ভিডিও EN
  1. Home/
  2. স্বাস্থ্য

চিকিৎসকরাই রিং সরবরাহ বন্ধের পরামর্শদাতা!

প্রকাশিত: ০৪:৫৪ পিএম, ২০ এপ্রিল ২০১৭

মোটা অঙ্কের কমিশন হাতছাড়া হওয়ার আশঙ্কায় হার্টের রিং সরবরাহ বন্ধের পরামর্শ দিয়েছেন চিকিৎসকরা! স্বাস্থ্য অধিদফতরের একাধিক শীর্ষ কর্মকর্তা এবং বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশনের নেতাদের সঙ্গে কথা বলে এমন অভিযোগ পাওয়া গেছে।

যদি হার্টের তিনটি মেজর রক্তনালীর এক বা দুটিতে ৭০ শতাংশ বা তার বেশি ব্লক ধরা পড়ে তাহলে ওষুধের পাশাপাশি রিং (স্টেন্ট) স্থাপনের পরামর্শ দেন চিকিৎসকরা। যে চিকিৎসকরা সঠিক পরামর্শ দিয়ে রোগীর প্রাণ বাঁচাবেন তাদেরই পরামর্শে বুধবার জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউটসহ বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি হাসপাতালে রিং সরবরাহ বন্ধ রেখে অঘোষিত ধর্মঘট পালন করা হয়।

অভিযোগ উঠেছে, এক শ্রেণির অর্থলোভী হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ মোটা অঙ্কের কমিশন হাতছাড়া হওয়ার আশঙ্কায় রিং সরবরাহকারী বিভিন্ন কোম্পানির প্রতিনিধিদের ডেকে গোপন বৈঠক করে অঘোষিত ধর্মঘট পালনের পরামর্শ দেন।

বৃহস্পতিবার জাগো নিউজের সঙ্গে আলাপকালে স্বাস্থ্য অধিদফতরের একাধিক শীর্ষ কর্মকর্তা এবং বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশনের (বিএমএ) নেতাদের সঙ্গে আলাপকালে এমন তথ্য জানা গেছে। তবে এ বিষয়ে কেউ সরাসরি বক্তব্য দিতে রাজি হননি।

বুধবার আকস্মিকভাবে সরকারি হৃদরোগ ইনস্টিটিউটসহ বেশ কয়েকটি প্রতিষ্ঠানে স্টেন্ট (হার্ট রিং) সরবরাহ বন্ধ করে দেয় সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানগুলো। ফলে রোগীরা ভোগান্তিতে পড়েন। এ ঘটনায় সরকারের সুনাম ক্ষুণ্ন হয়েছে বলে ক্ষুব্দ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেন স্বাস্থ্য অধিদফতর ও বিএমএ সংশ্লিষ্টরা।

তারা বলছেন, রিংয়ের দর নিয়ে সরকারের সঙ্গে কথা না বলে কোম্পানিগুলোর অঘোষিত ধর্মঘটে যাওয়া মোটেই উচিত হয়নি।  সূত্রে জানা গেছে, সম্প্রতি ওষুধ প্রশাসন অধিদফতর থেকে রেজিস্ট্রেশনভুক্ত বিভিন্ন কোম্পানির সরবরাহ করা সকল প্রকার রিংয়ের মোড়কে ড্রাগ রেজিস্ট্রেশন (ডি আর নং) নম্বর, পণ্যের দাম, উৎপাদন ও মেয়াদোত্তীর্ণের তারিখ বাধ্যতামূলক উল্লেখ করতে হবে মর্মে চিঠি দেয়া হয়। অন্যথায় পণ্যটি অবৈধ বলে গণ্য হবে বলে চিঠিতে বলা হয়।

ওষুধ প্রশাসন অধিদফতরের মহাপরিচালক মেজর জেনারেল মোস্তাফিজুর রহমান মঙ্গলবার মহাখালীর কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে জানান, ইতোমধ্যে চারটি স্টেন্ট সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান স্বপ্রণোদিত হয়ে দুই ধরনের স্টেন্ট (বেয়ার মেটাল ও ড্রাগ ইলিওটিং) সর্বনিম্ন ২৫ হাজার ও ৫০ হাজার টাকা মূল্যে বিক্রির প্রস্তাবনা দেয়।

তিনি জানান, বর্তমানে দেশে ২১টি কোম্পানির ৪৭ প্রকারের হার্টের রিং সরবরাহের বৈধ অনুমোদন রয়েছে। সুলভ ও যুক্তিসঙ্গত মূল্য নির্ধারণে ১৭ সদস্যের বিশেষজ্ঞ কমিটি গঠন করা হয়েছে। আগামী দু’মাসের মধ্যে সবগুলো কোম্পানিকে বিশেষজ্ঞ কমিটির সদস্যদের মাধ্যমে মূল্য নির্ধারণ করতে হবে বলেও তিনি জানান।

এ খবর পত্রিকায় প্রকাশিত হওয়ার পর হার্টের রিং স্থাপন করেন এমন চিকিৎসকরা বিভিন্ন কোম্পানির প্রতিনিধিদের ডেকে অঘোষিত ধর্মঘটে যাওয়ার পরামর্শ দেন।

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে বাংলাদেশ মেডিকেল এসোসিয়েশন (বিএমএ) মহাসচিব ও স্বাস্থ্য অধিদফতরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (প্রশাসন)  ডা. এহতেশামুল হক চৌধুরী বৃহস্পতিবার রাতে জাগো নিউজকে বলেন, সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে দেশের বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি হাসপাতালে হার্টের রিংয়ের দামের তারতম্যের বিষয়টি খতিয়ে দেখতে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়কে চিঠি দেয়া হয়।

‘ওই চিঠির পরিপ্রেক্ষিতে মন্ত্রণালয় সম্প্রতি দেশের বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি হাসপাতালের মালিক, বিভিন্ন হার্টের রিং সরবাহকারী প্রতিষ্ঠানের মালিক-প্রতিনিধিদের ডেকে দামের তারতম্যের বিষয়টি তুলে ধরে যুক্তিসঙ্গত মূল্যে স্টেন্ট বিক্রি করতে হবে বলে সিদ্ধান্ত দেন।’

কোনো কোনো হাসপাতালে হার্টের রিং ৭০ থেকে ৮০ হাজার টাকা আবার কোথাও দেড় থেকে দুই লাখ টাকা নেয়া হয়। রিংয়ের গ্রহণযোগ্য মূল্য নির্ধারণের লক্ষ্যে মন্ত্রণালয় ১৭ সদস্যের বিশেষজ্ঞ কমিটি গঠন করে। একই সঙ্গে মন্ত্রণালয় থেকে বিভিন্ন কোম্পানির আমদানি করা স্টেন্টের দাম জানাতে বলা হয়। এসব বিষয় নিয়ে বুধবার কোম্পানিগুলোর সঙ্গে বৈঠকে বসার কথাও ছিল।

স্বাস্থ্য অধিদফতরের শীর্ষ এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করে বলেন, আকস্মিকভাবে ২-৩টি কোম্পানি হৃদরোগ ইনস্টিটিউটে বুধবার স্টেন্ট সরবরাহ বন্ধ রাখে। এতে সাধারণ রোগীরা চরম দুর্ভোগে পড়েন। এ ধরনের কর্মকাণ্ডে সরকারের ভাবমূর্তিও চরমভাবে ক্ষুণ্ন হয়েছে। বিষয়টি অত্যন্ত গুরুত্ব সহকারে দেখা হচ্ছে।

চিকিৎসকদের পরামর্শে কোম্পানিগুলো স্টেন্ট সরবরাহ বন্ধ রেখেছে, এমন অভিযোগ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে বিএমএ নেতা ও স্বাস্থ্য অধিদফতরের ওই শীর্ষ কর্মকর্তা বলেন, এ ব্যাপারে সুনির্দিষ্ট কোনো তথ্য তার কাছে নেই। তবে সবার এমনই ধারণা।

স্বাস্থ্য অধিদফতরের আরেক কর্মকর্তা বলেন, হৃদরোগ হাসপাতালে অঘোষিত ধর্মঘটের নেপথ্যে হাসপাতালের চিকিৎসকরা কিনা, তা খতিয়ে দেখে কার্যকর ব্যবস্থা নেয়া হবে।

এমইউ/এমএআর/ওআর/বিএ

আরও পড়ুন