অর্থাভাবে ডিএনএ ল্যাবরেটরিতে পরীক্ষা-নিরীক্ষা বন্ধ
ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক)-কে স্থাপিত দেশের প্রথম ন্যাশনাল ডিএনএ (ডিঅক্সিরাইবো নিউক্লিক এসিড) প্রোফাইলিং ল্যাবরেটরিতে সব ধরনের নমুনা পরীক্ষা কার্যক্রম বন্ধ হয়ে গেছে। প্রয়োজনীয় অর্থাভাবে নমুনা পরীক্ষার জন্য প্রয়োজনীয় দামী রি-এজেন্ট কিনতে না পারায় নিরুপায় হয়ে ল্যাব কর্তৃপক্ষ পরীক্ষা বন্ধ রাখতে বাধ্য হয়েছেন বলে জানা গেছে।
জাগো নিউজের নিজস্ব অনুসন্ধান ও নারী ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের নির্ভরযোগ্য একাধিক সূত্রে এ তথ্য বেরিয়ে এসেছে।
সূত্রে জানা যায়, গত দুই সপ্তাহের বেশি সময় যাবত ল্যাবরেটরিতে নতুন করে কোন নমুনা পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হয়নি। আগে থেকে যে সকল নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছিল সেগুলোও রি-এজেন্টের অভাবে পরীক্ষা বন্ধ রয়েছে। পুলিশের সংশ্লিষ্ট তদন্তকারী কর্মকর্তা ডিএনএ প্রতিবেদনের জন্য ল্যাবরেটরিতে গিয়ে রিপোর্ট না পেয়ে ফেরত যাচ্ছেন। সাময়িক সমস্যার কারণে নমুনা পরীক্ষার চূড়ান্ত প্রতিবেদন দিতে কিছুদিন বিলম্ব হবে বলে জানিয়ে দিচ্ছেন ল্যাব কর্মকর্তারা।
গত প্রায় এক দশকের বেশি সময় ধরে এ ল্যাবরেটরিতে নমুনা পরীক্ষার মাধ্যমে অত্যন্ত সফলতার সঙ্গে খুন, ধর্ষণ ও ডাকাতি মামলা প্রকৃত অপরাধী সনাক্তকরণের কার্যক্রম চলেছে। একইভাবে পিতৃত্ব ও ভাই-বোনের সম্পর্ক নির্ণয়ের পাশাপাশি অজ্ঞাত লাশ সনাক্ত করার মতো নিরবিচ্ছিন্ন কার্যক্রম পরিচালনার মাধ্যমে ল্যাবরেটরিটি সুষ্ঠু বিচার ব্যবস্থায় গুরত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে আসছিল।
নারী ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা যায়, ২০০৬ সাল থেকে চলতি বছরের আগস্ট মাস পর্যন্ত ডিএনএ ল্যাবরেটরিতে মোট ৩ হাজার ১শ’ ৬১টি নমুনা পরীক্ষা হয়েছে। ২০০৬ সালে মাত্র ২৮টি নমুনা পরীক্ষা হলেও ২০১৪ সালে এ সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়ে ৪৩৩টি দাঁড়ায়। চলতি বছরের আগস্ট পর্যন্ত ল্যাবরেটরিতে নমুনা পরীক্ষা হয়েছে মোট ৩০৬টি।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, নারীর প্রতি সহিংসতা রোধে নারী ও শিশু মন্ত্রণালয়ের অধীনে পরিচালিত মাল্টি সেক্টরাল প্রোগ্রাম ‘অন ভায়োলেন্স অ্যাগেইনস্ট উইম্যান’ প্রকল্পের অধীনে ঢামেকের ডিএনএ ল্যাবরেটরি পরিচালিত হচ্ছে। এ প্রকল্পে অর্থায়ন করছে ডেনিস ইন্টারন্যাশনাল ডেভেলপমেন্ট অ্যাসিস্ট্যান্স (ডানিডা)। গত এক দশকে ধ্বসে পড়া রানা প্লাজার নিহত শ্রমিক, বিডিআর বিদ্রোহ ও গার্মেন্টেস অগ্নিকাণ্ডে নিহতদের পরিচয় সনাক্তসহ বহু চাঞ্চল্যকর ঘটনায় ল্যাবরেটরির কার্যক্রম সর্বমহলে প্রশংসিত হয়েছে।
ল্যাবরেটরির নমুনা পরীক্ষা বন্ধের নেপথ্যে কারণ অনুসন্ধানে জানা গেছে, প্রকল্পে অর্থায়নকারী প্রতিষ্ঠান ডানিডা চলতি বছরের (২০১৫-১৬ অর্থ বছর) অর্থছাড় না দেয়ায় কর্তৃপক্ষ ল্যাবরেটরির কার্যক্রম বন্ধ রাখতে বাধ্য হয়েছেন। তিন মাস আগে অর্থবছর শুরু হলেও ডেনমার্ক সরকারের আভ্যন্তরীণ কিছু সমস্যার কারণে এখনও অর্থ ছাড় হয়নি।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে নারী ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয় ও ঢামেক ডিএনএ ল্যাবরেটরির একাধিক কর্মকর্তা জাগো নিউজকে জানান, ডিএনএ ল্যাবরেটরিতে বছরে ৫০ লাখ থেকে ৬০ লাখ টাকার রি-এজেন্ট প্রয়োজন হয়। এসব রি-এজেন্ট বিদেশ থেকে আমদানি করতে হয়। দেশীয় আমদানিকারকদের মাধ্যমে রি-এজেন্ট কিনে আনতে ছয় থেকে আট সপ্তাহ সময় লেগে যায়।
জানা গেছে, ডিএনএ ল্যাবের কর্মকর্তারা বিগত সময়ে অর্থছাড়ে বিলম্ব হলে নিজ দায়িত্বে ফান্ড প্রাপ্তি সাপেক্ষে টাকা পরিশোধের মৌখিক চুক্তিতে রি-এজেন্ট কিনিয়ে এনে ল্যাবের কার্যক্রম অব্যাহত রাখতেন। কিন্তু এবার অর্থছাড়ের ব্যাপারে আরো বিলম্ব হতে পারে এমন খবর জানতে পেরে নিরুপায় হয়ে কার্যক্রম বন্ধ করে দিতে বাধ্য হয়েছেন। বিদ্যমান এই সমস্যা সম্পর্কে নারী ও শিশু মন্ত্রণালয়ের শীর্ষ কর্মকর্তাদের মৌখিক ও লিখিতভাবে জানানো হয়েছে বলেও জানান ল্যাবের একজন কর্মকর্তা।
ল্যাবরেটরির কার্যক্রম সম্পর্কে জানতে চাইলে ঢামেক ডিএনএ ল্যাবরেটরির প্রধান ড. শরীফ আকতারুজ্জামান বলেন, সাময়িক সমস্যার কারণে ল্যাবের কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে। এর চেয়ে বেশি কিছু জানাতে তিনি অস্বীকৃতি জানান।
এমইউ/আরএস/এসএইচএস/পিআর