উনি এসএসসি পাস এমবিবিএস ডাক্তার
যুবকের নাম মো. মাহবুব আলম ভূঁইয়া। বয়স ২৪ বছর। বছর আটেক আগে নারায়ণগঞ্জের একটি স্কুল থেকে এসএসসি পাস করেন। এরপর একটি মেডিকেল অ্যাসিস্ট্যান্ট ট্রেনিং স্কুল (ম্যাটস) থেকে ডিপ্লোমা সার্টিফিকেট কোর্স করেন। অতঃপর বনে যান পুরোদস্তুর এমবিবিএস ডাক্তার।
নামের পাশে চিকিৎসক উপাধি ছাড়াও সিএমইউ অ্যান্ড সনোলজিস্ট ডিগ্রি জুড়ে দেন। এভাবেই তিনি নারায়ণগঞ্জের বিভিন্ন হাসপাতাল ও ক্লিনিকে এমবিবিএস চিকিৎসক পরিচয়ে রোগী দেখে আসছিলেন। তবে শেষ রক্ষা হয়নি।
মঙ্গলবার বিকেলে পিবিআই (পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন) ঢাকা মেট্রোর একটি বিশেষ দল নারায়ণগঞ্জের মদনপুরের একতা সুপার মার্কেটের তৃতীয় তলায় ‘মা হসপিটালস অ্যান্ড ডিজিটাল ডায়াগনস্টিক সেন্টারে’অভিযান চালিয়ে এই ভুয়া এমবিবিএস চিকিৎসককে আটক করে।
অভিযানের নেতৃত্ব প্রদানকারী পিবিআইয়ের বিশেষ পুলিশ সুপার মো. বশির আহমেদ বুধবার জাগো নিউজকে জানান, সম্প্রতি ওই ভুয়া চিকিৎসক সম্পর্কে তাদের কাছে কিছু অভিযোগ ও তথ্য-উপাত্ত আসে। তিনি জানান, বুধবার বিকেল ৩টায় তার নেতৃত্বে একটি টিম রোগী সেজে ওই হাসপাতালে যান। কথিত চিকিৎসক মাহবুব আলম ভূঁইয়া রোগীর শারীরিক চেকআপ করে ব্লাডপেশার এবং ওজন মেপে ব্যবস্থাপত্রে তিনটি পরীক্ষা করতে দেন এবং সিএমইউ ও সনোলজিস্ট হিসেবে নিজেই আলট্রাসনোগ্রাম করেন।
এ সময় তাকে চ্যালেঞ্জ করলে তিনি বিএমডিসির রেজিস্ট্রেশন সার্টিফিকেট দেখাতে পারেননি। জিজ্ঞাসাবাদের এক পর্যায়ে তারা জানতে পারেন তিনি দীর্ঘদিন যাবৎ ওই এলাকা এবং আশপাশের হাসপাতাল ও ক্লিনিকে চিকিৎসক পরিচয়ে রোগী দেখে আসছিলেন। এ সময় ওই হাসপাতালের ড্রয়ার থেকে চিকিৎসক পরিচয়ে প্রেসক্রিপশন প্যাড ও আলট্রাসনোগ্রাম, সিরাম ক্রিটেনাইন, ইউরিন ফর আর/ই ইত্যাদির আগাম স্বাক্ষর করা কাগজপত্র উদ্ধার করা হয়।
জিজ্ঞাসাবাদে পিবিআইকে এই ভুয়া চিকিৎসক জানিয়েছেন, তিনি নারায়ণগঞ্জ জেলার সোনারগাঁও থানার দড়িকান্দি গ্রামের আবদুল মতিন ভূঁইয়ার ছেলে। ২০০৯ সালে নারায়ণগঞ্জ জেলার সোনারগাঁও থানাধীন সোনারবাংলা উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এসএসসি পাস করেন তিনি।
তিনি জানান, মা হসপিটালস অ্যান্ড ডিজিটাল ডায়াগনস্টিক সেন্টারের মালিক রুহুল আমিন ও ম্যানেজার ওবায়েদ উল্লাহর লোভনীয় অফারে নিয়োগপত্র ছাড়াই এমবিবিএস চিকিৎসক হিসেবে জরুরি বিভাগে রোগী দেখে আসছেন। এর আগে তিনি সোনারগাঁও থানাধীন মোগরাপাড়া চৌরাস্তা মেডিকেয়ার ক্লিনিকে চিকিৎসক হিসেবে সাতমাস রোগী দেখে আসছিলেন।
জিজ্ঞাসাবাদে তিনি আরও জানান, নারায়ণগঞ্জ জেলার কাঁচপুর জেনারেল হাসপাতাল, সোনারগাঁও জেনারেল হাসপাতালসহ আরও বেশ কিছু হাসপাতাল, ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারের মালিকদের যোগসাজশে কিছু ভুয়া চিকিৎসক রোগীর সঙ্গে চিকিৎসার নামে প্রতারণা করে আসছেন।
পিবিআই জানিয়েছে, এই ভুয়া চিকিৎসকের বিরুদ্ধে পিবিআই ঢাকা মেট্রোর এসআই খোন্দকার মনিরুজ্জামান বাদী হয়ে মামলা করবেন বলে প্রক্রিয়া চলছে। এ ঘটনায় জড়িতদের গ্রেফতারের প্রক্রিয়া অব্যাহত আছে।
এমইউ/জেডএ/ওআর/পিআর