ স্তরে অনুমোদিত পদের চেয়ে অতিরিক্ত সংখ্যক কর্মকর্তাকে পদোন্নতির মাধ্যমে উচ্চতর স্কেলে অন্তর্ভুক্ত করা হয়।

আবার পদ না থাকার অজুহাতে অন্যান্য ক্যাডার ও ফাংশনাল সার্ভিসের কর্মকর্তাদের বছরের পর বছর একই পদে বসিয়ে রাখা হয়। ফলে একই ব্যাচের কর্মকর্তাদের মধ্যে ব্যাপক বেতন বৈষম্য সৃষ্টি হয়। সিলেকশন গ্রেড ও টাইম স্কেলের কারণে সৃষ্ট এ বেতন বৈষম্য নিরসনের সুযোগ ছিল।

চিকিৎসকরা জানান, বেতন স্কেলে মূল বেতনের ওপর একটি নির্দিষ্ট হারে প্রতি বছর বেতন বৃদ্ধির সুবিধা দেয়া হয়েছে। যে কর্মকর্তা নিয়মিতভাবে পদোন্নতি পাবেন তিনি এ সুবিধা পাবেন। নিয়মিত পদোন্নতিবঞ্চিত কর্মকর্তা প্রতিটি পদোন্নতিতে উচ্চতর বেতন স্কেলে যাবেন এবং ওই ধাপের মূল বেতনের নির্ধারিত হারে বেতন বৃদ্ধির সুবিধা পাবেন।

অন্যদিকে যে কর্মকর্তার পদোন্নতির সুযোগ নেই তিনি ওই কর্মকর্তার তুলনায় নিচের স্তরের বেতনস্কেলের নিধারিত হারে বেতন বৃদ্ধির সুবিধা পাবেন। তাই সিলেকশন গ্রেড ও টাইমস্কেল বাতিল করা একটি চরম নৈরাজ্যমূলক সিদ্ধান্ত।

এছাড়া উপজেলা পর্যায়ের চিকিৎসকদের বেতন বিলে উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) এর সাক্ষর করার সিদ্ধান্ত অত্যন্ত অপমানজনক বলে তারা মন্তব্য করেন।

মানববন্ধন কর্মসূচিতে স্বাচিপ যুগ্মমহাসচিব ডা. জামালউদ্দিন চৌধুরী, ঢামেক  শিক্ষক সমিতির মহাসচিব অধ্যাপক ডা. আবু ইউসুফ ফকির, ডা. ইমরান, ডা. তন্ময়, ডা. মোমেন, ডা. আজিজ, ডা. সোলাইমান, ডা. শুভ ও ডা. সারোয়ার প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

এমইউ/এসএইচএচ/পিআর