ডেঙ্গুর পরীক্ষা করতেই বেশি ভিড়
রাজধানীর শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে সকাল থেকেই বহির্বিভাগে মানুষের ভিড়। সবাই ১০ টাকার টিকিট সংগ্রহ করে আউটডোরে মেডিকেল অফিসারের (ডাক্তার) রুমগুলোর সামনে দীর্ঘ লাইনে অপেক্ষা করছেন। তাদের বেশির ভাগই এসেছেন জ্বর নিয়ে। এছাড়া প্যাথলজি বিভাগের সামনে রক্ত পরীক্ষার জন্যও দীর্ঘ লাইন দেখা যায়।
হাসপাতালের ডেঙ্গু সেলে বর্তমানে ৩৪৪ রোগী ভর্তি। তাদের প্রায় সবাইকে মশারি দিয়ে ঢেকে রাখা হয়েছে। হাসপাতালে ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা তুলনামূলক কমলেও চাপ কমেনি প্যাথলজিতে।
হাসপাতালের দ্বিতীয় তলায় ডেঙ্গু সেলের ফ্লোরে মশারির মধ্যেই দুপুরের খাবার খাচ্ছিলেন মোহাম্মদপুরের বসিলার বাসিন্দা মহসীন আলী। গত শুক্রবার হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন তিনি।
মহসীন আলী বলেন, ডেঙ্গু বেশ কদিন আগেই হয়েছে। কিন্তু ভর্তি হতে পারছিলাম না। গত শুক্রবার যখন টেস্ট করিয়ে জানা গেল অবস্থা বেশি ভালো না তখনই এখানে ভর্তি নিয়েছে।
তিনি বলেন, এমন এক শহরে থাকি যে সিটি কর্পোরেশন এত বুলি আওড়ায় তবুও নাগরিকদের ডেঙ্গু হয়। ডেঙ্গু আমার সব শেষ করে দিল। বসিলায় আমার ভাঙারির ব্যবসা, দিন আনি দিন খাওয়ার মতো অবস্থা। কিন্তু ডেঙ্গুর জন্য আমার ব্যবসা বন্ধ রেখে হাসপাতালে পড়ে থাকতে হচ্ছে। আমার স্ত্রী বাড়ি সামলাচ্ছে আর হাসপাতালেও এসে আমার সেবা করছে। সিটি কর্পোরেশন এত উদ্যোগের গল্প দিচ্ছে তবুও কেন আমাদের মতো নাগরিকদের ডেঙ্গু আতঙ্ক নিয়ে দিন কাটাতে হচ্ছে।
হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বলছে, ডেঙ্গুর প্রকোপ কমুক আর না কমুক হাসপাতালে ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা তুলনামূলক কিছুটা কমেছে। কিন্তু প্যাথলজিতে ভিড় রয়েই গেছে। সুস্থ অনেকেই আতঙ্ক নিয়ে রক্ত পরীক্ষা করছেন। নরমাল জ্বর হলে রক্তও পরীক্ষা করছেন।
ডেঙ্গু পরীক্ষার জন্য লাইনে দাঁড়িয়েছিলেন বেসরকারি চাকরিজীবী সোহেল আহমেদ। তিনি বলেন, হঠাৎ করে তীব্র জ্বর, সঙ্গে পেট ব্যথা। এতেই ব্যাপক ভয় পেয়ে যাই। যে কারণে হাসপাতালে এসেছি। এখানে কিট দিয়ে ম্যানুয়ালিও পরীক্ষা করা হচ্ছে।
দেখা গেছে, বহির্বিভাগে ডেঙ্গু পরীক্ষা করতেই বেশি ভিড় করছেন আতঙ্কিত মানুষ। জ্বর হলেই আতঙ্কিত হয়ে ছুটে আসছেন, ফলে ভিড় বাড়ছে রোগীর চেয়ে আতিঙ্কত মানুষের। প্রথমে টিকিট সংগ্রহ করে ডাক্তারের কাছে সমস্যার কথা বলছেন, ডাক্তার যাদের অবস্থা গুরুতর মনে করছেন তাদের টেস্ট দিচ্ছেন।
শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল পরিচালক অধ্যাপক উত্তম কুমার বড়ুয়া জাগো নিউজকে বলেন, বর্তমানে ৩৪৪ ডেঙ্গু রোগী ভর্তি রয়েছে। যার মধ্যে ১৪৮ মহিলা এবং শিশু। এছাড়া চারজন আইসিইউতে রয়েছেন।
তিনি বলেন, গত চার দিনের তথ্য যদি বিশ্লেষণ করি তাহলে দেখা যাবে ১৮ আগস্ট ডেঙ্গু রোগী ভর্তি হয়েছেন ৭৫ জন, ১৯ তারিখে ৬১ এবং ২০ ও ২১ তারিখ এ পর্যন্ত ভর্তি হয়েছেন ৫৯ জন। আমরা লক্ষ্য করছি দিন দিন রোগীর সংখ্যা কমছে।
তিনি আরও বলেন, সবাই ভয় করেছিল ঈদে ঘরে ফেরা মানুষের কারণে ডেঙ্গু রোগী বাড়তে পারে। কিন্তু আমাদের জন্য সুখবর, এটা ব্যাপক আকার ধারণ করেনি। এটা না হওয়ার পেছনের কারণ হতে পারে মানুষ খুবই সচেতন হয়েছে, আরও একটা কারণ হতে পারে সিটি কর্পোরেশন ভালোভাবে, ভালো মানের ওষুধ ছিটিয়েছে। সবচেয়ে বড় কথা মানুষের সচেতনতার কারণে ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা আগের চেয়ে কমেছে।
এএস/এএইচ/এমএস