বিশ্বব্যাপী জলবায়ু পরিবর্তনে বাড়ছে ডেঙ্গুর প্রকোপ
বাংলাদেশসহ সারাবিশ্বে এডিস মশাবাহিত ডেঙ্গু জ্বরের প্রকোপ বাড়ছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলছে, বিশ্বের মোট জনসংখ্যার শতকরা ৫০ শতাংশ সাধারণ ও মারাত্মক ধরনের ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকিতে রয়েছেন।
বর্তমানে প্রতি বছর মারাত্মক ধরনের ডেঙ্গু (হেমোরেজিক) জ্বরে কমপক্ষে ৫ লাখ মানুষ আক্রান্ত হচ্ছেন। প্রতি মিনিটেই বিশ্বের কোথাও না কোথাও কেউ না কেউ ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হচ্ছেন। তাদের অধিকাংশই শিশু। আক্রান্তদের মধ্যে বছরে ২২ হাজার ডেঙ্গু রোগীর মৃত্যু হয়।
বিশ্বের বিভিন্ন দেশে বিশেষ করে গ্রীষ্মমণ্ডলীয় দেশগুলোতে এ রোগে আক্রান্ত রোগী ও মৃত্যুহার প্রতি বছর বেড়েই চলেছে। জলবায়ুর পরিবর্তনের কারণে একদিকে বৈশ্বিক উষ্ণায়নের (গ্লোবাল ওয়ার্মিং) কারণে তাপমাত্রা বৃদ্ধি, খরা, বরফ গলছে ও সুনামীসহ ঝড় হচ্ছে। এ সবের ফলে বর্ষাকালের সময় বৃদ্ধি, অধিক বৃষ্টিপাতের কারণে বন্যা ও জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হওয়ায় বিশুদ্ধ পানি ও পয়ঃনিষ্কাশন সুবিধা বাধাগ্রস্ত হয়। ফলে বহু মানুষ খোলামেলা স্থানে বসবাস করতে বাধ্য হয় এবং মশার কামড়ে ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হন। বিশ্বব্যাপী ডেঙ্গুর প্রকোপ বৃদ্ধির অন্যতম কারণ জলবায়ুর পরিবর্তন!
স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, চিকিৎসক ও নার্সসহ প্রশিক্ষিত জনবল দিয়ে দ্রুত ডেঙ্গু শনাক্ত ও সময়মতো উপযুক্ত চিকিৎসা শুরু করা না গেলে আক্রান্তদের মধ্যে শতকরা ২০ জনের মৃত্যু ঝুঁকি থাকে। তবে দ্রুত শনাক্ত ও প্রশিক্ষিত জনবল দিয়ে চিকিৎসা করা গেলে মৃত্যু ঝুঁকি শতকরা ১ ভাগেরও নিচে নেমে আসে।
স্বাস্থ্য অধিদফতরের রোগ নিয়ন্ত্রণ শাখার (সিডিসি) পরিচালক অধ্যাপক ডা. সানিয়া তাহমিনা বলেন, ‘তাপমাত্রা বৃদ্ধি পেলে মশার প্রজনন দ্রুত হয়। মহিলা (ফিমেইল) মশার কার্য়কারিতা বাড়ে। মশার সংক্রমন হওয়ার জন্য যে ইউকিউবিশন সময় প্রয়োজন হয় তা কমে যায়। আগে যে সব জায়গায় মশা থাকতে পারত না তাপমাত্রা বৃদ্ধির ফলে সে সব জায়গাতে অবস্থান করতে পারে। বিশেষ করে বৃষ্টির পানি ব্যবহারের জন্য বিভিন্ন পাত্রে জমিয়ে রাখার কারণে ডেঙ্গুবাহী এডিশ মশার প্রজনন বৃদ্ধি পাচ্ছে।’
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্যানুসারে, চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে মে মাস পর্যন্ত বিশ্বের বিভিন্ন দেশের মধ্যে মালয়েশিয়াতে ডেঙ্গু জ্বরে ৪৬ হাজার আক্রান্ত ও ৭৪ জনের মৃত্যু, ফিলিপাইনে ৭২ হাজার আক্রান্ত ও ৩০৩ জনের মৃত্যু, সিঙ্গাপুরে ৩ হাজার ২৩৩ আক্রান্ত, ভিয়েতনামে ৬০ হাজার আক্রান্ত ও চারজনের মৃত্যু ও প্রতিবেশী দেশ ভারতে ৬ হাজার ৮০৭ জন আক্রান্ত ও ৭ জনের মৃত্যু, মিয়ানমারে ৪ হাজার আক্রান্ত ও ১৪ জনের মৃত্যু এবং থাইল্যান্ডে ২৬ হাজার আক্রান্ত ও ৪১ জনের মৃত্যু হয়।
স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আবুল কালাম আজাদ বলেন, ‘বিশ্বের অন্যান্য দেশের কারণে জয়বায়ু পরিবর্তন হচ্ছে। যার প্রভাবে বাংলাদেশের তাপমাত্রা বৃদ্ধি পেয়েছে। বাতাসে আদ্রতার পরিমাণও বেড়েছে। কখনও খরা, আবার কখনও বা অতিবৃষ্টির ফলে ডেঙ্গু মশার প্রকোপ বৃদ্ধি পাচ্ছে। তবে প্রকোপ বৃদ্ধি পেলেও বিশ্বের অন্যান্য দেশের তুলনায় এ বছর বাংলাদেশে ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগী ও মৃতের সংখ্যা অনেক কম।’
তিনি বলেন, ‘আন্তর্জাতিক মানদণ্ড অনুযায়ী ডেঙ্গুতে মৃতের হার ১ শতাংশের কমে থাকতে হবে। সেই মানদণ্ড অনুযায়ী দেশে মৃতের হার ১ শতাংশের অনেক কম।’
অধ্যাপক ডা. আবুল কালাম আজাদ জানান, জনসচেতনতার পাশাপাশি স্বাস্থ্য অধিদফতরের উদ্যোগে বর্ষার আগে, বর্ষার সময় ও বর্ষার পরে মশার ওপর জরিপ চালানো হয়। এ ছাড়া চিকিৎসক ও নার্সদের ডেঙ্গু রোগ ও রোগীর চিকিৎসা সম্পর্কে প্রশিক্ষণ দেয়ায় আক্রান্ত ও মৃতের সংখ্যা কমে এসেছে।
এমইউ/এনডিএস/এমএস