এই কিশোরীকে কেউ চিনেন কী?
‘তোমার নাম কি? ফিক করে হেসে বললো, জানেন না বুঝি, আমার নাম তানিয়া। তোমার বাবা মার নাম বাড়ি ঘর কোথায় তা কি মনে আছে? হ, মনে আছে। আমার বাপের নাম আবুল বাশার, মার নাম আমেনা। বাড়ি মাদারীপুর, ভাঙ্গা, মধুখালি ব্রিজের সামনে। মায় মইরা গেছে। বাপে বিয়া করছে। আমার সৎমার নাম রিনা, হের একটা মাইয়া আছে নাম আবেদা। আমার ছোড কিন্তু আমারে কিল মারে। বলেই হেসে গড়িয়ে পড়লো কিশোরী তানিয়া।’
সোমবার দুপুরে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ওয়ান স্টপ ক্রাইসিস সেন্টারে (ওসিসি) কো-অর্ডিনেটর ডা. বিলকিস বেগমের কক্ষে বসেই কথা হচ্ছিল ওই কিশোরীর সঙ্গে। ডা. বিলকিস জানান, মেয়েটিকে নিয়ে মহাঝামেলায় আছি। গত দেড় মাসেরও বেশি সময় যাবত ওসিসিতে মেয়েটির চিকিৎসা চলছে।
মিরপুর থানা পুলিশ তাকে স্থানীয় আল আমিন ইন্টারন্যাশনাল স্কুলের সামনে থেকে অচেতন অবস্থায় উদ্ধার করে। মেয়েটিকে কে বা কারা তাকে রাস্তায় ফেলে যায়। পুলিশ অজ্ঞাত হিসেবেই তাকে ওসিসিতে ভর্তি করে।
বর্তমানে খানিকটা সুস্থ হলেও এলোমেলো কথাবার্তা বলে। নিজের নাম, বাবা, মা, সৎমা ও সৎবোনের নাম বলতে পারলেও সঠিকভাবে বাড়ির নাম ঠিকানা বলতে পারে না। মানসিক চিকিৎসকদের মাধ্যমে তার কাউন্সিলিং করা হচ্ছে। যদি সম্ভব হয় পরিচয় খুঁজে পেতে তাকে নিয়ে একটি সচিত্র প্রতিবেদন করে দেয়ার অনুরোধ জানান ডা. বিলকিস।
জানা গেছে, শুরুর দিকে ওই কিশোরীর শারীরিক অবস্থা খুবই খারাপ ছিল। কয়েকদিন অচেতন থাকার পর হুঁশ ফিরলেও মুখে খাবার খেতে পারতো না। নল দিয়ে নাকের মাধ্যমে খাবার খাওয়ানো হতো। সারারাত ঘুমাতো না। হঠাৎ হঠাৎ ভয় পেয়ে ঘুম ভেঙ্গে বসে থাকতো। প্রথম কিছুদিন সামনে কেউ গেলে তার গলা টিপে ধরতে চাইতো। ওসিসিতে নির্যাতনের শিকার অন্যান্যরা ভয়ে রাত জেগে থাকতো।
কর্তব্যরত চিকিৎসক জানান, কোনো এক অজানা ভয় তাকে তাড়িয়ে বেড়ায়। তার স্মৃতিশক্তি লোপ পেয়েছে। কখনও বলছে বা ভ্যানগাড়ি চালক আবার কখনও বলছে অ্যাম্বুলেন্সের ড্রাইভার। তবে সে গ্রামে থাকতো নাকি ঢাকায় থাকতো সে সম্পর্কে স্পষ্ট করে কিছু বলে না। ঢাকার ঠিকানা জিজ্ঞেস করলে ৫৯ নম্বর রোড আর বাড়ি নম্বর বলতে খেই হারিয়ে অন্য প্রসঙ্গে চলে যায় বলে জানান ওই চিকিৎসক।
এমইউ/এসএইচএস/আরআইপি