একটু সচেতন হলে কিডনি বিকল প্রতিরোধ সম্ভব
বাংলাদেশে প্রায় দুই কোটি মানুষ কোনো না কোনো কিডনি রোগে আক্রান্ত। এছাড়া কিডনি বিকলের চিকিৎসা অত্যন্ত ব্যয়বহুল বিধায় দেশের শতকরা ১০ জন রোগী চিকিৎসা চালিয়ে যেতে পারেন না। অর্থাভাবে অকালে প্রাণ হারান সিংহভাগ রোগী। তবে একটু সচেতন হলে ৫০ থেকে ৬০ ভাগ রোগীর কিডনি বিকল প্রতিরোধ করা সম্ভব।
আগামী ৯ মার্চ বিশ্ব কিডনি দিবস। দিবসের প্রাক্কালে আজ (শুক্রবার) সকালে জাতীয় প্রেস ক্লাবে স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা ‘কিডনি অ্যাওয়ারনেস মনিটরিং অ্যান্ড প্রিভেশন সোসাইটি’ (ক্যাম্পস)-র উদ্যোগে ‘স্থুলতা কিডনি রোগের ঝুঁকি বাড়ায় : সুস্থ কিডনির জন্য সুস্থ জীবন ধারা’ শীর্ষক এ গোলটেবিল বৈঠকে কিডনি বিশেষজ্ঞরা এসব কথা বলেন।
বক্তারা বলেন, শুধু লাইফ স্টাইল পরিবর্তন করে ৬৮ শতাংশ মৃত্যু ঝুঁকি কমানো সম্ভব। এসব অভ্যাসগুলো হলো- প্রধানত প্রতিদিন কমপক্ষে ৩০ মিনিট হাঁটা, পর্যাপ্ত ফলমূল ও শাকসবজি খাওয়া, ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখা ও ধুমপান মুক্ত থাকা।
কিডনি ফাউন্ডেশনের চেয়াম্যান অধ্যাপক ডা. হারুন অর রশিদ বলেন, দেশে ব্যাপক সংখ্যক কিডনি রোগীর তুলনায় ডায়ালাইসিস সেন্টার খুবই কম মাত্র ৯৬টি এবং ১৮ হাজার রোগী এসব সেন্টারে সপ্তাহে দুইবার করে ডায়ালাইসিস পায়। বেসরকারি সেন্টারগুলোতে ৩৫০০ থেকে ৫০০০ টাকা পর্যন্ত পর্যন্ত ডায়ালাইসিস মূল্য রাখা হয়।
তিনি আরও বলেন, দক্ষিণ এশিয়াতে মোট কিডনি রোগীর তুলনায় মাত্র ১৫ শতাংশ রোগী ডায়ালাইসিসের সুযোগ পায় বাকি বিশাল সংখ্যক রোগী অর্থাভাবে ডায়ালাইসিস নিতে পারে না। তাই বাংলাদেশে ডায়ালাইসিস খরচ কমাতে সরকারি-বেসরকারিভাবে বাস্তবিক উদ্যোগ নিতে হবে।
বক্তারা অভিমত ব্যক্ত করেন, অপরিকল্পিত নগরায়নের কারণে হাঁটার পরিবেশ নেই। ফুটপাথ হকারদের দখলে, অধিকাংশ স্কুলে বাচ্চাদের খেলার মাঠ নেই। ফলে স্কুল কলেজের ছেলে-মেয়েরা ফেইসবুক, ভিডিও গেমস ও টিভি দেখার প্রতি আকৃষ্ট হচ্ছেন। আর এসব কারণে অলস নিস্ক্রিয় জীবন যাপনে অভ্যস্থ হয়ে পড়ছে তারা।
ল্যাবএইড স্পেশালাইজড হাসপাতালের কিডনি বিভাগের প্রধান ও ক্যাম্পাসের প্রতিষ্ঠাতা ও সভাপতি বিশিষ্ট কিডনি রোগ বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ডা. এম এ সামাদ গোল টেবিল বৈঠকে মূল বক্তব্য উপস্থাপন করেন। তিনি বলেন, বিশ্ব কিডনি দিবসের মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে কিডনি রোগের ব্যাপকতা ও ভয়াবহতা সম্পর্কে বিশ্বব্যাপী মানুষকে সচেতন করা ও কিডনি বিকল প্রতিরোধে প্রাথমিক অবস্থায় কিডনি রোগ শনাক্ত করে চিকিৎসা করা ও সুস্থ জীবন ধারায় সবাইকে অভ্যস্থ করা।
অধ্যাপক ডা. এম এ সামাদ আরও বলেন, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সমীক্ষা মতে প্রথম ১০ মৃত্যু ঝুঁকির মধ্যে স্থুলতা একটি। এক সময় ছিল বিশ্ব জুড়ে মৃত্যুর প্রধান কারণ ছিল সংক্রামক ব্যাধি। এখন বাংলাদেশে ৬৫ ভাগের বেশি ক্ষেত্রে মৃত্যুর জন্য দায়ী অসংক্রমক ব্যাধি। আর স্থুলতা জম্ম দেয় জীবন ধ্বংসের এসব অসংখ্য ব্যাধির।
এর মধ্যে প্রধান রোগগুলো হলো- উচ্চ রক্তচাপ, ডায়াবেটিস, হৃদরোগ, হাড়জোড়া ক্ষয় ও ব্যাথা, ঘুমের মধ্যে শ্বাস বন্ধ হওয়া ও নাক ডাকা, মেটাবোলিক সিড্রোম, মানসিক অবসাদ ও নিরান্দভাব, কোলন ও মেয়েদের ব্রেস্ট ক্যান্সার এর মত মারাত্মক ব্যাধি।
গোল টেবিল বৈঠকে বিভিন্ন শ্রেণি পেশার পক্ষ থেকে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক, শিক্ষক, সাংবাদিক, অর্থনীতিবিদ, ব্যাংকার, সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব, খেলোয়ারসহ অনেকেই অংশগ্রহণ করেন। অন্যান্য আলোচকদের মধ্যে অধ্যাপক ডা. ম. মহিবুর রহমান, মহাসচিব, বাংলাদেশ রেনাল অ্যাসোসিয়েশন; অধ্যাপক ডা. আব্দুল হালিম, প্রিন্সিপাল, কুমুদিনী ওমেন্স মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল; কর্ণেল মীর মোতাহার হোসেন, উপদেষ্টা এটিএন বাংলা; রেজওয়ানা হাসান, নির্বাহী পরিচালক, বেলা; শাহীন রেজা নূর, নির্বাহী সম্পাদক, দৈনিক ইত্তেফাক; গাজী আশরাফ হোসেন লিপু, সাবেক অধিনায়ক; বাংলাদেশ ক্রিকেট টিম, জেএল ভৌমিক; সাবেক ডিস্টিক গভর্নর, লায়ন্স জেলা প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
এমইউ/আরএস/পিআর