ডেঙ্গুর প্রাদুর্ভাবে আতঙ্ক নয়, প্রয়োজন সচেতনতা
৯, ২৮, ২৫৪, ২৬৭, ২৯৫ ও ১৭২১। এ পরিসংখ্যানটি ২০১৪ সাল থেকে ২০১৯ সাল পর্যন্ত প্রতি বছরের একটি নির্দিষ্ট (জুন) মাসে রাজধানীর বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ডেঙ্গু রোগীর। মাত্র বছর পাঁচেক আগেও জুন মাসে ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা থাকতো খুবই কম। কিন্তু কয়েক বছরের ব্যবধানেই এ মাসে আক্রান্তের সংখ্যা আশঙ্কাজনক বেড়ে গেছে। ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীর এ ধারাবাহিকতা শুধু জুন মাসেই নয়, জুলাই মাসেও অব্যাহত রয়েছে।
গত বছর অর্থাৎ ২০১৮ সালের জুলাই মাসে মাত্র ৯৪৬ জন আক্রান্ত হলেও চলতি বছরের জুলাই মাসের প্রথম ছয়দিনেই আক্রান্তের সংখ্যা ৬৪৩ জন।
স্বাস্থ্য অধিদফতরের কর্মকর্তারা চলতি বর্ষা মৌসুমে ডেঙ্গুর প্রার্দুভাব আরও বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন। তবে আতঙ্কিত না হয়ে সচেতনার পরামর্শ দিয়েছেন তারা।
গত ৪ জুলাই স্বাস্থ্য অধিদফতরে এডিস মশাবাহিত ডেঙ্গু ও চিকুনগুনিয়ার প্রাদুর্ভাব প্রতিরোধে ও ডেঙ্গু চিকিৎসার ব্যবস্থাপনা বাস্তবায়ন সম্পর্কিত এক জরুরি সভায় বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা এ পরামর্শ দেন।
সভায় উপস্থিত ছিলেন স্বাস্থ্য অধিদফতরের রোগ নিয়ন্ত্রণ শাখার পরিচালক অধ্যাপক ডা. সানিয়া তাহমিনা, অধ্যাপক মেডিসিন ও এডিটর ইন চিফ, ডেঙ্গু ন্যাশনাল গাইডলাইন অধ্যাপক ডা. কাজী তরিকুল ইসলাম, অধ্যাপক ডা. এইচ এ এম নাজমুল আহসান, স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ ও বাংলাদেশ সোসাইটি অব মেডিসিন অধ্যাপক ডা. বিল্লাহ আলম, ঢাকা মেডিকেল কলেজের মেডিসিন বিভাগের অধ্যাপক ও বাংলাদেশ সোসাইটি অব মেডিসিনের সাধারণ সম্পাদক ডা. আহমেদুল কবির, ঢামেকের মেডিসিন বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ডা. রোবেদ আমিন, স্বাস্থ্য অধিদফতরের উপ-পরিচালক (সমন্বয়) ডা. সাইফুল আলম প্রমুখ।
বৈঠকে উপস্থিত একাধিক চিকিৎসক জাগো নিউজের সঙ্গে আলাপকালে জানান, দীর্ঘ বৈঠক শেষে চলতি বর্ষা মৌসুমে ডেঙ্গুর প্রার্দুভাব আরও বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। তবে আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই। চিকিৎসক ও রোগীদের জন্য অবশ্যই করণীয় ও বর্জনীয় সম্পর্কে মতামত ব্যক্ত করেন তারা।
অবশ্যই করণীয় :
সব সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালে ডেঙ্গু রোগীর চিকিৎসা অবশ্যই জাতীয় গাইড লাইন-২০১৮ অনুসারে প্রদান করতে হবে। ডেঙ্গু মৌসুমে যে কোনো জ্বরের রোগীকে চিকিৎসার জন্য দ্রুততার সঙ্গে রেজিস্টার্ড ডাক্তার বা মেডিসিন বিশেষজ্ঞদের শরণাপন্ন হতে হবে। ডেঙ্গু রোগীর ক্ষেত্রে সঠিক ফ্লুইড ব্যবস্থাপনাই সঠিক চিকিৎসা। এ ক্ষেত্রে চিকিৎসকদের অবশ্যই গাইড লাইন অনুসরণ করতে হবে। ডেঙ্গু রোগীদের মধ্যে যাদের কো-মরবিডিটি আছে (শিশু, বৃদ্ধ, গর্ভবতী ও ডায়াবেটিস) তাদের দ্রুত হাসপাতালে পাঠাতে হবে এবং চিকিৎসা গ্রহণ করতে হবে। ডেঙ্গু কেস, মশা ও ভাইরাস সম্পর্কিত সার্ভিল্যান্স (নজরদারি) বৃদ্ধি করতে হবে। সমন্বিত বাহক ব্যবস্থাপনা (কমিউনিটি, প্রাতিষ্ঠানিক ও জাতীয় পর্যায়) আরও জোরদার করতে হবে।
অবশ্যই বর্জনীয় :
ডেঙ্গু রোগীকে প্যারাসিটামল ছাড়া এনএসএআইডি, স্টোরোয়েড, ফ্রেস ফ্রোজেন প্লাজমা ও প্লাটিলেট কনসেনট্রেট দেয়া যাবে না। অনিবন্ধিত স্বাস্থ্য সেবা প্রদানকারী/স্বাস্থ্য সেবা প্রদানকারী প্রতিষ্ঠানে জ্বরের চিকিৎসা করাবেন না।
স্বাস্থ্য অধিদফতরের রোগ নিয়ন্ত্রণ শাখার পরিচালক অধ্যাপক ডা. সানিয়া তাহমিনা সম্প্রতি সচিবালয়ে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে ডেঙ্গু পরিস্থিতি শীর্ষক এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, ‘ডেঙ্গু রোগের প্রাদুর্ভাব শুধু বাংলাদেশেই নয়, বিশ্বের বিভিন্ন দেশে বৃদ্ধি পাচ্ছে। রাজধানী ঢাকায় ঘনবসতির পাশাপাশি ইদানীং নির্মাণাধীন ভবন ও রাস্তাঘাটে নির্মাণ সামগ্রী ফেলে রাখার ফলে অনেক স্থানে বৃষ্টির স্বচ্ছ পানি জমে যায়। যা কিনা এডিস মশা প্রজননের উৎকৃষ্ট স্থান।’
তিনি বলেন, ‘স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ও স্বাস্থ্য অধিদফতরের প্রচেষ্টায় ডেঙ্গু প্রতিরোধে চিকিৎসক-নার্সসহ সংশ্লিষ্ট সবাইকে প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ প্রদানের কারণে গত বছরের চেয়ে এবার এখনও আক্রান্ত ও মৃতের সংখ্যা কম।’
এমইউ/এনডিএস/এমএস