বিএসএমএমইউয়ে নিয়োগ পরীক্ষার ফল বাতিল হচ্ছে না
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বিএসএমএমইউ) মেডিকেল অফিসার/মেডিকেল অফিসার (ডেন্টাল সার্জারি) পদে নিয়োগ পরীক্ষার ফলাফল বাতিলের দাবি অযৌক্তিক। এই পরীক্ষা নতুন করে নেয়ার সুযোগ নেই বলে জানিয়েছেন বিএসএমএমইউ উপাচার্য কনক কান্তি বড়ুয়া।
বৃহস্পতিবার বিশ্ববিদ্যালয়ের ডা. মিল্টন হলে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি একথা বলেন।
উপাচার্য বলেন, মঙ্গলবারের উদ্ভূত পরিস্থিতিতে শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তার স্বার্থে মৌখিক পরীক্ষা সাময়িকভাবে স্থগিত করা হয়েছিল। আজ দুপুরে সিন্ডিকেটের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী দ্রুত মৌখিক পরীক্ষা শুরু হবে।
এর আগে সকাল ১১টা থেকে দুপুর ১টা পর্যন্ত একই মিলনায়তনে বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেট সভা অনুষ্ঠিত হয়।
লিখিত পরীক্ষার আগে প্রশ্নপত্র খোলা হয়েছে- শিক্ষার্থীদের এমন অভিযোগের ভিত্তিতে বিএসএমএমইউ ভিসি বলেন, পরীক্ষার আগে প্রশ্নপত্র খোলার অভিযোগ সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন। মডারেটররা অত্যন্ত গোপনীয়তার সঙ্গে সবকিছু সম্পন্ন করেছেন। এছাড়াও এই প্রক্রিয়ায় কোনো পর্যায়ে ভিসি সম্পৃক্ত ছিলেন না। শুধু ভিসি নয়, যেসব শিক্ষকের ছেলেমেয়ে পরীক্ষার্থী তাদের এসবের (প্রশ্নপত্র) আশপাশেই রাখা হয়নি।
ভিসি বলেন, আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা পরীক্ষার্থীদের বয়স নিয়ে যে প্রশ্ন তুলেছেন তা সত্য নয়। নিয়োগ প্রক্রিয়ায় অতিরিক্ত বয়সের দুইজনকে আবেদন করতে দেখেছি আমরা। একজনকে প্রাথমিক বাছাইয়ের সময় বাতিল করে দেয়া হয়েছে। তিনি লিখিত পরীক্ষায় অংশ নিতে পারেননি। বিদ্যুৎ নামের আরেকজন তার বয়স গোপন করে আবেদন করেছিলেন। লিখিত পরীক্ষা দেয়ার পর তার বয়সের বিষয়টি আমাদের নজরে আসে, আমরা তার পরীক্ষা বাতিল করে তার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করি।
তিনি আরও বলেন, সার্বিক নিয়োগ পরীক্ষা নিয়ে বিতর্ক সৃষ্টির কোনো সুযোগ নেই। ফলাফল ঘোষণার আগেই ফলাফল ফাঁস হয়ে গেছে- এমন অভিযোগের কোনো তথ্য প্রমাণ পাওয়া যায়নি। পরীক্ষায় মোবাইলসহ ইলেকট্রনিক ডিভাইস ব্যবহারের বিধান ছিল না এবং ডিভাইস ব্যবহারের কোনো তথ্য আমাদের কাছে নেই। ফলাফল প্রকাশের পর কিছু অকৃতকার্য শিক্ষার্থী প্রশ্নপত্র ফাঁসসহ নানা অযৌক্তিক দাবি তুলে লিখিত পরীক্ষার ফলাফল বাতিলের দাবি জানিয়েছেন যা সম্পূর্ণ অযৌক্তিক। ফলাফল বাতিল করে পরীক্ষা গ্রহণের কোনো সুযোগ নেই।
মৌখিক পরীক্ষা সাময়িক স্থগিতের বিষয়ে তিনি বলেন, মঙ্গলবার বিশ্ববিদ্যালয় অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতি (ভিসি কার্যালয়ে ভাঙচুর) সৃষ্টি হয়েছিল সেসময় মৌখিক পরীক্ষা দিতে আসা শিক্ষার্থীদের জীবনের নিরাপত্তার বিষয়টি চিন্তা করে আমরা পরীক্ষা সাময়িকভাবে স্থগিত করি।
এর আগে বিশ্ববিদ্যালয় সিন্ডিকেট সদস্যদের জরুরি সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভার বিষয়ে ভিসি বলেন, এই সভায় দুটি সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। প্রথমটি সাময়িকভাবে স্থগিত করা মৌখিক পরীক্ষা দ্রুত শুরু করা। এছাড়াও ভাঙচুরের ঘটনা তদন্তে বিশ্ববিদ্যালয়ের অভ্যন্তরে একটি কমিটি করা। দুইটিই অবিলম্বে কার্যকর হবে।
উল্লেখ্য, বিএসএমএমইউতে ২০০ চিকিৎসক নিয়োগের জন্য গত ২০ মার্চ অনুষ্ঠিত পরীক্ষার ফলাফল মে মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহে প্রকাশিত হয়। ১৮০ জন চিকিৎসা কর্মকর্তা ও ২০ জন দন্তচিকিৎসক পদে ২০০ নম্বরের লিখিত পরীক্ষায় আট হাজার ৫৫৭ জন অংশ নেন।
লিখিত পরীক্ষায় এক পদের বিপরীতে চারজন উত্তীর্ণ হন। এ হিসাবে ৭১৯ জন মেডিকেল অফিসার ও ডেন্টালের ৮১ জন মিলে মোট ৮২০ জন লিখিত পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন। চূড়ান্ত নিয়োগের লক্ষ্যে তাদের ৫০ নম্বরের মৌখিক পরীক্ষা নেয়া হবে বলে জানানো হয়।
কিন্তু ফল ঘোষণার পরপরই বিক্ষোভে ফেটে পড়েন ‘সুযোগবঞ্চিত’ চিকিৎসকরা। তারা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবনের বিভিন্ন দেয়ালে ‘ছেলের জন্য সাজানো নিয়োগ, লজ্জা, ভিসি লজ্জা; ভিসির পদত্যাগ চাই; অর্থের বিনিময়ে এ নিয়োগ মানি না, মানবো না; প্রশ্নফাঁসের এ নিয়োগ কাদের জন্য; আমাদের সংগ্রাম চলছে, চলবে’ স্লোগান লেখা পোস্টার সেঁটে দেন।
রোববার সকালে আন্দোলনকারী চিকিৎসকরা সোমবারের অনুষ্ঠিতব্য মৌখিক পরীক্ষা বাতিলের দাবিতে ক্যাম্পাসে জড়ো হয়ে মিছিল বের করেন। নিয়োগ পরীক্ষা বাতিল করে পুনরায় গ্রহণের দাবি জানিয়ে স্লোগান দেন। সেসময় বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে উপাচার্যের কার্যালয়ের সামনে গেলে পুলিশ বাধা দেয় লাঠিচার্জ করে।
পরদিন সোমবার ও মঙ্গলবার একইভাবে আন্দোলন ও ভিসির পদত্যাগের দাবিতে আমরণ অনশন করে তারা। মঙ্গলবার আন্দোলনের একপর্যায়ে তারা ভিসির কার্যালয়ে ভাঙচুর চালায়। এ ঘটনায় শাহবাগ থানায় একটি নাশকতার মামলা হয়েছে।
এআর/বিএ/জেআইএম