স্বাস্থ্য বিভাগের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ঈদের ছুটি বাতিল
মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের ভারপ্রাপ্ত সচিব (সমন্বয় ও সংস্কার) শেখ মুজিবুর রহমান এনডিসি বলেছেন, ডেঙ্গু পরিস্থিতিতে আসন্ন ঈদের ছুটিতে ঢাকার বাইরে যেতে সরকারি সব কর্মকর্তা-কর্মচারীকে কঠোরভাবে নিরুৎসাহিত করা হয়েছে। এছাড়া স্বাস্থ্য বিভাগের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ঈদের ছুটি বাতিল করা হয়েছে।
তিনি বলেন, ডেঙ্গু চিকিৎসায় চিকিৎসক স্বল্পতার জন্য যেসব চিকিৎসক ট্রেনিংয়ে আছেন তাদের ট্রেনিং বাদ দিয়ে চিকিৎসা কেন্দ্রে চিকিৎসা দেয়ার নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
মঙ্গলবার (৩০ জুলাই) মন্ত্রিপরিষদ কক্ষে ডেঙ্গু প্রতিরোধ, বন্যা পরিস্থিতি মোকাবিলা ও গুজব প্রতিরোধ-সংক্রান্ত এক পর্যালোচনা সভা শেষে তিনি এসব কথা বলেন।
ভারপ্রাপ্ত সচিব বলেন, ‘এ মুহূর্তে সবচেয়ে বড় ইস্যু হচ্ছে ডেঙ্গু পরিস্থিতি। ডেঙ্গু প্রতিরোধের জন্য ইতোমধ্যে স্বাস্থ্য বিভাগের সব কর্মকর্তা-কর্মচারীর ছুটি বাতিল করা হয়েছে। সব সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীকে আসন্ন ঈদের ছুটি ঢাকায়ই উপভোগের জন্য উৎসাহিত করা হয়েছে। কোনো কোনো ক্ষেত্রে ছুটি বাতিলও করা হয়েছে। যেমন- স্বস্থ্য বিভাগ।’
তিনি বলেন, ‘স্বাস্থ্য বিভাগের যেসব কর্মকর্তা ডেঙ্গু চিকিৎসার সঙ্গে জড়িত তাদের ছুটি বাতিলের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়েছে। অন্যদের ঈদের ছুটিতে ঢাকা ছেড়ে গ্রামে না যাওয়ার ব্যাপারে কঠিনভাবে নিরুৎসাহিত করা হয়েছে।’
ভারপ্রাপ্ত সচিব আরও বলেন, চিকিৎসক স্বল্পতার কারণে বর্তমানে যেসব চিকিৎসক বিভিন্ন ট্রেনিং কোর্সে আছেন তাদের ট্রেনিং বাদ দিয়ে চিকিৎসা কেন্দ্রে চিকিৎসা দেয়ার নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। কোনো জায়গায় বেডের স্বল্পতা রয়েছে, আবার কোনো কোনো হাসপাতালে সব বেড ব্যবহার হয় সেগুলোও প্রোপারলি ব্যবহারের জন্য বলা হয়েছে।
তিনি বলেন, সরকারি সব কর্মকর্তা-কর্মচারীকে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে যে, তারা তাদের নিজ নিজ উদ্যোগে কর্মস্থল ও আবাসন- এসব জায়গা পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখবেন। স্কাউটদের সমন্বয়ে ঢাকা দক্ষিণ ও উত্তর সিটিতে শিক্ষার্থীদের টিম গঠন করা হয়েছে। শিক্ষা মন্ত্রণালয় ডেঙ্গু প্রতিরোধ ও গুজব বিষয়ে সচেতনতা বাড়ানোর জন্য শিক্ষার্থীদের কাজ করতে বলা হয়েছে।
ঢাকাসহ কতটি জেলায় ডেঙ্গু ছড়িয়ে পড়েছে সে বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘এ মুহূর্তে সঠিক তথ্যটা তার কাছে নেই। ইতোমধ্যে সব বিভাগীয় কমিশনার ও জেলা প্রশাসকদের ডেঙ্গু, গুজব ও বন্যায় প্রতিকারমূলক ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছে। প্রশাসনের সব স্তরের কর্মকর্তাদের এ নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।’
তবে বিভিন্ন পত্র-পত্রিকার প্রকাশিত খবর, দেশের ৫৯ জেলায় ডেঙ্গু রোগ ছড়িয়ে পড়েছে। আক্রান্তদের অধিকাংশই ঢাকা থেকে নিজ নিজ জেলায় গিয়ে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হন।
যেসব জেলায় ডেঙ্গু ছড়িয়ে পড়েছে সেসব জেলায় ডেঙ্গু চিকিৎসা আছে কি-না, জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমাদের কাছে এমন কোনো তথ্য আসেনি যে, কোনো জেলা ম্যানেজমেন্টের বাইরে চলে গেছে।’
ডেঙ্গু বিষয়ে সংশ্লিষ্ট সরকারি দফতর ফেল করেছে কি-না, এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, ডেঙ্গু তো আজকে নতুন কিছু নয়। হয়তো প্রাদুর্ভাবটা এখন বেশি। তবে মশা ধ্বংসে ওষুধের কার্যকারিতার বিষয়টা উঠে এসেছে। এজন্য যথাযথ ও মানসম্মত ওষুধ যাতে আসে সে বিষয়ে বলা হয়েছে।
সরকারি তথ্য অনুযায়ী, গত ২৪ ঘণ্টায় সারাদেশের হাসপাতালে ডেঙ্গু রোগীর ভর্তির সংখ্যা তিন হাজার ৮৪৭ জন। এখন পর্যন্ত সারাদেশে ১৩ হাজার ৬৩৭ ডেঙ্গু রোগী চিকিৎসা নিয়েছেন। এর মধ্যে নয় হাজার ৭৪০ জন চিকিৎসা নিয়ে সুস্থ হয়েছেন।
ডেঙ্গু আক্রান্তে মারা গেছেন আটজন। তবে মৃত্যুর সংখ্যাটা একটু বাড়তে পারে।
গত চারদিন আগে স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেছিলেন, আটজন মারা গেছেন। এমন প্রশ্নে ভারপ্রাপ্ত সচিব শেখ মুজিবুর রহমান বলেন, সরকারি তথ্য অনুযায়ী আজ পর্যন্ত আটজনই মারা গেছেন। তবে এ সংখ্যাটা বাড়তেও পারে। কিছু রোগী ক্রিটিকাল রয়েছেন, তাই এ সংখ্যাটা বাড়তে পারে।
তিনি বলেন, কোনো ধরনের তথ্য গোপন করা হচ্ছে না। এসব তথ্য দিয়েছেন স্বাস্থ্য সচিব।
ডেঙ্গু পরিস্থিতি মহামারি ঘোষণার পর্যায়ে এসেছে কি-না, জানতে চাইলে ভারপ্রাপ্ত সচিব বলেন, এখনও এ পর্যায়ে আসেনি। ম্যানেজমেন্টের বাইরে চলে গেলে মহামারি ঘোষণা করা হয়। এ পর্যায়ে এখনও আসেনি।
এমইউএইচ/এসএইচএস/এমএআর/এমকেএইচ/এমএস