লিভার দিয়ে মা আমাকে নতুন জীবন দান করেছেন
মিলনায়তন জুড়ে তখন পিনপতন নীরবতা। ছেলেও কাঁদছেন মাও কাঁদছেন। গর্ভধারিণী মায়ের দান করা লিভারের একাংশ সফল অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে সুস্থ হয়ে উঠেছেন লিভার সিরোসিসে আক্রান্ত ২০ বছর বয়সী সিরাতুল ইসলাম শুভ। অনুভূতি প্রকাশ করার একপর্যায়ে ফুপিয়ে কেঁদে সিরাতুল বলেন, ‘মা আমাকে নতুন জীবন দান করেছেন।’
ছেলের কান্না দেখে দুর্ভাবনায় মা আঁচলে মুখ লুকিয়ে কেঁদে ইশারায় সিরাতুলকে কথা বলতে নিষেধ করেন। বৃহস্পতিবার দুপুরে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) মিল্টন মিলনায়তনে এ দৃশ্যের অবতারণা হয়।
মায়ের নিষেধেও থামেননি সিরাতুল। নতুন জীবন ফিরে পাওয়ার আনন্দে সৃষ্টিকর্তা মহান আল্লাহ তায়ালা, প্রধানমন্ত্রী, স্বাস্থ্যমন্ত্রী, বিএসএমএমইউ ভিসি, লিভার প্রতিস্থাপনের অস্ত্রোপচারে নেতৃত্ব দেয়া হেপাটোবিলিয়ারি, প্যানক্রিয়েটিক ও লিভার ট্রান্সপ্ল্যান্ট সার্জারি বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. মো. জুলফিকার রহমান খানসহ সব চিকিৎসকের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন। বিশেষ করে যার মাধ্যমে বিএসএমএমইউতে ভর্তি ও অস্ত্রোপচারের সুযোগ পেয়েছেন সেই চিকিৎসক ডা. সাঈদের নাম বার বার কৃতজ্ঞতার সঙ্গে স্মরণ করেন সিরাতুল।
অনুভূতি ব্যক্ত করতে গিয়ে বাবা ও ভাইবোনদের ধন্যবাদ জানিয়ে সিরাতুল বলেন, ‘মা আমাকে লিভার দান করবে এতে তারা কেউ বাধা দেননি বরং বিশ্ববিদ্যালয়পড়ুয়া এক বোন প্রয়োজনে তার লিভারের একাংশ দিতেও প্রস্তুত ছিলেন।’
আজ সিরাতুলকে বিএসএমএমইউ থেকে রিলিজ দেয়া উপলক্ষে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে প্রধান অতিথি স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক অনুষ্ঠানের শেষাংশে মা-ছেলের হাতে লাল গোলাপ তুলে দেন। মাত্র ২৫ দিনের মাথায় লিভার প্রতিস্থাপনকারী ২০ বছর বয়সী যুবক ও লিভারদাতা ৪৭ বছর বয়সী গর্ভধারিণী মা সুস্থ হয়ে হাসপাতাল ছেড়েছেন।
গত ২৪ জুন বিএসএমএমইউতে প্রথমবারের মতো লিভার প্রতিস্থাপনে (ট্রান্সপ্ল্যান্ট) সফল অস্ত্রোপচার সম্পন্ন হয়। বিএসএমএমইউর হেপাটোবিলিয়ারি, প্যানক্রিয়েটিক ও লিভার ট্রান্সপ্ল্যান্ট সার্জারি বিভাগে এ সফল অস্ত্রোপচার হয়। লিভার প্রতিস্থাপনে সহযোগিতা করেন ভারতের খ্যাতনামা লিভার ট্রান্সপ্ল্যান্ট সার্জন ড. বালাচান্দ্র মেনন ও তার চিকিৎসক দল।
ওইদিন ভোর ৬টা থেকে রাত ১২টা পর্যন্ত অস্ত্রোপচার করা হয়। মোট ৬০ জনের টিম ঐতিহাসিক এ অস্ত্রোপচারে অংশ নেন।
এমইউ/এনডিএস/পিআর