রেমিজার কিডনি দেবে বাবা-মা, চিকিৎসার টাকা দেবে কে?
সকালে যে সময় এসে বসেছিল ওরা, তখন সূর্যের তেজ ছিল না। হাসপাতালের দোতলার বারান্দা ঘেঁষে দক্ষিণ পাশের জানালার যে ধারে যখন সে ঘুমে বিভোর, তখন দুপুরের ঝাঁঝালো রোদ, সঙ্গে মৃদু বাতাস। ক্লান্ত শরীরে গরম আর ঘুম দুটোই ঘাম ঝরাচ্ছে তার।
গাড়ি থেকে নেমেই হাসপাতালে। চিকিৎসক ডায়ালাইসিস করবেন সন্ধ্যা ৬টার পর। সেই সময় পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে হাসপাতালের বারান্দায়। কিডনি হাসপাতালে আসন পাওয়া আর ‘চাঁদ’ হাতে পাওয়া প্রায় সমান। দেয়ালে পিঠ ঠেকিয়ে সেই যে বসা রেমিজার, সে পিঠ কখন সোজা করবে তা জানা নেই।
অষ্টাদশী তরুণীর চোখ-মুখ ফুলে আছে। চোখের পাতায় রাজ্যের ঘুম। পায়ের গোড়ালি ফুলে দ্বিগুণ প্রায়। হতাশা আর বিষণ্ণতা ওকে উদাস করেছে জীবনের আনন্দলগ্নেই। এত আলো দৃষ্টিজুড়ে! তবুও ফ্যাকাসে রঙ ওর জীবন ঘিরে।
রেমিজার দুটো কিডনিই নষ্ট। ডায়ালাইসিস চলছে চার মাস ধরে। তাতে কোনো রকমে কাজ করছে মাত্র। চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, কিডনি না বদলালে (ট্রান্সপ্লান্ট) শেষ রক্ষা হবে না।
তিন ভাই-বোনের মধ্যে রেমিজা বড়। গত বছর উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষায় পাস করে পটুয়াখালী সরকারি কলেজে হিসাব বিজ্ঞান বিভাগে ভর্তি হওয়ার কথা ছিল। সুযোগও পেয়েছিল। সর্বনাশা কিডনি রোগ সে স্বপ্ন এখন দুঃস্বপ্ন করে দিয়েছে।
বাবা জসিম উদ্দিন একটি মুদি দোকান চালাতেন পটুয়াখালীর তালতলী উপজেলা শহরে। মেয়ের অসুখে দোকানের ঝাপ পড়েছে প্রায় স্থায়ীভাবে। জমানো আয় থেকেই এতদিন চিকিৎসা করিয়েছেন মেয়ের। এখন দিশেহারা। তবুও হাল ছাড়েননি বাবা।
মেয়েকে বাঁচাতে সর্বহারা হতেও রাজি তিনি। স্ত্রী নার্গিস সাহস জুগিয়ে দিশা দিচ্ছেন মেয়েকে। যেটুকু জমি আছে তা বিক্রি করে প্রায় ১২ লাখ টাকা জমিয়েছেন। আরও ১০ লাখ টাকার দরকার বলে চিকিৎসকরা জানিয়েছেন। টিস্যু, রক্তের গ্রুপ মিলে গেলে বাবা অথবা মায়ের পক্ষ থেকে কিডনি দান করা হবে। টিস্যু পরীক্ষার জন্য আজ (বুধবার) ভোরে গিয়েছিলেন মিরপুর কিডনি ফাউন্ডেশনে। মেশিনে ত্রুটি থাকায় সে পরীক্ষা আজ আর হয়নি। ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব কিডনি ডিজিজেস অ্যান্ড ইউরোলজিতে ডায়ালাইসিস করে আজই ফিরবেন বাড়ি।
জসিম উদ্দিন বলেন, ‘আমার ফুলের মতো মেয়ে। অথচ দিন যাচ্ছে আর নীলাভ হচ্ছে। সবই তো শেষ করে দিলাম। চার মাস ধরে গোটা পরিবার ওকে নিয়ে ব্যস্ত। দশবার এসেছি এই ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব কিডনি ডিজিজেস অ্যান্ড ইউরোলজি হাসপাতালে। দু’বার মেয়েকে ভর্তি করিয়েছি এখানে। আসন না থাকায় এখন আর ভর্তি করেন না চিকিৎসকরা। ডায়ালাইসিস করেই বাড়ি চলে যাই।’
মেয়ের মুখের দিকে তাকিয়ে বলেন, ‘যে কোনো মূল্যে আমরা মেয়েকে বাঁচিয়ে রাখতে চাই। প্রয়োজনে আমরাই কিডনি দেব। জমি বিক্রি করে ১২ লাখ টাকা জমিয়েছি। ওকে নিয়ে ইন্ডিয়া যাব। টিস্যু পরীক্ষার জন্য এসেছিলাম এবার। হলো না। দ্রুত আমরা মেয়েকে সুস্থ করব ইনশাআল্লাহ।’
জসিম উদ্দিন জানান, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে অনুমতি নিতে হয় কিডনি ট্রান্সপ্লান্টের জন্য। মূলত জটিলতা এখন এখানেই। তবে কেউ সাহায্যের হাত বাড়ালে মেয়ের বেঁচে থাকার পথ আরেকটু দীর্ঘ হবে।
এএসএস/এসআর/এমএআর/পিআর