ভিডিও EN
  1. Home/
  2. স্বাস্থ্য

চানখাঁরপুলের সেই পেট্রোলপাম্পটি অবশেষে উচ্ছেদ হচ্ছে

প্রকাশিত: ০৬:৫৭ পিএম, ০৬ সেপ্টেম্বর ২০১৫

চাঁনখারপুলের সেই পেট্রোলপাম্পটি অচিরেই উচ্ছেদ হবে। প্রধানমন্ত্রীর প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী চাঁনখারপুলেই জাতীয় বার্ন ইনস্টিটিউট স্থাপিত হবে। আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে ইনস্টিটিউট নির্মাণের উপযোগী পরিবেশ সৃষ্টি করতে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা তথা বেদখলকৃত পেট্রোলপাম্পের জমি উদ্ধারে উচ্ছেদ অভিযান পরিচালিত হবে।

রোববার সচিবালয়ে স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিমের সভাপতিত্বে ‘বার্ন ইনস্টিটিউট স্থাপনের লক্ষ্যে জমি অবমুক্তকরণ’ সংক্রান্ত এক আন্তঃমন্ত্রণালয় সভায় স্বাস্থ্যমন্ত্রী চানখাঁরপুলে টিবি হাসপাতাল সংলগ্ন জমিতে বার্ন ইনস্টিটিউট স্থাপনের লক্ষ্যে কাজ শুরু করতে সংশ্লিষ্টদের নির্দেশ দিয়েছেন।

তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রীর আন্তরিক সদিচ্ছা ও নির্দেশনা অনুযায়ী এই জায়গায় বার্ন ইনস্টিটিউট তৈরি করতে হবে। সভায় জানানো হয়, রাজধানীর চানখাঁরপুলের টিবি হাসপাতাল ও এর সংলগ্ন জমি স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের অধীনে এবং এখানে বার্ন ইনস্টিটিউট নির্মাণে আইনগত কোনো সমস্যা নেই।

নির্ভরযোগ্য সূত্রে জানা গেছে, দুদিন আগেই এক অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে বার্ন বিশেষজ্ঞ ডা. সামন্তলাল সেনের দেখা হলেই বার্ন ইনস্টিটিউটের নির্মাণে প্রয়োজনীয় কার্যক্রম শুরুর সর্বশেষ খবরাখবর জানতে চান।

জমি নিয়ে দুই মন্ত্রণালয়ের সৃষ্ট জটিলতার প্রসঙ্গ তুলতেই তাকে থামিয়ে দিয়ে বলেন, পোড়া রোগীদের সুচিকিৎসা নিশ্চিত করতে চাঁনখারপুলের ওই জমিতেই বার্ন ইনিস্টিটিউট স্থাপিত হবে এবং তার কার্যালয় থেকে এ ব্যাপারে সর্বাত্মক সহায়তা প্রদান করা হবে।

রোববার সন্ধ্যায় জাগো নিউজের এ প্রতিবেদকের সঙ্গে আলাপকালে ডা. সেন এ খবরের সত্যতা স্বীকার করে বলেন, ইতিপূর্বে কয়েকবার ঢামেক বার্ন ইউনিট পরিদর্শনে এসে পোড়ারোগীদের কষ্ট ও যন্ত্রণা প্রধানমন্ত্রীর মনকে ভীষণভাবে নাড়া দিয়েছে। পোড়ারোগীদের সুচিকিৎসা নিশ্চিত করার জন্য ইনস্টিটিউট স্থাপনে তিনি আন্তরিক  বলে মন্তব্য করেন ডা. সেন।

নির্ভরযোগ্য সূত্রে জানা গেছে, জাতীয় বার্ন ইনস্টিটিউটের কাজ দ্রুত শুরুর লক্ষ্যে বার্ন বিশেষজ্ঞরা ডেভেলপমেন্ট প্রজেক্ট প্রোপোজাল (ডিপিপি) তৈরির কাজ দ্রুতগতিতে করছেন। আগামী কয়েকদিনের মধ্যে তা স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে জমা দেয়া হবে। সেখান থেকে পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ে একনেকের বৈঠকে পাসের জন্য পাঠানো হবে।

গত বেশ কিছুদিন ধরে চাঁনখারপুলের জমিতে জাতীয় বার্ন ইনস্টিটিউট স্থাপন নিয়ে অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছিল। সম্প্রতি স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় চাঁনখারপুলের পদ্মা অয়েল কোম্পানির পেট্রোলপাম্পের সামনে ‘স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের সম্পত্তি, জাতীয় বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটের জন্য নির্ধারিত স্থান’ লেখা সাইনবোর্ড লাগাতে গেলে বাধার মুখে পড়েন।

পেট্রোলপাম্পের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা ওই জমির মালিক পূর্ত মন্ত্রণালয় বলে দাবি করেন। কথাকাটাকাটির এক পর্যায়ে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সহায়তায় স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় সাইনবোর্ড লাগাতে সক্ষম হয়। পরদিন পেট্রোলপাম্পের ভেতরে ‘এই পেট্রোলপাম্পের জায়গা গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতির পক্ষে গণপূর্ত অধিদফতর থেকে ৩০ বছরের জন্য ইজারাপ্রাপ্ত-আদেশক্রমে কর্তৃপক্ষ লেখা সাইনবোর্ড দেখতে পাওয়া যায়।

রোববার আন্তঃমন্ত্রণালয়ের বৈঠকের মাধ্যমে জমি সংক্রান্ত সমস্যার সমাধান হয়েছে বলে মনে করছেন বার্ন বিশেষজ্ঞরা।

উল্লেখ্য, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গত ২৬ ফেব্রুয়ারি হোটেল সোনারগাঁওয়ে প্লাস্টিক সার্জনদের বার্ষিক সম্মেলনে এসে দেশে একটি আন্তর্জাতিক মানসম্পন্ন সর্বাধুনিক বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউট স্থাপনের ঘোষণা দেন। এরপর গত ১৭ মে প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়ের পরিচালক ডা. মো. জুলফিকার আলী বার্ন ইনস্টিটিউট স্থাপনের প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহণের জন্য স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়কে চিঠি দেন।

স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের একাধিক দায়িত্বশীল ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা জাগো নিউজকে বলেন, প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণা বাস্তবায়নের লক্ষ্যে ঢাকা মেডিকেল কলেজ বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইউনিট সমন্বয়ক ডা. সামন্তলাল সেনের নেতৃত্বে আট সদস্যের একটি উচ্চ পর্যায়ের প্রতিনিধি দল চলতি মাসেই সিঙ্গাপুর ও মালয়েশিয়ার কয়েকটি হাসপাতাল পরিদর্শন করে এসেছেন।

আন্তঃমন্ত্রণালয়ের সভায় পূর্তমন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন, স্বাস্থ্য সচিব সৈয়দ মন্জুরুল ইসলাম, পূর্ত সচিব মঈনুদ্দীন আবদুল্লাহ, ঢাকা বিভাগীয় কমিশনার জিল্লার রহমান, স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. দীন মো. নুরুল হক, ডা. সামন্ত লাল সেন, বার্ন ইউনিটের পরিচালক অধ্যাপক ডা. আবুল কালাম আজাদ, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের পরিচালক ডা. জুলফিকার লেনিনসহ স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়, পূর্ত মন্ত্রণালয়, স্বাস্থ্য অধিদফতর, পূর্ত বিভাগের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।

উল্লেখ্য, দেশে প্রতি বছর গড়ে ছয় লাখ নারী, পুরুষ ও শিশু বিভিন্নভাবে (বিদ্যুৎস্পৃষ্ট, অগ্নিশিখা, রাসায়নিক ও গরম তরল পদার্থে ঝলসে) দগ্ধ হচ্ছে। তাদের সুচিকিৎসা নিশ্চিত করতে দেড় হাজার উচ্চ ডিগ্রিধারী বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক প্রয়োজন হলেও রয়েছেন মাত্র ৫২ জন।

এমইউ/বিএ